এ বছর পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে যে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, তা আমাদের নতুন চিন্তার খোরাক যুগিয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞান যে শুধু মুখস্থ ও তথ্য সংগ্রহের ভেতর সীমাবদ্ধ নয়, এই নোবেল পুরস্কারগুলো সে ধারণা প্রতিষ্ঠিত করেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি এর প্রতিফলন দেখতে চাই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায়।
বছরের পর বছর ধরে আমরা না বুঝে মুখস্থ করার ওপর চাপ দিয়ে এসেছি, কিন্তু বিজ্ঞানের এক শাখার ধারণার সঙ্গে অন্য শাখাগুলোর কীরকম যোগসূত্র থাকতে পারে, তা নিয়ে নতুন প্রজন্মকে চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করিনি। এ ছাড়া গুণী শিক্ষকের সংখ্যাও নিতান্ত অপ্রতুল। এ অবস্থায় শিক্ষার প্রসার ও উন্নয়নে বাংলাদেশের জন্য এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কীভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে, তা নিয়ে আমরা চিন্তা করতে পারি।
এ প্রসঙ্গে বলি, যাঁরা এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরির পেছনে কাজ করেছেন, তাঁরা এটা কতভাবে ব্যবহৃত হতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে বোধ হয় অতটা চিন্তা করে দেখেননি। এটা অবশ্য আমার ভুল ধারণাও হতে পারে। কিন্তু তবু বলছি, এ ব্যাপারটা অনেকটা আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে যখন আইনস্টাইন তাঁর বিখ্যাত সমীকরণ E = mc2 প্রতিপাদন করেন, তখন তিনি চিন্তা করতেও পারেননি যে এর ওপর ভিত্তি করে পারমাণবিক বোমার মতো একটি মারণাস্ত্র তৈরি হতে পারে।
তাঁর সমীকরণটি বিমূর্ত আকারে ছিল, সেটার ব্যবহার আমরা পেয়েছি প্রায় তা লেখার চল্লিশ বছর পরে। অনেকে মনে করতে পারেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এসে যাওয়ায় আমাদের গবেষণা করার আর প্রয়োজন নেই। অন্তত মাথা খাটিয়ে সমীকরণ সমাধান করতে আমাদের আর কষ্ট করতে হবে না। যাঁদের গণিতভীতি রয়ে গেছে, তাঁরা হয়তো ভাবছেন—যাক, বাঁচা গেল। ব্যাপারটা কিন্তু বাস্তবে তা হবে না।
এ বছরের নোবেল ঘোষণার পর আমি ভাবছিলাম যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা মেশিন লার্নিং কি আদৌ কোয়ান্টাম মেকানিকসের মতো কোনো জটিল জিনিস আবিষ্কার করতে পারবে? পারুক-না পারুক, কী আবিষ্কার করতে হবে, সে জিনিসটা মানুষকেই ঠিক করতে হবে। নিউটনের সমীকরণ হঠাৎ করে আবিষ্কৃত হয়নি। এর পেছনে ছিল অনেক অনেক পরীক্ষণের ফলাফল। আগের ধ্যান-ধারণার সঙ্গে খাপ খাচ্ছিল না, এরকম নতুন পরীক্ষণলব্ধ ফলাফল যখন আমাদের সামনে আসে, এর ব্যাখ্যা দেওয়া আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়। সেখানেই আমাদের মৌলিক চিন্তা করার মূল্যটি বোঝা যায়।