এনটিআরসিএ’র শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় আসছে বড় পরিবর্তন

এনটিআরসিএ’র শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় আসছে বড় পরিবর্তন

বাংলাদেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে হলে প্রার্থীদের ‘শিক্ষক নিবন্ধন সনদ’ অর্জন করতে হয়। এই নিবন্ধন পরীক্ষা পরিচালনা করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। সম্প্রতি, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষাবর্ষ ২০২৫-২৬ থেকে নতুন নীতিমালা কার্যকর হতে পারে, যা শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত ও দক্ষ করে তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে।

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন: কী থাকছে নতুনভাবে

নতুন খসড়া অনুযায়ী, এনটিআরসিএ পরীক্ষা পদ্ধতিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিবন্ধন সম্পন্ন হতো। তবে প্রস্তাবিত নীতিমালায় পরীক্ষার ধরণে সংক্ষিপ্ততা ও আধুনিকায়নের প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে।

প্রথমত, এনটিআরসিএ সুপারিশ করেছে বাছাই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচন করার, যাকে সিলেকশন পরীক্ষা বলা হচ্ছে। বোর্ড সভার মাধ্যমে ঠিক করা হবে, এই নির্বাচন পদ্ধতি এমসিকিউ ভিত্তিক হবে নাকি লিখিত পরীক্ষাসহ হবে। অনেকটা এখনকার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার মতো একধাপে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চিন্তা করা হচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় জানা যায়, লিখিত পরীক্ষা সম্পূর্ণরূপে তুলে দেওয়া হবে না। কারণ লিখিত অংশের মাধ্যমে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান যাচাই করা হয়, যা শিক্ষক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে লিখিত ও এমসিকিউ পরীক্ষা একসাথে একধাপে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

নতুন নীতিমালায় বয়স গণনার নতুন নিয়ম ও অন্যান্য সিদ্ধান্ত

সভায় প্রস্তাব করা হয়, নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন থেকেই প্রার্থীর বয়স গণনা শুরু হবে। আগে বয়স গণনা করা হতো বছরের নির্দিষ্ট কোনো দিনে। এতে অনেক প্রার্থী আবেদন করতে পারতেন না। নতুন এই নিয়মের ফলে অনেকেই শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পাবেন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হলো, বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে বয়সসীমা সম্পূর্ণরূপে তুলে দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। এতে বিভিন্ন বয়সের প্রার্থীরা সমানভাবে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন।

এই পরিবর্তনগুলো আসতে কিছু সময় লাগবে, কারণ তা বাস্তবায়নের আগে জনপ্রশাসন ও আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত গ্রহণ করতে হবে। আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগের চূড়ান্ত অনুমোদনের পরই সংশোধিত নীতিমালা কার্যকর হবে।

এনটিআরসিএ’র শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় আসছে বড় পরিবর্তনএনটিআরসিএ’র শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় আসছে বড় পরিবর্তন

নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ

নতুন কাঠামো অনুযায়ী পরীক্ষা পদ্ধতিকে আরও স্বচ্ছ ও সময় সাশ্রয়ী করার দিকেই এগোনো হচ্ছে। প্রার্থীরা এক ধাপে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন, যা সময় ও অর্থ সাশ্রয় করবে। তবে একই সাথে, এটি হবে আরও প্রতিযোগিতাপূর্ণ।

আগামী নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের উচিত এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া। এনটিআরসিএ-র পরীক্ষার নতুন নিয়ম সম্পর্কে অবহিত থাকাটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা থেকে শিক্ষা গ্রহণ

বর্তমানে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধাপে লিখিত ও এমসিকিউ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষাও এমনভাবে পুনর্গঠন করা হচ্ছে, যাতে প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ, দ্রুত ও দক্ষ হয়। প্রার্থীদের বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা যাচাই করার পাশাপাশি সময় কমানোর চেষ্টা রয়েছে এই কাঠামোর পেছনে।

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পরিবর্তন আনা হলে সেটি হবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও আধুনিক, স্বচ্ছ ও সময়োপযোগী হবে। আগ্রহী প্রার্থীদের উচিত এখন থেকেই নতুন কাঠামো অনুযায়ী প্রস্তুতি শুরু করা, যেন তারা প্রতিযোগিতায় ভালো করতে পারেন।

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ জারি: নতুন বিধানে কী আছে, কেন বিতর্ক তৈরি হয়েছে

🤔 প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা কীভাবে পরিবর্তন হচ্ছে?

এখন থেকে এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষার ধরণ একসাথে একধাপে নেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে, যেমনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় হয়।

লিখিত পরীক্ষা সম্পূর্ণরূপে কি বাদ দেওয়া হচ্ছে?

না, লিখিত পরীক্ষা বাদ দেওয়া হচ্ছে না। এটি রাখা হচ্ছে যাতে প্রার্থীদের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান যাচাই করা যায়।

নিবন্ধন পরীক্ষায় বয়স গণনার নিয়মে কী পরিবর্তন আসছে?

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন থেকে বয়স গণনা শুরু হবে, আগে যা নির্দিষ্ট তারিখে হতো।

বয়সসীমা কি সম্পূর্ণ তুলে দেওয়া হচ্ছে?

হ্যাঁ, এমন পরিকল্পনা রয়েছে যাতে সব বয়সের প্রার্থীরা আবেদন করতে পারেন।

এই নতুন নীতিমালা কবে থেকে কার্যকর হবে?

জনপ্রশাসন ও আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর এটি কার্যকর হবে, যা ২০২৫ সালের মধ্যে হতে পারে।

Scroll to Top