ভারত সরকারের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার এবং অভিন্ন স্বার্থ পূরণের লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
আজ (৬ ফেব্রুয়ারি) বৃহস্পতিবার দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এই আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক জটিল অবস্থায় পৌঁছেছে।
তিনি মনে করেন, ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে, তিনি দুই দেশের মধ্যে অভিন্ন স্বার্থ এবং সহযোগিতার সম্ভাবনার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস এবং তিনি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিবাচক দিকগুলো গড়ে তুলতে এবং উত্তেজনা ও ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে বাস্তবসম্মতভাবে কাজ করতে ইচ্ছুক। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ভারতের সাথে পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে একটি কার্যকর সম্পর্ক চায় এবং আশা করেন ভারতীয় নেতারাও এই ইচ্ছার প্রতি সাড়া দেবেন। ডিসেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রীর ঢাকা সফরকে তিনি এই দিকনির্দেশনার একটি পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতার দীর্ঘ ইতিহাসের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই সহযোগিতা উভয় দেশের জনগণের জন্য উপকারী হবে। তিনি ভারতের অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশেরও পোশাক রপ্তানি, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অবদান এবং ক্ষুদ্রঋণ মডেলের মতো উল্লেখযোগ্য অর্জনের কথা তুলে ধরেন।
বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি আচরণ নিয়ে ভারতে উদ্বেগের বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল না এবং কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল। তবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়। তিনি ভারতীয় মিডিয়ার অতিরঞ্জিত ও মিথ্যা প্রতিবেদনের সমালোচনা করেন এবং বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বাংলাদেশের আন্তরিক প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন এবং ভারতের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া কামনা করেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তুলতে দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিকে সংকেত দেওয়ার জন্য নেতাদের একসাথে ছবি তোলার আহ্বান জানান।
তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে জেলেদের বিনিময় এবং বাংলাদেশ-নেপাল-ভারতের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বিদ্যুৎ চুক্তির মতো ইতিবাচক পদক্ষেপগুলোকে সামনে রেখে দুই দেশের মধ্যে একটি অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা সম্ভব। তিনি সীমান্তে নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার আহ্বান জানান এবং দুই দেশের জনগণের জন্য ইতিবাচক ও বাস্তববাদী পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।