আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ, ২০২৩ আসন্ন। বাকি আছে আর মাত্র ১ সপ্তাহ। এবারের আয়োজক হিসেবে থাকছে দক্ষিণ এশিয়া’র দেশ ভারত। এই আসরের পর্দা উঠবে আগামী ৫ অক্টোবর, পর্দা নামবে ১৯ নভেম্বর। ইতোমধ্যে প্রায় সব দল ভারতে পৌঁছে গেছে। ভেন্যুগুলো সেরে নিচ্ছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বাংলাদেশের দর্শক-সমর্থক-দের জন্য বিশ্বকাপের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির লক্ষ্যে আমাদের এই আয়োজন।
কী ধরনের ফরম্যাট
২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ যে ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হয়েছে, এবারও সেরকমই। ১০ দল প্রত্যেকে নিজেদের সাথে একটি করে ম্যাচ খেলবে। সেখান থেকে শীর্ষ ৪ দল সেমি-ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। রাউন্ড-রবিন পদ্ধতি হিসেবে এই ধরনের ফরম্যাটের পরিচিত রয়েছে।
শীর্ষ চার দলের মধ্যে শীর্ষ দলটি চার নম্বর দলের বিপক্ষে সেমিফাইনালে লড়বে। এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় দলটি লড়বে আরেক সেমিফাইনাল ম্যাচে। সেমিফাইনালে বিজয়ী দুই দল আগামী ১৯ নভেম্বর ফাইনালে মুখোমুখি হবে।
সেমিফাইনালে যেতে যত হিসাব–নিকাশ
২০১৯ বিশ্বকাপের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, ৯ টি ম্যাচের মধ্যে ৭ টি ম্যাচ জিতলে সেমিফাইনাল নিশ্চিত থাকবে। গত বিশ্বকাপে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া দুই দল’ই ৭ টি করে ম্যাচ জিতে সেমিতে যায়। এই দুই দলই সেবার শীর্ষ দুই’য়ে ছিল।
আবহাওয়ার কারণে কোন অসুবিধা না হলে, ৬ টি ম্যাচ জিতেও সেমিতে যাওয়া সম্ভব হয়ে থাকে। যদি দলগুলি পয়েন্টে সমান হয়ে যায়, তবে মোট জয় বিবেচিত হবে সেমিতে যাওয়ার ক্ষেত্রে।
দলগুলির মধ্যে পার্থক্য তৈরিতে নেট রান-রেট ভূমিকা রাখবে। যদি ২০১৯ বিশ্বকাপের উদাহরণ টানা যায়, নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তান; দুই দলের পয়েন্ট (১১) সমান ছিল, জয়ের (৫) সংখ্যাও সমান ছিল। সেক্ষেত্রে নেট রান-রেট এর হিসেবে বাদ পড়ে যায় পাকিস্তান, সেমি খেলে নিউজিল্যান্ড।
পুরষ্কার–সমূহ
সর্বমোট ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কার রয়েছে এবারের বিশ্বকাপে।
টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন দল পাবে ৪ মিলিয়ন ডলার, রানার-আপ দল পাবে ২ মিলিয়ন ডলার। দলগুলি নিজেদের গ্রুপ পর্বের প্রতি জয়ী ম্যাচের জয় পাবে ৪০ হাজার ডলার। এছাড়াও গ্রুপ পর্বে অংশ নেওয়া প্রতিটি দল ১ লক্ষ মার্কিন ডলার করে পাচ্ছে।
ভেন্যু–সমূহ
মোট ১০ টি ভেন্যু নির্ধারিত আছে এবারের বিশ্বকাপের জন্য।
নরেদ্র মোদি স্টেডিয়াম, আহমেদাবাদ: বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম হিসেবে পরিচিত এটি। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচ, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ এবং ফাইনাল ম্যাচ এখানে অনুষ্ঠিত হবে। প্রায় ১ লক্ষ ৩২ হাজার ধারণক্ষমতা রয়েছে এই স্টেডিয়ামের।
এম. চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম, বেঙ্গালুরু: ২০ অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে এখানে ক্রিকেট বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলার জন্য। অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ রয়েছে এই স্টেডিয়ামে। বাউন্ডারি সীমানা ৬৫ মিটারের মতো হওয়ায়, বড় স্কোর আশা করা যায় এখান থেকে। এই স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার।
এম.এ চিদাম্বরম স্টেডিয়াম, চেন্নাই: মোট ৫ টি ম্যাচ এখানে অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে স্বাগতিক ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটিও রয়েছে। ভারত মহাসাগরের কাছাকাছি হওয়ায় অন্যান্য মাঠের চেয়ে অনেক বেশি আর্দ্র হবে এখানকার আবহাওয়া।
অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম, দিল্লী: ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের সাথে অনেক বেশি সম্পর্কিত এই স্টেডিয়াম। বাংলাদেশে শেষ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এখানে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। হয়ত কোন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দুই দল মুখোমুখি হবে অরুণ জেটলি’তে।
হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম, ধর্মশালা: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনের মধ্যে দিয়ে এই স্টেডিয়ামের যাত্রা শুরু হয়েছে। হিমালয় পর্বত-মালার দূরত্বে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামে বড় রান হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান তাঁদের প্রথম ম্যাচে, ৭ অক্টোবর মুখোমুখি হবে এই মাঠে।
ইডেন গার্ডেন্স, কোলকাতা: নরেদ্র মোদি স্টেডিয়াম তৈরির আগে ইডেন গার্ডেন্স ছিল ভারতের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম। যার ধারণক্ষমতা ৬৮ হাজার। ২৮ অক্টোবরের আগে এখানে কোন ম্যাচ নেই। মোট ৫ টি ম্যাচ আয়োজন হবে এখানে, একটি সেমিফাইনাল-সহ। বেশ ভাল পিচ ও বাতাস থাকে ইডেনে, কারণ পাশেই বয়ে চলেছে হুগলি নদী।
ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম, মুম্বাই: ভারতের ‘ক্রিকেট রাজধানী’ হিসেবে অনেকটা পরিচিত মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম। প্রায় ৪৫ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতা রয়েছে এই স্টেডিয়ামের। এখানে সাধারণত লাল মাটির পিচ হয়ে থাকে, যা একেবারেই স্বতন্ত্র। একটি সেমিফাইনাল ম্যাচ এই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে, ১৫ নভেম্বর।
অটল বিহারী বাজপেয়ী স্টেডিয়াম, লক্ষ্নৌ: নতুন একটি মাঠ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পরিচিত নয় এই স্টেডিয়ামে। তবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়া লিগের (আইপিএল) ম্যাচ হয়ে থাকে। অস্ট্রেলিয়া বনাম সাউথ আফ্রিকা ম্যাচ, ১২ অক্টোবর, এই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। দুই দলেই আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি লক্ষ্নৌ সুপার জায়ান্টস- এর খেলোয়াড় রয়েছে।
মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম, পুনে: এক দশকের উপরে থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ম্যাচ আয়োজন করে এই মাঠ। প্রায় ৪৩ হাজার এর ধারণ ক্ষমতা। বিশ্বকাপে ৫ টি ম্যাচ আয়োজন করবে পুনে’র এই স্টেডিয়ামটি।
রাজীব গান্ধী স্টেডিয়াম ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম, হায়দ্রাবাদ: ৪০ হাজার সমর্থক বসতে পারবে এই মাঠের গ্যালারিতে। টুর্নামেন্ট শুরুর প্রথম ৭ দিনে ৩ টি ম্যাচ আয়োজন করবে এই স্টেডিয়াম। পাকিস্তান বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচ, পাকিস্তান বনাম নিউজিল্যান্ড ম্যাচ; এখানেই অনুষ্ঠিত হবে।
রিজার্ভ ডে
বিশ্বকাপ, ২০২৩ এর দুইটি সেমিফাইনাল ম্যাচেই রিজার্ভ ডে রাখা হয়েছে। এছাড়াও টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচের জন্য নির্ধারিত আছে রিজার্ভ ডে।
বিশ্বকাপের অফিশিয়াল ‘থিম সং’ ইতোমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। টিকিট প্রকাশ করা হয়েছে আরও আগে। সময়সূচি তো রয়েছেই। দলগুলো ১৫ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা সম্পন্ন করেছে। উন্মোচন হয়েছে দলগুলোর বিশ্বকাপ জার্সি।
সকল মঞ্চই আসলে প্রস্তুত। এখন মাঠে খেলা গড়ানোর পালা। আশা করা যাচ্ছে, উপমহাদেশ থেকে প্রচুর দর্শক ভারতে থাকবেন, মাঠে তাঁদের দেখা যাবে। সবমিলিয়ে জমকালো এক বিশ্বকাপ আয়োজন হবে, এই তো সকলের প্রত্যাশা।