স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ঐতিহাসিক ‘এক দফা’ আন্দোলনের প্রকৃত ঘোষক দেশের জনগণ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রোববার বিকালে আয়োজিত দলীয় ইশতেহার ঘোষণার সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আজ ঐতিহাসিক ৩ আগস্ট। ঠিক এক বছর আগে নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ এই শহীদ মিনারে এসে যে এক দফা দাবি তুলেছিল, সেটি কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে ঘোষণা আসেনি। এক দফার কোনো একক ঘোষক নেই; এর প্রকৃত ঘোষক দেশের জনগণ।
তিনি বলেন, আমাদের দলের জন্ম, এনসিপির জন্ম, আমাদের সকল শ্রম, আপনাদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য। আপনাদের অভিযোগ-অনুযোগ, প্রত্যাশা আমাদের ভাবনাকে করেছে গভীর, আমাদের লক্ষ্যকে করেছে সমৃদ্ধ। তাই ঠিক একবছর পর আমরা আবার শহীদ মিনারে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে একটি নতুন বাংলাদেশের, আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকের ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করছি।
দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আজ যে ইশতেহার ঘোষণা করা হলো, সেটি কেবল একটি নথি নয়; এটি হবে আগামী দিনের পথপ্রদর্শক। দেশের প্রতিটি সংকটের গভীরে গিয়ে সুনির্দিষ্ট সমাধান খুঁজে আনাই এই ইশতেহারের উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে- হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, আদিবাসী কিংবা সংখ্যাগরিষ্ঠ- সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা একসঙ্গে এগিয়ে যেতে চাই। নতুন বাংলাদেশের রাজনীতিতে আর কোনো বিভাজনের স্থান থাকবে না।
দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম তার বক্তব্যে বলেন,‘আজ থেকে একবছর আগে এ মঞ্চ থেকে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোব্যবস্থার স্বপ্নে খুনি শেখ হাসিনার পতন ঘটনোর ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু একবছর হয়েছে কাঙ্খিত অধিকার পাইনি। আমরা আর হতাশার কথা বলতে চাই না। আগামীর বাংলাদেশে আমরা যে অধিকারগুলো পেতে চাই, যেভাবে বাংলাদেশকে দেখতে চাই, আমরা সেগুলো এ মঞ্চ থেকে বলতে এসেছি।’
এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘কোনো নেতাকর্মীর ওপর হামলা হলে তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা হবে। এখন আমাদের কাজ করার সময়। আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি এবং আশ্বস্ত করছি, কেউ যদি ভয় দেখায়, কেউ যদি হুমকি দেয়, আপনারা পিছু হটবেন না ‘
এনসিপির ঘোষিত ইশতেহারে রয়েছে- নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিক, জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও বিচার, গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার, ন্যায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থা ও আইন সংস্কার, সেবামুখী প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন, জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গ্রাম পার্লামেন্ট ও স্থানীয় সরকার, স্বাধীন গণমাধ্যম ও শক্তিশালী নাগরিক সমাজ এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্য।
এছাড়া আছে জাতি গঠনে শিক্ষানীতি, গবেষণা, উদ্ভাবন ও তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব, ধর্ম–সম্প্রদায় ও জাতিসত্তার মর্যাদা, নারীর নিরাপত্তা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন, ইনসাফভিত্তিক অর্থনীতি, তারুণ্য ও কর্মসংস্থান, বহুমুখী বাণিজ্য ও শিল্পায়ন নীতি, টেকসই কৃষি ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব, শ্রমিক–কৃষকের অধিকার, জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা, নগরায়ণ, পরিবহন ও আবাসন পরিকল্পনা, জলবায়ু সহনশীলতা ও নদী–সমুদ্র রক্ষা, প্রবাসী বাংলাদেশির মর্যাদা ও অধিকার, বাংলাদেশপন্থি পররাষ্ট্রনীতি এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল।
সমাবেশে বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, এই ইশতেহার দেশের রাজনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে এবং বিভাজন, বৈষম্য ও অনিশ্চয়তার অবসান ঘটিয়ে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করবে।