দিল্লিতে গত ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা কিছু শীর্ষ নেতাকে বৈঠকে ডাকেন। বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কোথায় বৈঠক হয়েছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি। একই সাথে কলকাতার একউপনগরীর একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে আওয়ামী লীগের ‘পার্টি অফিস’ খোলা হয়েছে। ভারতে থাকা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলির শীর্ষ এবং মধ্যস্তরের নেতারা বিভিন্ন সময়ে দলীয় কাজে এখানে উপস্থিত হোন।
শুক্রবার ৮ আগস্ট বিবিসি বাংলার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে শেখ হাসিনার বৈঠক এবং আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসের খোলার ব্যাপারে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩১ জুলাই এর বৈঠক ছাড়া বাকি সব দলীয় কর্মকাণ্ড চলে ভার্চুয়াল মাধ্যমে-হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম গ্রুপ, লাইভ অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে। মাঝে মধ্যে শেখ হাসিনা নিজেও এতে যুক্ত হোন। আলোচনায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের করণীয় নিয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে পার্টি অফিসের সম্পর্কে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যারা ভারতে রয়েছেন, তারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক ছোট ধরনের বৈঠক বা দলীয় দপ্তরের কাজকর্ম চালাতেন নিজেদের বাসাবাড়িতেই। তবে বড় বৈঠকের আয়োজনে রেস্তোরা বা হল ভাড়া করেতেন।
আওয়ামী লীগের নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী দলীয় কার্যক্রম এবং বিভিন্ন বৈঠকের জন্য নির্দিষ্ট একটি ‘পার্টি অফিস’এর দরকার ছিল।
কীরকম সেই ‘পার্টি অফিস’?
বাণিজ্যিক পরিসরটির পেছনের দিকের ভবনটির আট তলায় লিফট দিয়ে উঠে বাঁদিকে গেলেই সারিবদ্ধ বাণিজ্যিক সংস্থার দপ্তর। করিডোরের দুদিকে হাল্কা বাদামী রঙের একের পর এক দরজা। তার মধ্যের একটিতে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস। শুধু বাইরে কেন, ৫০০ বা ৬০০ স্কয়ার ফুটের ঘরটিতে উঁকি মারলেও কেউ বুঝতে পারবেন না এই ঘরটির সঙ্গে কোনোভাবে আওয়ামী লীগ জড়িত আছে। কোনো সাইন বোর্ড, শেখ হাসিনা অথবা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের কোনো ছবি নেই ঘরটির বাইরে বা ভেতরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধু বা নেত্রীর কোনো ছবি, সাইনবোর্ড কোনো কিছুই আমরা রাখিনি খুবই সচেতনভাবে। আমরা চাইনি যে এই ঘরটার পরিচিতি প্রকাশ করতে। এমনকি একটা দলীয় দপ্তরে যেসব ফাইল ইত্যাদি থাকে, সেসবও এখানে রাখা হয় না। নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ, বৈঠক ইত্যাদির জন্য একটা ঘর দরকার ছিল, এখন এটি পাওয়া গেছে। এটাকে আমরা পার্টি অফিসই বলি।
তিনি আরও জানান, ৩০-৩৫ জনের বৈঠক এই দপ্তরে হয়ে যায়, কিন্তু একটু চাপাচাপি করে বসতে হয়। ছোটখাটো বৈঠক বিভিন্ন নেতাদের বাসাবাড়িতে এখনও হয়। তবে বড় বৈঠকগুলি, যেখানে শ-দুয়েক নেতা কর্মী হাজির হওয়ার কথা, সেরকম বৈঠকের জন্য কোনো হল বা কোনো রেস্তোরার একটি অংশ ভাড়া নিয়ে নেওয়া হয়।
গত এক বছরের কিছুটা কম সময় ধরে আওয়ামী লীগ কার্যত ভারত থেকেই পরিচালিত হচ্ছে। দলের নেত্রী শেখ হাসিনা থাকেন দিল্লির কাছে কোথাও, অন্য নেতারা কলকাতার আশেপাশে। তবে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেইন বলেন, ‘এই ধারণাটা ঠিক নয় যে ভারত থেকে দল চলছে। বেশিরভাগ নেতা এখনও বাংলাদেশেই আছেন।’
৩১ জুলাই দিল্লিতে শেখ হাসিনা কিছু শীর্ষ নেতাকে বৈঠকে ডাকেন। বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কোথায় বৈঠক হয়েছে, সে ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি ওই নেতারা। তবে নেত্রীর সঙ্গে শীর্ষ নেতাদের সরাসরি দেখা হয়নি বলেও জানান তারা।
সাবেক এমপি পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির কারণে আমরা ভার্চুয়ালি কর্মীদের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারছি, মতামত নিচ্ছি, নির্দেশনা দিচ্ছি। তরুণ প্রজন্ম বেশি আগ্রহী, তাই তাদের কাছে পৌঁছাতে চাই।’
ভারতে অবস্থানরত নেতারা শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেই দলের রাজনৈতিক অবস্থান নির্ধারণ করেন।
ওবায়দুল কাদের বিবিসিকে বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে সরকার একবছরে সবদিক থেকে ব্যর্থ। অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে, বিচারব্যবস্থা প্রহসনে পরিণত হয়েছে। তারা হাসিনা আর ভারতের ওপর দোষ চাপাতে ব্যস্ত। তাদের মুখের কথায় এখন কেউ বিভ্রান্ত হচ্ছে না। মানুষ বলছে, হাসিনার সময়েই ভালো ছিলাম।