ইউরোপ-যুক্তরাজ্য সফর শেষে যা বললেন জামায়াতের আমির | চ্যানেল আই অনলাইন

ইউরোপ-যুক্তরাজ্য সফর শেষে যা বললেন জামায়াতের আমির | চ্যানেল আই অনলাইন

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল ইউরোপ ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে জানিয়েছে, সফরে বিশ্ব নেতাদের সাথে বৈঠকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ, সুশাসন ও সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছে সংগঠনটি।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানী ঢাকার গুলশানস্থ হোটেল ওয়েস্টিনে সফর বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘সাউথ এশিয়া সম্পর্ক বিষয়ক ডেলিগেশন’-এর চেয়ারম্যান শেরবান-ডিমিত্রি স্তুরজা-এর আমন্ত্রণে গত ৭ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ইউরোপ এবং ১১ ও ১২ এপ্রিল যুক্তরাজ্য সফর করেন তারা।

জামায়াতের এ প্রতিনিধি দলে ছিলেন সংগঠনের নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, জামায়াতের ইউরোপের মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা, আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মাহবুবুল আলম এবং আমিরে জামায়াতের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মাহমুদুল হাসান চৌধুরী।

সংবাদ সম্মেলনে আমিরে জামায়াত জানান, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট, ইউরোপীয় কমিশন, ইউরোপীয় কাউন্সিল এবং বেলজিয়াম সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ, সুশাসন ও সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা ২০০১-২০০৬ শাসনামলের সরকারের সাফল্য তুলে ধরেছি। জামায়াত জনকল্যাণমুখী ও দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতি চর্চা করে। জামায়াত দলের ভেতরে গণতন্ত্রের চর্চা ও তৃণমূলে নেতৃত্ব বিকাশের ধারায় বিশ্বাসী। জাতিগত বা ধর্মীয় সংখ্যালঘুর ধারণা প্রত্যাখ্যান করে আমরা বলেছি যে, ‘আমরা সবাই বাংলাদেশি।’ জাতীয় ঐক্যই আমাদের অগ্রাধিকার।

অর্থনৈতিক সহযোগিতা, অভিবাসন ও দক্ষতা উন্নয়ন নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ইউরোপের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব জোরদারে প্রতিনিধি দল প্রস্তাব করেছে।

প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে, যৌথভাবে দক্ষ জনবল গড়ে তোলার প্রতিষ্ঠান স্থাপন; শিক্ষার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় কর্মসূচি; কাঠামোবদ্ধ অভিবাসন নীতি এবং ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও বাংলাদেশ থেকেই ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সুযোগ প্রদানের কথা আমরা বলেছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের ক্ষেত্র চিহ্নিত করে এর ভৌগোলিক অবস্থান, কর্মঠ জনশক্তি ও বন্দর সুবিধা দেশকে অতুলনীয় সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

বেলজিয়ামের জন্য একটি বিশেষ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও তারা রাখেন। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও সবুজ জ্বালানিতে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়।

শ্রম অধিকার ও শিল্প খাতের স্থায়িত্ব নিয়ে জামায়াতের আমির জানান, শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ কাঠামোর ওপর জোর দিয়েছে প্রতিনিধি দল।

তারা বলেন, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ কর্মপরিবেশ; ন্যায্য মজুরি এবং মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সংলাপ- এই ধারায়ই একটি টেকসই শিল্প ও শান্তিপূর্ণ কর্মক্ষেত্র গঠিত হতে পারে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট, একটি বৈশ্বিক দায়িত্ব উল্লেখ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট নিয়ে আমরা বলেছি যে, বেলজিয়ামের সহায়তা প্রশংসনীয় হলেও স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।

তারা বলেন, মানবিক সহায়তা ছাড়াও সম্মানের সঙ্গে তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়াই দীর্ঘমেয়াদি সমাধান। এই ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘকে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

পাচার হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে তারা বলেছে, আমরা পূর্ববর্তী সরকারের দুর্নীতিবাজদের বিদেশে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তা কামনা করেছি। আমরা মনে করি, এই পদক্ষেপ জনগণের আস্থা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে একটি বড় উদ্যোগ হবে।

কূটনৈতিক সম্পর্ক ও আমন্ত্রণ বিষয়ে তারা জানান, আমরা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট, বেলজিয়ামের রাজা ও রাণী এবং ইউরোপের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি।

সংবাদ সম্মেলনে উঠে আসে যুক্তরাজ্য সফর ও জিয়া পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ এর বিষয়টিও। তিনি বলেন, আমরা লন্ডনে চিকিৎসাধীন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করে তার স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নিয়েছি। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান উপস্থিত ছিলেন। আমরা বেগম জিয়ার জন্য দোয়া করেছি এবং তার কাছে দোয়া চেয়েছি।

সংবাদ সম্মেলনে ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে জামায়াতের আমির বলেন, সরকারে না থেকেও একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের স্বার্থে কাজ করা আমাদের দায়িত্ব মনে করেছি। ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতি যদি আমাদের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করে, তবে এসব বিষয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে, ইনশাআল্লাহ।

সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, নায়েবে আমির সাবেক এমপি মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আজাদ, আবদুল হালিম, এডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল ও এড. এহসানুল মাহবুবু জুবায়ের,কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এড. মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মো.ইজ্জত উল্লাহ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মো. সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

Scroll to Top