পাবনায় স্বস্তি মিলেছে কাঁচামরিচ ও সবজির বাজারে। সরবরাহ বাড়ায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম আড়াইগুণ কমে প্রতি কেজি বাজারদর দাঁড়িয়েছে ১০০ টাকার মধ্যে। শীতকালীন অন্যান্য সবজি প্রতি কেজিতে দাম কমেছে ১০-১৫ টাকা। এতে কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। তবে পেঁয়াজের অতিরিক্ত দামে অসন্তোষ ক্রেতাদের।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সকালে পাবনার বড় বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
বিজ্ঞাপন
বিক্রেতারা জানান, মাঝে কিছু সময় কাঁচামরিচ ও সবজির বাজার ব্যাপক অস্থিতিশীল ছিল। তবে এখন কাঁচা বাজারে অনেকটা স্বস্তি হয়েছে। চাষিদের মরিচ ব্যাপক হারে বাজারে আসছে। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় চাহিদা মিটছে। এর ফলে ৩৫০ টাকার মরিচ এখন ১০০ টাকায় নেমেছে। কাঁচামরিচের বাজার ছিল ৮০ টাকা কেজি। আজ সরবরাহ একটু কম থাকায় ১০০ থেকে ১১০ টাকা। সবজির দামও কমেছে। পাবনায় সবজির সবচেয়ে বড় যোগানদাতা ঈশ্বরদী উপজেলা।
দফায় দফায় অতিবৃষ্টির ফলে সেখানকার সবজিতে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। সবজির দাম আরেকটু কম হতো। তবে বছরের শেষের দিকে কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ না থাকায় একটু বেশি। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১৩৫-১৪০ টাকা। আমদানি পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা। গত কয়েকদিন ১৫০-১৬০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে। শীতকালীন সবজি ফুলকপি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়, শিম ১২০-১৩০ টাকা, বেগুন ৫০-৬০ টাকা ও বরবটি ৬০-৭০ টাকায়।
এছাড়া পটল ৩৫-৪৫ টাকা, ঝিঙে ৩৫-৪০ টাকা, পেঁপে ২৮-৩০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৩৫-৪০ টাকা, লাউ ৩৫-৪০ টাকা, কচুমুখি ৭৫ টাকা ও আলু ১২ -১৩০ টাকা প্রতি কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।
মরিচ ও সবজির দামে কিছুটা স্বস্তি থাকলেও পেঁয়াজ ও মাছ মাংসে হাত দেবার অবস্থা নেই বলছেন ক্রেতারা। ঘুম থেকে উঠে বড় বাজারে বাজার করতে এসেছেন আলিফ রহমান। পেশায় তিনি বেসরকারি চাকরিজীবী, স্কুল পড়ুয়া দুই মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে সংসার তার।
তিনি বলেন, বাজারে কি অবস্থা সেটা সবাই জানেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না দীর্ঘদিন একই বেতনে চাকরি করা আমাদের মতো বেসরকারি চাকরিজীবীদের সংসারের কথা। কাঁচামরিচ সাড়ে তিনশো টাকায় উঠেছিল। দুই মেয়েকে লেখাপড়া করানো, বাসাভাড়া, বিদ্যুৎ ও গ্যাসবিলসহ সব খরচ মিটিয়ে ওই দামে কাঁচামরিচ খাওয়া বিলাসিতা ছিল। এজন্য কাঁচামরিচ খাওয়াই বন্ধ করেছিলাম। কাঁচাবাজার করলেও কাঁচামরিচের দাম শোনাই বন্ধ করেছিলাম। কিন্তু পরে দেখলাম দাম ব্যাপক কমেছে। এখন আবার কিনে খাচ্ছি।
বাজার করতে আসা শ্রাবণী ইসলাম বলেন, মরিচের দাম বেশ কমেছে। সবজির দামও কিছুটা কমেছে, যদিও এটি বেশি। কিন্তু এখন আবার পেঁয়াজের দাম বেশি। মোট পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় অংশ পাবনায় হয়। অথচ আমাদের ১৫০-১৬০ টাকায় পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। ডিম-মরিচ নিয়ে খেলা শেষ হলো, এখন নেমেছে পেঁয়াজের মাঠে। দেশের বাজারে ব্যবসায়ীদের খেলা শেষ হয় না।
আরেক ক্রেতা আলম খন্দকার বলেন, আলু, মিষ্টিকুমড়া ও ঝিঙে এক কেজি করে এবং ২টি পেঁপে নিয়েছি। বাসা থেকে বলে দিয়েছে এক কেজি পেঁয়াজ আনতে। কিন্তু মাসের শেষ, হাতে টাকা কম। তাই আধা কেজি পেঁয়াজ নিচ্ছি। অন্যান্যগুলোও তো কিনতে হবে। এভাবেই কোনোরকম টেনেটুনে চলতে হচ্ছে।
এব্যাপারে বিক্রেতা বাবু বলেন, স্থানীয় চাষিদের মরিচ আপাতত বাজার সামলাচ্ছে। আমদানি মরিচ আসা এক সপ্তাহেরও বেশি সময় আগে থেকেই বন্ধ। বাজারে চাষিদের মরিচ আনার ওপর দাম নির্ভর করে। যেমন গতকাল বেশি মরিচ আসায় ৮০ টাকা ছিল, আজ একটু কম। এ জন্য ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি করছি। আমরা যেমন কিনি তেমন বেচি। কম দামে পেলে আমাদের জন্যও ভালো। বিক্রি বেশি হয়।
আরেক ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন জানান, কৃষকের ঘরে এখন পেঁয়াজ নেই, তাই পেঁয়াজের দাম একটু বেশি। দিন পঞ্চাশেকের মধ্যে আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু করবে, তখন দাম কমে আসবে। এছাড়া কাঁচাবাজারে এখন তেমন অস্থিরতা নেই।