সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বান্ধবী এডভোকেট তৌফিকা করিম। তাকে ঘিরে নানা মুখরোচক গল্প আছে আইন অঙ্গনে। আনিসুল হকের ছোঁয়ায় তৌফিকা করিম ছিলেন বিচারাঙ্গনের অঘোষিত ‘নিয়ন্ত্রক’। ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও লুটপাট করে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এই নারী। জানা যায়, বেশিরভাগ টাকা তিনি পাচার করেছেন কানাডায়। এখানে তার ছেলে ও তার বোন (টরন্টোর বাংলাদেশ কমিউনিটির খুবই পরিচিত) থাকে। স্ত্রী মারা যাওয়ার পরপরই তৌফিকার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে আনিসুল হকের। যদিও তৌফিকার স্বামী ও সন্তান রয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, মামলার রায় পরিবর্তন, আসামির জামিন, নিয়োগ প্রদানসহ সব ক্ষেত্রে প্রভাব খাটাতেন তৌফিকা করিম। জামিন করিয়েছেন অনেক চাঞ্চল্যকর মামলার দুর্ধর্ষ আসামিদের। সূত্র জানায়, আইন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজি আরিফুল জামান ও মন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা দিপংকর রায়কে দিয়ে আইন মন্ত্রণালয় চালাতেন তৌফিকা করিম। বিচার ব্যবস্থাকে জিম্মি করে আনিসুল হক ও তৌফিকা করিম হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় করেছেন।
আরও পড়ুন :: টরন্টো, লন্ডন ও দুবাইতে মজুমদার পরিবারের হাজার কোটি টাকার সম্পদ!
জানা যায়, আলোচিত কয়েকটি মামলার রায় পরিবর্তন করেছিলেন আনিসুল ও তৌফিকা জুটি। এর মধ্যে রয়েছে, ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ বনানীর রেইন ট্রিতে সংঘটিত ধর্ষণ মামলার রায়। এ মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার হোসেনের ছেলে সাফাত হোসেন। অর্থের বিনিময়ে নাটকীয়ভাবে পাল্টে যায় এ মামলার রায়।
গুলশানের চাঞ্চল্যকর মুনিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় বিপুল অর্থের বিনিময়ে এ মামলা থেকে অব্যাহতি পান বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরসহ আটজন।
ঢাকার বোট ক্লাবের ঘটনায় নায়িকা পরীমণির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। মন্ত্রীর পক্ষে তৌফিকা করিম ২ কোটি টাকা মূল্যের ডলার ও ইউরো বুঝে নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটদের জামিন দিতে বাধ্য করেন।
ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির দুর্নীতির মামলায় চিশতি পরিবারকে বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে জামিনের ব্যবস্থা করানো হয়।
আরও পড়ুন :: কানাডার শীর্ষ ইমিগ্রেশন ধান্দাবাজ মাসুম চৌধুরী!
নারায়ণগঞ্জের একটি ফুড কোম্পানির কারখানায় ৫১ জন লোক পুড়ে মারা যাওয়ার মামলায় আসামীদের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে জামিন দেয়া হয়।
এভাবে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার বান্ধবী তৌফিকা করিমকে দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ নিয়ে বড় বড় মামলা প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন।
তৌফিকা করিম আনিসুল হকের মালিকানাধীন সিটিজেন চার্টার ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং দেশ টিভির নির্বাহী চেয়ারম্যানের পদ বাগিয়ে নেন। দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরেক লুটেরা আরিফ হাসানের বিরুদ্ধে দুদকে অর্থপাচারের মামলা রয়েছে। তৌফিকা করিম দুদককে প্রভাবিত করে আরিফ হাসানকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন।
ক্ষমতার পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেপ্তার হয়েছেন আনিসুল হক। আর তৌফিকা করিম চলে গেছেন আত্মগোপনে। গুঞ্জন রয়েছে এই নারী দেশ ছেড়ে কানাডায় চলে এসেছেন।
