এক হচ্ছে রাশিয়া–চীন–ভারত, কী প্রভাব পড়বে ভূ–অর্থনীতি ও রাজনীতিতে

এক হচ্ছে রাশিয়া–চীন–ভারত, কী প্রভাব পড়বে ভূ–অর্থনীতি ও রাজনীতিতে

মুক্তবাণিজ্যের অবসান

আদর্শ মুক্তবাজারের গল্পে বাণিজ্য একধরনের সেতু, যে সেতু ভৌগোলিক দূরত্ব মুছে দেয়। সরবরাহ ও চাহিদার স্বাভাবিক খেলায় সীমান্ত পেরিয়ে পণ্য প্রবাহিত হয়। সেখানে দাম নির্ধারিত হয় প্রতিযোগিতা ও দক্ষতার নিয়মে। সরকার শুধু থাকে রেফারির মতো—খেলার নিয়ম সবার জন্য একই রকম রাখা তার কাজ; নিজের দলের হয়ে গোল দেওয়া নয়।

কিন্তু বাস্তবের আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এ গল্প বদলে যায়। এখানে সেতুর বদলে বাণিজ্য কখনো হয়ে ওঠে প্রাচীর, কখনোবা অস্ত্র। শত্রুপক্ষের অর্থনীতিতে ধাক্কা দিতে শুল্কের হার বাড়িয়ে দেওয়া হয়, প্রযুক্তি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়, যেন প্রতিদ্বন্দ্বী বড় হতে না পারে। আবার কোনো কোনো সময় কৌশলগত আনুগত্যের বিনিময়ে বাজার প্রবেশাধিকার দেওয়া হয় পুরস্কার হিসেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্পযুগের শুল্কনীতি, চীনের বিরল ধাতু রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ, কিংবা রাশিয়ার জ্বালানি সরবরাহকে কূটনৈতিক চাপ হিসেবে ব্যবহার—এসব থেকে বোঝা যায় মুক্তবাজারের মধ্যে বাস্তব রাজনীতির প্রভাব কতটা। অ্যাডাম স্মিথের স্বপ্নের সেই উক্তি, নিরপেক্ষ বাজার প্রায়ই ক্ষমতার খেলায় বাঁক নেয়, যেখানে বাণিজ্য আর কেবল অর্থনীতির ভাষায় কথা বলে না, বরং ভূরাজনীতির শর্তে চুক্তি সই করে।

ফলে মুক্তবাজারের নীতি আর বাণিজ্যের রাজনৈতিক অস্ত্রায়ণের দ্বন্দ্ব আজকের বৈশ্বিক অর্থনীতির সবচেয়ে বড় অঘোষিত নাটক, যেখানে দর্শকও ব্যবসায়ী, রাষ্ট্রও খেলোয়াড়।

অ্যাডাম স্মিথ ও ডেভিড রিকার্ডোর বাণিজ্যতত্ত্বে এমন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ অদক্ষ, ব্যয়বহুল ও উভয় পক্ষের ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বাস্তবতায় রাষ্ট্রগুলো মনে করে, রাজনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষাই শেষ পর্যন্ত অর্থনৈতিক স্বার্থকে প্রভাবিত করে।

Scroll to Top