এনসিপির শীর্ষ ৫ নেতা কেন কক্সবাজারে, কী বলছে প্রশাসন-হোটেল কর্তৃপক্ষ | চ্যানেল আই অনলাইন

এনসিপির শীর্ষ ৫ নেতা কেন কক্সবাজারে, কী বলছে প্রশাসন-হোটেল কর্তৃপক্ষ | চ্যানেল আই অনলাইন

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

কক্সবাজারে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ ৫ নেতাসহ ৬ জনের আগমন ও সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে কথিত বৈঠক নিয়ে দিনব্যাপী নানা গুঞ্জন চলেছে। একইবিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও সরব ছিল।

আজ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) এনসিপি শীর্ষ ৫ নেতাসহ ৬ জন বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভের উখিয়ার ইনানীস্থ হোটেল সী পার্ল বীচ রিসোর্টে অবস্থান করছিল বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এনসিপি শীর্ষ ৫ নেতার কক্সবাজার আসাকে কেন্দ্র করে নানা গুঞ্জনে বলা হচ্ছে, যেখানে আগে থেকে অবস্থান করা আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সাথে বৈঠক করতেই এসেছেন। তবে বিষয়টি দায়িত্বশীল সূত্রে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি সত্য নয় এবং বৈঠকের খবর গুজব উল্লেখ করে কক্সবাজারে ঘুরতে আসার কথা জানিয়েছেন দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

তবে এনসিপি নেতাদের কক্সবাজার আগমন আমেরিকার বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সাথে বৈঠকের গুঞ্জন নিয়ে ‌সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা ঝড় উঠে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‌তাদের সফর নিয়ে সরব হয়ে উঠে নেটিজনরা।

কক্সবাজার বিমান বন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বেলা ১১ টা ২৫ মিনিটের বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে এনসিপির ৫ নেতাসহ ৬ জন কক্সবাজার আসেন। তারা ভিআইপি লাউন্স ব্যবহার না করে সাধারণ যাত্রীদের গেট দিয়ে বের হয়ে চলে যান। তারা হলেন-হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম ও তার স্ত্রী, নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী, তাসনিম জারা ও তার স্বামী খালেদ সাইফুল্লাহ ।

এনসিপির কয়েকজন নেতা কক্সবাজারে আসা সত্যতা স্বীকার করেছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, বেলা ১২ টার পর পর সবাই ইনানীর হোটেল সী পার্লে অবস্থান করছেন। যতটুকু জানা গেছে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে তারা কক্সবাজার এসেছেন। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নেই। বৈঠকের বিষয়টিও সত্য না।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. সাইফ উদ্দিন শাহিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, কক্সবাজারের সী পার্ল হোটেলে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নেই। পুরো হোটেল জুড়ে মাত্র তিনজন বিদেশি চায়না নাগরিক আছেন। পিটার হাসকে হোটেলে পাওয়া যায়নি।

সী-পার্লের নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত নৌবাহিনীর কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানের ৩ টি রুমে ৬ জন অবস্থান করছেন। যার একটিতে হাসনাত আবদুল্লাহ ও নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী, একটিতে সারজিস আলম ও তার স্ত্রী, অপরটিতে তাসনিম জারা ও তার স্বামী খালেদ সাইফুল্লাহ।

তিনি বলেন, পিটার হাস বা এ রকম কেউ তাদের হোটেলে আসেননি।

এই নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, তারা বর্তমানে হোটেল রয়েল টিউলিপির ৫১০১ থেকে ৫১০৩ নম্বর কক্ষে এই ৬ জন রয়েছেন। বাইরে এনসিপি নেতাদের আগমন নিয়ে যে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, এ বিষয়ে আমি উনাদেরকে অবহিত করার পরে তারা হাসাহাসি করেন।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক অডিও বার্তায় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠকের খবরকে গুজব ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

তিনি বলেন, ‘মিডিয়াতে পিটার হাসের সঙ্গে আমাদের মিটিংয়ের যে খবর ছড়িয়েছে, তা সম্পূর্ণ গুজব ও ভিত্তিহীন। তবে আমরা কক্সবাজারে ঘুরতে এসেছি।’

তবে হোটেলটিতে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

এনসিসি নেতাদের হোটেল রয়েল টিউলিপে অবস্থান ও গোপন বৈঠকের খবর শুনে হোটেলের বাইরে উখিয়া বিএনপির নেতা-কর্মীরা অবস্থান করেন সন্ধ্যা পর্যন্ত।

এ নিয়ে উক্তি উপজেলা বিএনপির সভাপতি সারোয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দিন ৫ আগস্ট বিদেশীদের সাথে গোপন বৈঠক রহস্যজনক। বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া জরুরি। খবর শোনার পর আমাদের নেতাকর্মীরা রয়েল টিউলিপ হোটেলের সামনে অবস্থান নিয়ে সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।

কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তির বিশেষ দিনে হঠাৎ করে এনসিপির শীর্ষ নেতাদের কক্সবাজার আগমন এবং শহর থেকে ১৫-২০ কিলোমিটার দূরের পাঁচ তারকা হোটেলে অবস্থানের ঘটনা সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। মানুষের মধ্যে নানা কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে তাদের সঙ্গে পিটার হাসের বৈঠকের কথা শুনে লোকজনের মধ্যে সন্দেহ আরও বাড়ছে। তবে পিটার হাসের উপস্থিতির বিষয় নিয়ে তিনি সন্দিহান। এ বিষয়ে তিনি খোঁজ-খবর নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

কক্সবাজারের সন্তান এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব সুজা উদ্দিন বলেন, ওনারা ঘোরার জন্য কক্সবাজার এসেছেন। জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানে এনসিপি থেকে তিনজনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দেশপ্যাপী জুলাই পদযাত্রা করার পর সবাই ক্লান্ত হয়ে গেছে। সে কারণে আমাদের জারা আপুর স্বামী খালেদ ভাই সবাইকে নিয়ে গেছে কক্সবাজারে একটু ঘোরাঘুরি করার জন্য। এছাড়া আর কিছুই না। উনারা আজকে (মঙ্গলবার) ঢাকাই চলে যাওয়ার কথাও রয়েছে।

রয়েল টিউলিপ হোটেলের নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান কামরুজ্জাম জানিয়েছেন, তিনটি রুম তাদের জন্য বুকিং রয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত তারা হোটেলের মধ্যে ছিলেন বলে জানা গেছে।

Scroll to Top