একজন বিয়োগান্ত নায়ক

একজন বিয়োগান্ত নায়ক

তাজউদ্দীন স্পষ্টতই পাকিস্তান ভেঙে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তারপরও ২৪ মার্চ পর্যন্ত আলোচনার নামে কালক্ষেপণ হয়। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালির ওপর প্রচণ্ড আঘাত হানে। শুরু হয়ে যায় প্রতিরোধযুদ্ধ।

২৫ মার্চ রাতে দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গিয়েছিল। আমাদের সামনে কী কী বিকল্প ছিল? আমরা একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারতাম। শেখ মুজিবের হিসাব ছিল ভিন্ন। সশস্ত্র স্বাধীনতার লড়াইয়ের যে অনিশ্চিত, কষ্টকর, কণ্টকাকীর্ণ পথ, সে পথে তিনি যাননি। তাহলে লড়াইটা হবে কীভাবে?

প্রতিবেশী ভারত সীমান্ত খুলে দিল। দলের অন্য নেতারা ও তরুণদের একটা অংশ ছুটল সীমান্তের দিকে। ভারত তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও সামরিক সহযোগিতা দিল। এই কালবেলায় তাজউদ্দীন এককভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে চলে যান নয়াদিল্লি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পরামর্শে ১০ এপ্রিল গঠন করেন বাংলাদেশ সরকার। এই সরকারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের আমবাগানে। সরকারের ঠাঁই হয় কলকাতার থিয়েটার রোডের একটি দোতলা বাড়িতে।

ভারতে আশ্রয় নেওয়া এবং তাদের সাহায্য নিয়ে সরকার গঠন করার মধ্যেই ছিল একধরনের সমীকরণ ও সংকট। বাংলাদেশের যুদ্ধ একই সঙ্গে হয়ে যায় ভারতের যুদ্ধ। প্রবাসী সরকারের নিউক্লিয়াস ছিলেন তাজউদ্দীন। ভারতের আশ্রয়ে থাকার কারণেই তাঁকে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যা এড়ানো যেত না। কেউ পারতেন না। ফলে যুদ্ধে একপর্যায়ে চালকের আসনে বসে যায় ভারত। তাজউদ্দীনের কপালে কেউ কেউ যুক্ত করে দেয় ‘ভারতের দালাল’ তকমা। চার বছর পর তাঁকে জীবন হারাতে হয় এই ‘কলঙ্ক’ নিয়ে।

Scroll to Top