মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। ইসরায়েলের সামরিক স্থাপনায় ইরানের হামলার পর পাল্টা হামলা এবং তার জবাবে ইরানের তৃতীয় দফা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এই অঞ্চলের পরিস্থিতিকে চরম অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। ইসরায়েলের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের বাণিজ্যিক রাজধানী তেল আবিবের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হেনেছে, যাতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরান তৃতীয় দফায় ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এই হামলাকে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। যদিও তৃতীয় দফায় কতগুলো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি, তবে প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় অন্তত ১০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল। তেল আবিবে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার পর সেখানকার বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বলতে দেখা গেছে এবং সাইরেনের শব্দ শোনা গেছে।
BREAKING
IRGC : The next wave will consist of 1,800 missiles. 🔥🇮🇷 pic.twitter.com/GHbbq6KNov
— Islamic Republic of Iran (@IRIran_official) June 13, 2025
ইরানের বিপ্লবী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) থেকে এক নতুন ও মারাত্মক হুমকি এসেছে। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইসরায়েলের দিকে চতুর্থ দফায় আরও ১,৮০০ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এই ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে, কারণ এমন বৃহৎ আকারের হামলা হলে তা এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য চরম হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
SHALOM 🇮🇷🔥 pic.twitter.com/urqh5jzNbH
— Islamic Republic of Iran (@IRIran_official) June 13, 2025
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলও ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, তারা ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, রেভল্যুশনারি গার্ডের কমান্ডার হোসেইন সালামি সহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং অন্তত ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। ইরানি সংবাদমাধ্যম নুর নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ইরানে ৭৮ জন নিহত এবং ৩২৯ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ইসরায়েল দাবি করেছে যে তারা ইরানের ছোড়া বেশিরভাগ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে ভূপাতিত করেছে, তবে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।
এই ক্রমবর্ধমান সংঘাত নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে চুক্তিতে আসার আহ্বান জানিয়েছেন এবং অন্যথায় আরও ‘ভয়াবহ হামলার’ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। রাশিয়া এবং তুরস্কের মতো দেশগুলো এই উস্কানির জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যদি আইআরজিসি-এর ১৮০০ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি সত্যি হয়, তাহলে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এবং একটি পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক যুদ্ধ শুরু হতে পারে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতি ও নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনবে। বর্তমানে পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং সবাই এই সংঘাতের পরবর্তী ধাপের দিকে গভীর উদ্বেগের সাথে তাকিয়ে আছে।