এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীকে কারাগারে পাঠালেন আদালত – DesheBideshe

এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীকে কারাগারে পাঠালেন আদালত – DesheBideshe


এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীকে কারাগারে পাঠালেন আদালত – DesheBideshe

আঙ্কারা, ২৩ মার্চ – তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানবিরোধী রাজনীতিক এবং দেশটির ঐতিহাসিক শহর ইস্তাম্বুলের মেয়র একরাম ইমামোগ্লুকে দাপ্তরিকভাবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রোববার তাকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

৫৩ বছর বয়সী একরাম তুরস্কের বিরোধী রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) জ্যেষ্ঠ নেতা। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল তার।

আজ রোববার তাকে আদালতে তোলার পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে অন্যের ব্যক্তিগত তথ্য রেকর্ড করা, টেন্ডারবাজী এবং অপরাধী সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনেন। তাদের এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে একরামকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

একরামের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনকে আর্থিক মদত দেওয়ার অভিযোগও এনেছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা, তবে আদালত সেই অভিযোগ আমলে নেন নি।

বামঘেঁষা রাজনীতিক একরাম ইমামোগ্লু তুরস্কে বেশ জনপ্রিয় নেতা। ২০১৯ সালে তিনি প্রথম ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হন এবং জয়ী হন। কিন্তু তুরস্কের সুপ্রিম ইলেকশন কাউন্সিল এই নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দেয়। তবে পুনঃনির্বাচনে আরও বড় ব্যবধানে জয়ী হন ইমামোগলু। এই বিজয় তাঁকে শুধু ইস্তাম্বুলের মেয়র হিসেবেই নয়, বরং সমগ্র বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।

গত ১৯ মার্চ সকালে এক বিশেষ অভিযানে আটক করা হয় একরাম ইমামোগ্লুকে। এ ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন তার সমর্থকরা। রাজধানী আঙ্কারা, ইস্তাম্বুলসহ তুরস্কের ছোটো বড় বিভিন্ন শহরে তার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে।

সেই বিক্ষোভে গণগ্রেপ্তার অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুসারে বিভিন্ন শহরের বিক্ষোভ তেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাড়ে তিন শতাধিক বিক্ষোভকারীকে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে সিএইচপির নেতা-কর্মী, ইস্তাম্বুল নগর প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতাও রয়েছেন পর্যাপ্ত সংখ্যক।

প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান এবং তার রাজনৈতিক দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) অভিযোগ, একরাম ও তার দল সিএইচপি’র সঙ্গে তুরস্কের নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) গোপন আঁতাত রয়েছে। তবে একরাম ইমামোগ্লু এবং সিএইচপি উভয়ই এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ইমামোগলু নিজেকে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তাঁর দল সিএইচপির প্রধান ওজগুর ওজেল সরকারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীকে দমন করার অভিযোগ তুলেছেন। বিরোধী ডানপন্থী আইওয়াইআই পার্টির নেতা মুসাভাত দারভিশোগলু পার্লামেন্টে বলেছেন, “এরদোয়ান যদি আবার নির্বাচন করেন, তাহলে সব বিরোধীদের নির্বাচন বর্জন করা উচিত।’

চলমান রাজনৈতিক সংকটের ফলে তুর্কি অর্থনীতিও ধাক্কা খেয়েছে। ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশের পর তুর্কি লিরার মানে দ্রুত পতন ঘটে এবং ইস্তাম্বুল স্টক এক্সচেঞ্জ প্রায় ৭ শতাংশ কমে যায়।

ইমামোগলুর গ্রেপ্তার এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন আর কয়েক দিনের মধ্যেই তার দল সিএইচপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। আশা করা হচ্ছিল, এই সম্মেলনেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য বিরোধী দলের মনোনয়ন পাবেন। এ অবস্থায় তাঁকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্যই গুরুতর অভিযোগগুলো আনা হয়েছে বলে মনে করছেন বিরোধীরা। এর আগে, ২০২২ সালেও ইমামোগলুকে দুই বছর সাত মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল এবং রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।

সূত্র: ঢাকা পোস্ট
এনএন/ ২৩ মার্চ ২০২৫



Scroll to Top