ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যে ক্রমবর্ধমানভাবে বাংলা ভাষাভাষী শ্রমিকদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন উপকূলবর্তী জেলায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে কাজের সন্ধানে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের শুধু বাংলায় কথা বলার অপরাধে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করে আটক ও হেনস্তা করা হচ্ছে।
ভারতের কলকাতার সংবাদ মাধ্যম খবর ৩৬৫ দিনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উড়িষ্যার পারাদ্বীপ, জগৎসিংহপুর, কেন্দ্রাপাড়া, ভদ্রক, মালকানগিরি, বালেশ্বর ও কটকসহ একাধিক জেলায় এমন ঘটনা ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের আধার কার্ড, ভোটার আইডি, রেশন কার্ড, এমনকি জমির দলিল দেখানোর পরও তাদের দাবিকে অস্বীকার করা হচ্ছে।
বারবার বাঙালি শ্রমিকদের ওপর হামলা ও হয়রানি করা হচ্ছে জানিয়ে ওই প্রতিবেদনে জুন মাসের শেষের দিকে বাংলাভাষীদের আটক ও হেনস্তার কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়
- ২৩ জুন ২০২৫: উড়িষ্যার কটকে শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলার অপরাধে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করা হয় ১০০ জন বাঙালিকে। একই অভিযোগে বালেশ্বরে আটক হন আরও ১৭ জন।
- ২৫ জুন ২০২৫: বীরভূম জেলার নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের ১৬ জন শ্রমিককে বাংলাদেশি অপবাদ দিয়ে আটক করে উড়িষ্যা পুলিশ। পরিবারের সদস্যরা এক সপ্তাহ ধরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে।
- ২৭ জুন ২০২৫: মালদহের তালগাছি এলাকার ১৯ জন শ্রমিককে একই অভিযোগে আটক করা হয়। অভিযোগ, তাঁদের মোবাইল ও পরিচয়পত্র কেড়ে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক হেনস্তা করা হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও পদক্ষেপ
এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় বিষয়টি তুলেছেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ভাষাগত বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি অপবাদ দেওয়া হচ্ছে—এটা ভাষাগত নিপীড়নের চূড়ান্ত রূপ।
তিনি বলেন, আমাদের রাজ্যে দেড় কোটিরও বেশি পরিযায়ী শ্রমিক বিভিন্ন রাজ্য থেকে কাজ করতে আসে। আমরা তাদের প্রতি এই ধরনের আচরণ করি না। ওরা অত্যাচার করে, আমরা করি না—এটাই আমাদের তফাৎ।
রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে উড়িষ্যার মুখ্যসচিবকে চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টির তীব্র প্রতিবাদ জানান। চিঠিতে বলা হয়েছে, এই শ্রমিকরা ভারতীয় নাগরিক। তাদের যেন ভাষা বা আঞ্চলিক পরিচয়ের ভিত্তিতে হয়রানির শিকার হতে না হয়। আমরা প্রয়োজনীয় নাগরিকত্ব সংক্রান্ত নথি পাঠিয়েছি, তবুও তাদের আটক করা আইন ও সংবিধানের পরিপন্থী।
তিনি আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার নাগরিকত্ব যাচাইয়ে সহযোগিতায় প্রস্তুত, তবে ভাষার কারণে নাগরিকদের প্রতি এমন দমনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।