মিয়ানমারের অভ্যন্তরে আরকান আর্মি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের কারণে আতঙ্ক কাটেনি বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারীদের। দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা প্রবেশ করছে বাংলাদেশে। সবশেষ আজ বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের দুই ’বিজিপি সদস্য সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
বৃহস্পতিবার ৮ ফেব্রুয়ারি দিনব্যাপি সীমান্তের এপার থেকে গুলির শব্দ শোনা গেছে। তবে অন্যদিনের তুলনায় কিছুটা কম। ঘুমধুম সীমান্ত থেকে বৃহস্পতিবার সকালে একটি পরিত্যক্ত মর্টারসেল উদ্ধার করে বিজিবি।
সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার দুই বিজিপি সদস্য বাংলাদেশ অনুপ্রবেশ করেছে। এ নিয়ে মিয়ানমারের ৩৩০ জন বিজেপি সদস্য বাংলাদেশের অনুপ্রবেশ করল। ঘুমধুম সীমান্তের আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ১০০ জনকে টেকনাফে স্থানান্তর করা হয়েছে। সীমান্তে বসবাসকারীরা এখনো বাড়ি ঘরে ফিরেনি। কৃষকরা যেতে পারেনি তাদের চাষের জমি দেখতে। এপারে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে। সীমান্তের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি। ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে টেকনাফ সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ চলাচল।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দখল নিয়ে সেই দেশের সেনাবাহিনী ও আরকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ চলে আসছে অনেকদিন ধরে। সাম্প্রতিক সময়ে এটি চরম আকার ধারণ করে। আরাকান আর্মি সেনাবাহিনীর এক একটি ক্যাম্প দখল করে নিচ্ছে। ওপারের মর্টারসেল এসে নারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে বিজেপির মহাপরিচালক বুধবার বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত এলাকার পরিদর্শন করেছেন।

বৃহস্পতিবার সকালে ও দুপুরে ওপার থেকে বেশ কিছু গুলির শব্দ শোনা যায় বলে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান।
নাইকংছড়ির নয়াপাড়া সীমান্তের বাসিন্দা আব্দুল আজিজ জানান, বৃহস্পতিবার সকালে হালকা কিছু গুলির শব্দ শোনা গেছে।
টেকনাফের হোয়াইক্য এলাকার বাসিন্দা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, সকালেও দুপুরে হালকা গুলির আওয়াজ পেয়েছি।
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন বলেন, আমার এলাকার মানুষ এখনও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী ঘরের মানুষগুলো এখনো তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাসা বাড়িতে রয়ে গেছে।
সীমান্তের রহমতের বিল এলাকার বাসিন্দা মৌলানা আব্দুর রহমান বলেন, পরিবার-পরিজন নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে টেকনাফে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছি। সীমান্ত পরিস্থিতি আরও ভালো হলে তাহলেই বাড়িতে ফিরব।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, সীমান্ত এলাকার মানুষের মাঝে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।
বিজিবির কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার উপ-মহাপরিচালক কর্নেল মেহেদী হোসেন কবীর জানান, বৃহস্পতিবার ভোররাতে উলুবনিয়া সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের দু’জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে ৩৩০ জন বিজিপিসহ নানা সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি নয়াপাড়া এলাকা থেকে একটি পরিত্যক্ত মর্টারসেল উদ্ধার করা হয়েছে। ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১০০ জন মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ সদস্যকে টেকনাফের নীলা এলাকার একটি স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ডিজে মহোদয়ের সীমান্ত এলাকার পরিদর্শনের পর আমাদের যে নির্দেশনা দিয়েছেন আমরা সেই নির্দেশনামতে কাজ করে যাচ্ছি। কোন রোহিঙ্গা যাতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবি সদস্যরা।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, সীমান্ত পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে শনিবার থেকে সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ চলাচল। তবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে জাহাজ চলাচল করতে পারবে বলেও জানান তিনি। পরে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও জানান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।