জুমবাংলা ডেস্ক : আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। প্রতিবছরই বিশাল অঙ্কের ঘাটতি বাজেটে। দেশি-বিদেশি উৎস থেকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ঋণ। সমস্যা সমাধানে সরকারের লক্ষ্য রাজস্ব আদায় বাড়ানো। তবে এখন পর্যন্ত সেই লক্ষ্য থেকে বহুদূরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
আয়কর রিটার্নে গতি নেইসফল ক্যাম্পেইন ও ব্যাপক প্রচারের ফলে অনলাইনে রিটার্ন জমা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লেও মোটের ওপর সেই সংখ্যা ২১ লাখ ২০ হাজার। এর মধ্যে অনলাইনে রিটার্ন জমা পড়েছে সাত লাখ আট হাজার ৬৯২টি। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সাধারণত ব্যক্তি শ্রেণির আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ৩০ নভেম্বর। তবে প্রতিবছরই নির্ধারিত সময়ের পর আরো সময় বাড়ানো হয়। চলতি বছরও রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় এক মাস বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন জমা পড়েছে ২১ লাখ ২০ হাজার।
৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ১৯ লাখ ৫০ হাজার ২০৮। সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী ২১ লাখ রিটার্ন জমা পড়লেও এর আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ৩৬ লাখ ৬২ হাজার। তার এক বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ ২৮ হাজার।
রাজস্ব আদায় ও কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারি-বেসরকারি ৪৪টি সেবা নিতে গেলে রিটার্ন জমার সনদ বাধ্যতামূলক করেছিল এনবিআর। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারি-বেসরকারি ৩৮টি সেবা নিতে গেলে রিটার্ন জমার সনদ বাধ্যতামূলক ছিল।
পরে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আরো ছয়টি সেবার বিপরীতে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। মূলত এ কারণেই হু হু করে বেড়েছে রিটার্নদাতা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আরো তিনটি নতুন খাত যুক্ত করা হয়েছে। এই কৌশলে রিটার্ন জমার সংখ্যা বেড়েছে।
রিটার্ন জমাকারীর সংখ্যা বাড়লেও দেশে বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির জেরে সক্ষমতা হারিয়েছেন অনেক করদাতা। আলোচ্য সময়ে স্বাভাবিক রিটার্নদাতার সংখ্যা বাড়লেও সক্ষম করদাতার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি।
বিভিন্ন কর অঞ্চল ঘুরে করদাতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির জেরে রির্টান জমায় ভাটা পড়েছে। করদাতারা সংসারের লাগাম টানতেই হিমশিম খাচ্ছেন। প্রকৃত আয় ক্রমেই কমে যাওয়ায় করদাতাদের মধ্যে অস্বস্তি কাজ করছে। সরকার মূল্যস্ফীতি কমানোর নানা উদ্যোগ নিলেও তা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কোনো প্রভাব পড়েনি। বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারকে দৃশ্যমান ও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহবান তাদের।
রিটার্ন দাখিল কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একাধিক আয়কর কর্মকর্তা বলেন, জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধি পাওয়া আশানুরূপ রিটার্ন না পড়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধাভোগী অনেক করদাতা এখন দেশের বাইরে। অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, অনেকে আবার প্রকাশ্যে নেই। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতিও স্বাভাবিক গতি পায়নি। এর প্রভাব পড়েছে রিটার্ন দাখিলে।
সময় শেষ হওয়া নাগাদ কেমন রিটার্ন পড়তে পারে জানতে চাইলে তারা জানান, সাধারণত শেষ সময়ে রিটার্ন বেশি পড়ার একটা প্রবণতা থাকে। অনেকে অনলাইনে রিটার্ন দেবেন নাকি আয়কর অফিসে গিয়ে রিটার্ন দেবেন—এ নিয়েও দোটানায় আছে। তবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সবাই রিটার্ন জমা দেবেন বলে আশা তাদের।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এনবিআরকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাড়তি ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আয়কর আদায় করতে হবে।