ঢাকা, ১৮ জুন – ঈদুল আজহার ১২ দিনে (৩ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত) দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনায় এক হাজার ২১৮ কোটি ৭২ লাখ ৮৬ হাজার টাকার মানবসম্পদের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
বুধবার (১৮ জুন) ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের সই করা গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে রোড সেফটি।
ঈদযাত্রার ১২ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় মানবসম্পদের ক্ষতির আর্থিক মূল্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ মানবসম্পদের ক্ষতি হয়েছে তার আর্থিক মূল্য এক হাজার ২১৮ কোটি ৭২ লাখ ৮৬ হাজার টাকার মতো। যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনার অনেক তথ্য অপ্রকাশিত থাকে, সেজন্য এই হিসাবের সঙ্গে আরও ৩০ শতাংশ যোগ করতে হবে।
দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ যানবাহন বা সম্পদের ক্ষতি হয়েছে সেই তথ্য না পাওয়ায় সম্পদের ক্ষতির আর্থিক পরিমাপ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।
রোড সেফটি বলছে, ঈদ উদযাপনকালে মাত্র ৪/৫ দিনে বিপুল সংখ্যক মানুষকে পরিবহন করার মতো মানসম্পন্ন নিরাপদ গণপরিবহন বাংলাদেশে নেই। ফলে মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনে গন্তব্যে যাত্রা করেন এবং দুর্ঘটনার শিকার হন। দায়িত্বহীনতা ও অসচেতনতার কারণেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে।
সুস্থ, স্বাভাবিক ও নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে কমপক্ষে তিন বছরের একটি মধ্যমেয়াদি টেকসই সমন্বিত পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ পরিকল্পনার অধীনে রেললাইন সংস্কার এবং সম্প্রসারণ করে ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে সড়কপথের মানুষকে ট্রেনমুখী করতে হবে। নদীপথ সংস্কার ও জনবান্ধব করতে হবে। সড়কে বিআরটিসির রুট বিস্তৃত করে বাসের সংখ্যা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে সড়কের সব মেয়াদোত্তীর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন বন্ধ করতে হবে। ঈদযাত্রায় পোশাক শ্রমিকরা যেন পর্যায়ক্রমে ছুটি উপভোগ করতে পারেন সেজন্য পরিকল্পনা সাজাতে হবে। পোশাক শ্রমিকদের জন্য অঞ্চলভিত্তিক যানবাহনের ব্যবস্থা করতে হবে। এসব উদ্যোগ ঠিকমতো বাস্তবায়ন করলে পরবর্তী সব ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ হবে।
ফাউন্ডেশন মনে করে, যানবাহনের চালকরা তাদের নিয়োগপত্র, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকার কারণে মানসিকভাবে অস্থির থাকেন। তাদের মধ্যে জীবনবোধ ঠিকমতো কাজ করে না। সবসময় অস্বাভাবিক আচরণ করেন। ফলে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হন। এ প্রেক্ষাপটে পরিবহন চালকদের পেশাগত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করলে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, দেশে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগের সমন্বয় এবং ধারাবাহিকতা নেই। অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে সড়ক পরিবহন খাতের অব্যবস্থাপনার কারণে। এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা ও কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ঈদের আগে-পরে ১২ দিনে দেশে ৩৪৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩১২ জন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ১০৫৭ জন। নিহতদের মধ্যে নারী ৪৭ জন ও শিশু ৬৩ জন।
তথ্যমতে, ১২১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১০৭ জন, যা মোট নিহতের ৩৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৪৪ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৫১ জন, অর্থাৎ ১৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
এসময়ে ৯টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত ও ৮ আহত হয়েছেন। ৩২টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত এবং ১৭ জন আহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনা রোধে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। যার মধ্যে রয়েছে-
১.দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বাড়াতে হবে; ২. চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; ৩. বিআরটিএ-র সক্ষমতা বাড়াতে হবে; ৪. পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য সার্ভিস রোড তৈরি করতে হবে; ৬. পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; ৭. যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে; ৮. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।
৯. রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে; ১০. গণপরিবহন উন্নত, সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করে মোটসাইকেল ব্যবহার নিরৎসাহিত করতে হবে; ১১. ঈদের আগে-পরে সরকারী ছুটির সঠিকভাবে বিন্যাস করতে হবে; ১২. সড়ক, নৌ ও রেলপথে কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে; ১৩. টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে; ১৪. গণমাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে এবং ১৫. সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
সূত্র: জাগো নিউজ
আইএ/ ১৮ জুন ২০২৫