টরন্টো , ১৬ নভেম্বর – গত শনিবার ১১ নভেম্বর সন্ধ্যা ছটায় টরন্টোর গ্র্যান্ড সিনামন ব্যাঙ্কোয়েট হলে বুয়েট এলামনাই এসোসিয়েশন কানাডার উদ্যোগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের পুনর্মিলনী বুয়েট নাইট ২০২৩ অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। এসোসিয়েশন এর পরিচালক (সদস্য) আমিনুল হক (মুরাদ) এর তত্ত্বাবধানে অভ্যর্থনা ও রেজিষ্ট্রেশন বুথে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী, তাদের পরিবারবর্গ ও অতিথিদের অনুষ্ঠানস্থলে স্বাগত জানানো শুরু হয়। সন্ধ্যা সাতটায় ছয় শতাধিক অভ্যাগতের উপস্থিতিতে মিলনায়তন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এসোসিয়েশন পরিচালনা কমিটির ডিরেক্টর (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) মনীষ পাল, এসোসিয়েশন এর সদস্য ইফাত আরা এবং নূর ই জান্নাত সম্মিলিতভাবে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
প্রস্তুতি কমিটির পক্ষ থেকে সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং বুয়েট নাইট এর কনভেনর আব্দুস সালাম লায়ন এ বছরের অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। তিনি তার বক্তৃতায় অতিথিদের স্বাগত জানান। অনুষ্ঠান প্রস্তুতি কমিটিতে যৌথ সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন কমিটির অন্যতম পরিচালক শুভ্র চক্রবর্তী , আমিনুল হক (মুরাদ) এবং অন্যতম উপদেষ্টা অজয় মজুমদার।, অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সহিদ উদ্দিন হিরন এবং প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন কানাডায় বাংলাদেশের মাননীয় হাই কমিশনার জনাব ড: খলিলুর রহমান। অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত গুণীজন কিংবদন্তি অভিনেতা আবুল হায়াৎ , টরন্টোর বাংলাদেশ দূতাবাসের কনস্যুলার জেনারেল লুৎফর রহমান , স্কারবোরো সাউথ ওয়েস্ট এর এমপিপি ডলি বেগম এবং এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ার্স অন্টারিওর প্রেসিডেন্ট রেজাউর রহমান।
এর পর স্মৃতি চারণ পর্বে বক্তব্য রাখেন অগ্রজ সদস্যদের মধ্য থেকে ৬৪ ব্যাচের ফজলুল হক এবং অনুজদের মধ্য থেকে ২০২২ সালের স্নাতক সিফাত তাসনিম ঐশিক। অভ্যাগতরা অত্যন্ত আগ্রহভরে বুয়েটের ফেলে আসা দিনগুলো নিয়ে তাঁদের স্মৃতি চারণ শোনেন। এর পর বুয়েটিয়ান সদস্যদের ছেলেমেয়েদের মধ্য থেকে দুজন কৃতি ছাত্র ছাত্রী অর্ণব মজুমদার এবং ফাবিহা লামিসাকে পুরস্কৃত করা হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে ইউসুফ আলী তালুকদার , খালেদ আল মামুন এবং এ প্লাস একাডেমির পক্ষ থেকে বাদশা আলম এর উপস্থিতিতে জনাব লুৎফর রহমান পুরস্কৃতদের হাতে সম্মাননা সনদ এবং পুরস্কারের মূল্যমান হিসেবে গিফট কার্ড তুলে দেন।
এর পর অনুষ্ঠানে প্রাক্তন বুয়েটিয়ান কানাডায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত পাঁচজন গুণী শিক্ষক এবং একজন প্রকৌশলীকে তাদের নিজ নিজ কাজে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সম্বর্ধনা জানানো হয়। যাদেরকে স্বীকৃতি জানানো হয়, তারা হচ্ছেন ড: মোজাম্মেল খান, ড: খন্দকার আনোয়ার হোসাইন, ড: সফিউদ্দিন, ড: নাসির উদ্দিন , আলী হোসাইন এবং ড: সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ। কৃতি আলামনাইদের সনদ প্রদান করেন মাননীয় রাট্রদূত ড: খলিলুর রহমান।
পরবর্তিতে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অতিথিদের মধ্য থেকে নাট্য ব্যক্তিত্ব আবুল হায়াৎ , অন্টারিওর প্রাদেশিক সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেত্রী এমপিপি ডলি বেগম , কনসাল জেনারেল লুৎফর রহমান, এবিইওর প্রেসিডেন্ট রেজাউর রহমান , এবং অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাননীয় হাই কমিশনার ড: খলিলুর রহমান। মাননীয় রাষ্ট্রদূত তার বক্তৃতায প্রবাসে বাংলাদেশের প্রকৌশলীদের ভূমিকার কথা গর্বের সাথে উল্লেখ করেন এবং বলেন, কানাডার বিভিন্ন শিক্ষা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাংলাদেশের প্রকৌশলী ও স্থপতিরা অত্যন্ত মর্যাদার সাথে তাদের পেশাগত দক্ষতার মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিদেশে তুলে ধরছেন। তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্য ও সম্ভাবনার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। তিনি বুয়েট এলামনাই এসোসিয়েশন কানাডার ব্যানারে প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের সমবেত করবার উদ্যোগ নেবার জন্য আয়োজক কমিটিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট সহিদ উদ্দিন হিরন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিলো মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এলামনাই সদস্য ও পরিবারের পরিবেশনায় নাচ, গান ও আবৃত্তির মধ্য দিয়ে মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পর্বের সূচনা করা হয়। সূচনা পর্বে অপূর্ব সুরের মুর্ছনায় কোরাস গেয়ে শোনান বুয়েট এলামনাই পরিবারের সদস্যরা। তারপর সীমা বড়ুয়ার নেতৃত্বে তার দল মনমাতানো লোকজ নৃত্য পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানে নজরুলের কবিতা সৃষ্টি সুখের উল্লাসে আবৃত্তি করে শুনিয়েছেন সংগঠনের অন্যতম উপদেষ্টা ড: আলী তারিক। ইফাত আরা এবং নূর ই জান্নাত এর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন এলামনাই পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে সুমি বর্মন, শামীম ইকবাল, দ্বৈত কণ্ঠে গোলাম মহিউদ্দিন এবং ইয়াসমিন খায়ের, শুভ্রা সাহা এবং অনিন্দ্য মন্ডল, পূজা দাস এবং মুনমুন সরকার, শাহ আরিফুজ্জামান এবং তাজিন ফাতেমা, মঞ্জুরুল আলম এবং সারোয়ার হাবিবি, একক কণ্ঠে রিয়াজ মোর্শেদ মাসুদ এবং ফরহাদ হোসাইন কচি। শিল্পীরা রবীন্দ্র সঙ্গীত থেকে শুরু করে লালনগীতি, পুরনো দিনের গান থেকে আধুনিক, নানান ঢংয়ের সব গান পরিবেশন করে দর্শক শ্রোতাদের বিপুল প্রশংসা অর্জন করেন। অনুষ্ঠানে তবলা সংগত করেন বিশিষ্ট তবলা অপরূপ বড়ুয়া। অনুষ্ঠানে পূর্ণেন্দু পত্রীর কথোপকথন থেকে ভিন্ন মাত্রার দ্বৈত আবৃত্তি করে শোনান পল্লব ঘোষ এবং কবি জান্নাতুল নাইম। অনুষ্ঠানে অতিথি শিল্পী ছিলেন সুমনা গাঙ্গুলী এবং ব্যান্ড সংগীতের জনপ্রিয় শিল্পী তপু। মূহুর্মূহ করতালি দিয়ে দর্শকরা শিল্পীদের স্বাগত জানান। অতিথি শিল্পীরা আধুনিক থেকে হিন্দি জনপ্রিয় বহু ঘরানার গান শুনিয়ে দর্শক শ্রোতাদের মন কেড়ে নেন।
অনুষ্ঠানে মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিলেন ক্লাইমেট চ্যানেল, প্রবাসী টিভি কানাডা এবং এনআরবি। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ড: দেলোয়ার হোসাইন, বর্তমান উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য জনাব নুরুজ্জামান , বর্তমান পরিচালনা কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর চৌধুরী , তানজিলুর রহমান ও রতন রায়, সিবিএন এর কর্ণধার মাহবুব ওসমানী, দেশে বিদেশে টিভির নজরুল মিন্টো, এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ার্স অন্টারিও এর ডিরেক্টর (অ্যাডমিন) হাবিব রহমান, বিশিষ্ট ফটো সাংবাদিক বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব টরন্টোর প্রাক্তন সভাপতি মির্জা শহীদুর রহমান এবং টরন্টোর বিভিন্ন এলামনাই এসোসিয়েশন এর কর্মকর্তা বৃন্দ। পুরো অনুষ্ঠানে আগত এলামনাই সদস্য, পরিবার ও অতিথিদের আলোকচিত্র ধারণ করেন তরুণ ফটোগ্রাফার রাশেদ শাওন। অনুষ্ঠান উপলক্ষে ইউসুফ তালুকদার এবং ইফাত আরার সম্পাদনায় এলামনাই সদস্যদের স্মৃতিকথা ও নিবন্ধ নিয়ে একটি দৃষ্টিনন্দন স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠান উপলক্ষে স্মরণিকায় বাণী প্রদান করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড: সত্য প্রসাদ মজুমদার, অটোয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড: খলিলুর রহমান, প্রফেশনাল ইঞ্জিনীয়ার্স অফ অন্টারিওর প্রেসিডেন্ট রয়ডন ফ্রেজার, এবং ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট আব্দুস সবুর।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে অনুষ্ঠিত হয় রাফেল ড্র। এবারের রাফেল ড্র ছিল ব্যতিক্রম। বুয়েট আলামনাইদের বিভিন্ন ব্যাচের মধ্য থেকে এবার রাফেল ড্র এর পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়। যেসব ব্যাচ পৃষ্ঠপোষকতা করেন, তারা হলো ব্যাচ ৮৩, ৮৬ , ৮৭ , ৮৮, ৯৫, ০২। শত শত উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে লটারীর মাধ্যমে ছয়জন বিজয়ীকে পুরস্কৃত করা হয়।
আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে ম্যাগাজিনের প্রধান বিজ্ঞাপনদাতা পাওয়ারড বাই স্পনসর ব্যারিস্টার ওমর জাহিদ, রিয়ালটর আব্দুল আওয়াল এবং মর্টগেজ এজেন্ট বজলুর মারুফ কে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। তিন প্ল্যাটিনাম স্পনসর ব্যারিস্টার শামীম আরা, রিয়ালটর কামরুল হাসান নির্ঝর, টেকনোভিশন এর প্রধান নির্বাহী সায়েদুর রহমান এর প্রতি ও অপরিসীম কৃতজ্ঞতা জানান আয়োজক কমিটি।
আরো যাদের সহযোগিতা নিয়ে এ অনুষ্ঠান সম্ভব হয়েছে, তাদের মধ্যে আছেন গোল্ড স্পনসর রাফি আলম, শান দে, গৌতম পাল এবং মোহাম্মদ আলী শাওন, নিপা কর , ইন্সেপ্টার ইশতিয়াক আহমেদ , খান বিল্ডার্স এর রোকেয়া সুলতানা এবং নুরুল হুদা খান, মোহাম্মদ সুরুজ্জামান, দুলাল ভৌমিক, রিয়ালটি ২১ এর বাদশা আলম নিলুফা বানু, এবং ওয়ালিউল হাসান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে এসোসিয়েশন এর কর্মকর্তাবৃন্দের উপস্থিতিতে সংগঠনের প্রাক্তন উপদেষ্টা ননী গোপাল দেবনাথের লেখা ‘বৈচিত্রময় কানাডা : প্রাগৈতিহাসিক থেকে বর্তমান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
গ্র্যান্ড সিনামন ব্যাঙ্কোয়েট হলের বুফে খাবার দিয়ে অতিথিদের নৈশভোজে আপ্যায়িত করা হয়।