‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানের শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় না ফেরার দেশে – DesheBideshe

‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানের শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় না ফেরার দেশে – DesheBideshe


‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানের শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় না ফেরার দেশে – DesheBideshe

কলকাতা, ১৫ ফেব্রুয়ারি – বাংলার সংগীত জগতের অন্যতম তারকা শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় প্রয়াত হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। অন্ত্রের অস্ত্রোপচারের পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন এই প্রবীণ শিল্পী। সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে কলকাতা শেঠ শুকলাল কর্নানি মেমোরিয়াল হাসপাতালে (এসএসকেএম) ভর্তি হয়েছিলেন।

গত সোমবার ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে তার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হলে তাকে আইটিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। সেখানেই আজ শনিবার ১৫ ফেব্রুয়ারি সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন দুই বাংলার জনপ্রিয় এই গায়ক।

প্রতুল মুখোপাধ্যায় চোখের দেখায় আর ধরা দেবেন না বটে, তবে তিনি চিরকাল প্রাসঙ্গিক হয়ে রইবেন বাংলা ও বাঙালির কাছে। যতদিন বাংলার কৃষ্টি থাকবে, পরিচয়ের অহংকার থাকবে ততদিন থেকে যাবে তার গাওয়া ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানের আবেদন।

প্রতুল মুখোপাধ্যায় বাংলাদেশ ভালোবাসতেন। সুযোগ পেলেই এখানে ছুটে আসতেন। এই দেশে গেয়েছেন বহুবার। দেশটার প্রতি তিনি পরম মমতা অনুভব করতেন। কারণ সেই মমতা তার জন্ম থেকে পাওয়া। ১৯৪২ সালে ২৫ জুন বাংলাদেশেরই বরিশালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্রতুল। তার বাবা প্রভাতচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক।

স্ত্রী বাণী মুখোপাধ্যায় ও সন্তান প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে দেশ ভাগের পরে পদ্মাপার ছেড়ে গঙ্গাপাড়ে চলে আসেন তার প্রভাত চন্দ্র মুখোপাধ্যায়। এপার বাংলায় আসার পর তারা থাকতে শুরু করেন চুঁচুড়ায়। সেই থেকে তিনি এপারের বাঙালি। তবে তিনি বাঙালি পরিচয়টাকেই বড় করে দেখেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মানচিত্রের দেয়াল টপকে। ছোট্ট বয়সে দেশভাগের যাতনা তার হৃদয় সইতে পারেনি। সেই তাগিদ থেকেই হয়তো তিনি গেয়ে গেছেন, ‘দুইজনাই বাঙ্গালি ছিলাম / দেখ দেখি কান্ডখান / তুমি এখন বাংলাদেশি / আমারে কও ইন্ডিয়ান…/

ছোট থেকেই কবিতায় সুর দিতেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। কবি মঙ্গলচরন চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি ধান কাটার গান গাই’ কবিতা দিয়ে শুরু।

জীবনের প্রথম অ্যালবাম ১৯৮৮ সালে প্রকাশ হয় ‘পাথরে পাথরে নাচে আগুন’ নাম নিয়ে। সেটি একক অ্যালবাম ছিল না তার। অন্য শিল্পীদের সঙ্গে মিলে কাজ করতে হয়েছিল প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে। ১৯৯৪ সালে প্রকাশ হওয়া ‘যেতে হবে’ তার প্রথম একক অ্যালবাম। তার শেষ অ্যালবাম ২০২২ সালের ‘ভোর’।

নিজে গান লিখলেও তিনি প্রথাগত কোনো সংগীতশিল্পী ছিলেন না। ২০০টির মতো গান রচনা করেছেন কিংবদন্তি প্রতুল।

অধ্যাপনা থেকে অবসরকাল জীবনের শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে গিয়েছেন ভাষার প্রতি তার অজন্মলালিত ভালোবাসা প্রকাশ করতে। বাংলা ভাষা তার কাছে ছিল দীপ্ত স্লোগান ক্ষিপ্ত তীর ধনুকের মতো। সেই বাংলায় তৃপ্ত চুমুক দিয়ে চিরবিদায় নিলেন সবার প্রিয় প্রতুল।

এনএন/ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫



Scroll to Top