অটোয়া, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫: মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস উপলক্ষে কানাডায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে এক অনন্য আন্তর্জাতিক আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্বের ভাষা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যকে তুলে ধরতে এবং বহুভাষিকতার মাধ্যমে শান্তি ও সংহতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কানাডার রাজধানী অটোয়ায় এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও কূটনৈতিক সম্প্রদায়ের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাহিদা সোবহান ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ভাষা আন্দোলন শুধু বাংলাদেশের নয়, এটি সারা বিশ্বের জন্য ভাষা ও সাংস্কৃতিক অধিকারের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং বহুভাষিকতার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
একুশের চেতনায় দিনব্যাপী কর্মসূচি
বাংলাদেশ হাউসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর বাংলাদেশ হাইকমিশনে ভাষা শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়, যেখানে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও অংশ নেন। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন কর্তৃক প্রেরিত বাণী পাঠ করা হয়, যেখানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব ও ভাষা আন্দোলনের বিশ্বব্যাপী প্রভাব তুলে ধরা হয়।
বিশেষ প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা
এই উপলক্ষে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়:
১. দ্য ইকোনমিস্টের “২০২৪ সালের বছরের সেরা দেশ” সংক্রান্ত তথ্যচিত্র
২. “জুলাই অনির্বাণ”, যেখানে ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক ঘটনাবলির চিত্র তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে হাইকমিশনার নাহিদা সোবহান সভাপতিত্ব করেন। কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও তরুণ প্রতিনিধিরা ভাষার ভূমিকা, মাতৃভাষার গুরুত্ব ও বহুভাষিক সমাজ গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।
বহু সংস্কৃতির সম্মিলন
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, নেপাল এবং থাইল্যান্ডের শিল্পীদের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে একুশের চেতনা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। উপস্থিত কূটনীতিক, অতিথি ও দর্শকরা বাংলাদেশ হাইকমিশনের এই ব্যতিক্রমী আয়োজনের প্রশংসা করেন এবং একে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের এক অনন্য মেলবন্ধন হিসেবে অভিহিত করেন।
একুশের চেতনার বিশ্বায়ন
এই আয়োজন বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্বকে বৈশ্বিক পরিসরে তুলে ধরেছে। এটি শুধু জাতীয় পর্যায়েই নয়, বরং বিশ্বব্যাপী ভাষা সংরক্ষণ, বহুভাষিকতা ও সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির গুরুত্বকে আরও সুদৃঢ় করেছে। -প্রেস বিজ্ঞপ্তি