‘আমার বুলডোজার কখনও সাধারণ মানুষের বিপক্ষে দাঁড়াবে না’ | চ্যানেল আই অনলাইন

‘আমার বুলডোজার কখনও সাধারণ মানুষের বিপক্ষে দাঁড়াবে না’ | চ্যানেল আই অনলাইন

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

সম্প্রতি চ্যানেল আইয়ের ‘টু দ্য পয়েন্ট’ অনুষ্ঠানে আসেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। খাল এবং সরকারি সম্পত্তি দখলদারদের উচ্ছেদ, সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করা, নগর পরিকল্পনায় জনগণের অংশিদারিত্ব নিশ্চিতসহ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে তার নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ইতিমধ্যে ব্যপক প্রসংশিত হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক হিসেবে কাজ করা একই সাথে সামনের দিনে নগর উন্নয়নের নানান চ্যালেঞ্জ বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হন তিনি। এবারের আয়োজনে ঢাকা মহানগরের পরিকল্পনা, পদক্ষেপ এবং চ্যালেজ্ঞ গুলো নিয়ে মোহাম্মদ এজাজ এর সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হলো।

প্রশ্ন: প্রথমেই প্রশংসা জানাই, ঈদের সময় আপনারা যে উদ্যোগগুলো গ্রহণ করেছিলেন, তার পাশাপাশি পহেলা বৈশাখে অনেকগুলো মেলা করেছেন। এই নগরীর মানুষ একটু স্বস্তি পেয়েছে। বর্তমানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মানুষের জন্য আপনারা কী কী উদ্যোগ নিচ্ছেন? একই সাথে জানতে চাই, আপনি অনেকগুলো গণশুনানি করেছেন। এর বাস্তবায়ন কবে শুরু হবে, কবে দেখতে পাব, গণশুনানিতে আসলে কী আছে?

মোহাম্মদ এজাজ: ধন্যবাদ আপনাকে। এই গণশুনানিটার যে কনসেপ্ট, সেটা হচ্ছে যেহেতু অনেকদিন ধরে জবাবদিহিতার কোনো কালচার ছিল না ঢাকা শহরে। স্থানীয়ভাবে, মানে ওয়ার্ডগুলোতে কী পরিমাণ উন্নয়ন চলছে, আদৌ রাস্তা কেটে রেখে দেওয়া হয়েছে, এটা কবে মেরামত হবে, এই রাস্তায় মেটেরিয়াল কী হবে, ইভেন দরকার আছে কিনা এই প্রশ্নগুলো আগে কখনো করা হতো না।

রাস্তা বহু তৈরি হয়েছে, ইনফ্রাস্ট্রাকচার গড়ে উঠেছে। যেগুলোর কখনো জবাবদিহি করা হয়নি। কোনো ট্রান্সপারেন্সি ছিল না। কত টাকা খরচ হলো, কেন এত টাকা খরচ হলো এই প্রশ্নগুলো কিন্তু পত্রিকায় বিভিন্ন সময় সফট আকারে এসেছে। কিন্তু আমরা মনে করি, এই সকল কিছুতেই এক ধরনের সিটিজেন পার্টিসিপেশন এবং সিটিজেনদের প্রতি একাউন্টেবিলিটি, ট্রান্সপারেন্সি থাকা উচিত।

যেহেতু আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আমি মনে করি, আমার কাজটা হবে একধরনের গণতান্ত্রিক নগরায়ন। গণতান্ত্রিক নগরায়নের প্রথম ধাপ হচ্ছে, পার্টিসিপেটরি ওয়েতে সিদ্ধান্ত নেয়া। আমরা তাই করবো। মানুষজন বলবে, তার কী লাগবে, সে কী চায়, তার ভোগান্তি কোথায়, তার চাওয়াটা কোথায়। এই সব মাথায় রেখেই আমরা গণশুনানি আয়োজন করেছি।
আমাদের ১০টি জোন আছে। ১০টি জোনে, আমরা আগে ঘোষণা করি আপনারা সকলে আসবেন। বাড়ির মালিক সমিতি থেকে শুরু করে, ছাত্র, গৃহিণী, যারা চাকরি করেন, বিভিন্ন পেশার লোকজন তারা আসেন এবং তারা তাদের ওপেন প্রশ্ন করেন। মানে, স্থানীয় যে প্রবলেমগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে সরাসরি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, জবাবদিহি করেন। এটা কেন হলো না, কতদিন লাগবে, সরাসরি এ প্রশ্নগুলো এগুলো আমাদের বলেন।

আমাদের একটা পুরো গ্রুপ থাকে, যারা পুরো আলোচনাটি পরিচালনা করে। এই সেশনগুলো চলে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। দেড় ঘণ্টার নিচে বা দুই ঘণ্টার নিচে কোনো সেশন হয়নি।

প্রশ্ন: কিন্তু সমস্যা তো অসংখ্য। যদি ১০০ জন জনগণ হয়, তাহলে হয়তো ৩০০ সমস্যার কথা তারা বলেন। এই অসংখ্য সমস্যার সমাধান কীভাবে করবেন?

মোহাম্মদ এজাজ: কমন প্যাটার্ন আমরা পেয়েছি। এখন পর্যন্ত আপনাকে বলি, একটা প্যাটার্ন হচ্ছে — ইনফ্রাস্ট্রাকচার নাই। মানে, রাস্তা নাই, ঘাট নাই, রাস্তাগুলো ঠিক করা হচ্ছে না। আরেকটা হচ্ছে মেইনটেনেন্স নাই। আমি আপনাকে ক্যাটাগরি করে বলি, কী ধরনের সমস্যা পাচ্ছি। সেটা হচ্ছে প্রচুর রাস্তা কাটা হয়েছে। আপনারা দেখেছেন, ওয়াসার একটা বড় ইনফ্রাস্ট্রাকচার চেঞ্জ হয়েছে কিছুদিন আগে।

ঢাকা শহরের প্রতিটি অলিতে-গলিতে কিন্তু নতুন ওয়াসার লাইন বসেছে। ওয়াসার এই কাটাকাটির কারণে ঢাকা শহরের কোনো রাস্তা এখন আর ঠিকঠাক নেই। অবকাঠামো, এছাড়া বৃষ্টি, গেল দুইটা বর্ষা, তার আগে আওয়ামী লীগ আমলের উন্নয়নের নামে যে এলোকেশন, সেগুলো নিয়েও অনেক ধরনের বৈষম্য তৈরি হয়েছে।

এর সাথে পাবলিক হেলথ রিলেটেড অনেক প্রশ্ন আছে — ময়লা, ধুলা, দূষণ। তারপরে হচ্ছে ওষুধ ছিটানো, মশা। এছাড়াও আরও কিছু নাগরিক বিড়ম্বনা আছে।

আমি উদাহরণ দেই। কিছু কিছু হাউজিং এলাকায় মানুষজনকে দিনের বেলায় রাস্তা দিয়ে চলতে দেয়া হয় না। গেট দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। যেহেতু তারা এলাকা বা রাস্তাটা বাড়ির মত দখল করে, সেসব রাস্তাগুলোতে মানুষের মোবিলিটি বন্ধ করে দিচ্ছেন। উত্তরার মত কিছু হাউজিং সোসাইটিতে রাত ১০টার সময় গেট বন্ধ করে দেন। তো যারা ভাড়াটে আছেন, অসুস্থ রোগী আছেন, তারা বাসা থেকে বের হবেন কীভাবে? অ্যাম্বুলেন্সে যাবেন কীভাবে? এগুলো তো বড় সমস্যা।

প্রশ্ন: আপনি সমস্যার কথা বললেন। যদি সমাধানের কথা বলি, বলা হয় যে বর্ষাকাল আসলেই আমাদের ঢাকা নগরীতে অনেক সমস্যা তৈরি হয়। বর্ষাকাল এলেই ঢাকা শহরে রাস্তা খোড়াখুঁড়ি শুরু হয়। এ বছর কী পরিমাণে খোড়াখুঁড়ি হবে? এবছরের মেইন রাস্তাগুলোতে অলরেডি খোড়াখুঁড়ি চলছে।

মোহাম্মদ এজাজ: জি, এটা বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে। আপনি যদি মেইন রোড, ধানমন্ডি থেকে মিরপুরের যে রোডটা, মিরপুর রোড বলি, সেটা তো অর্ধেক করে ফেলা হয়েছে অলরেডি।

প্রশ্ন: তাহলে জনগণের চলাচল নিশ্চয়ই ব্যাহত হচ্ছে।

মোহাম্মদ এজাজ: ডেফিনেটলি, এখানে জ্যাম তৈরি হয়েছে। ধানমন্ডিতে একটা বড় জ্যাম ছিল কিছুদিন আগে। এটা আমার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল এবং তারা অলরেডি কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছে। আমি গতকাল গিয়েছিলাম। আর অল্প একটু বাকি আছে।

এটা খোঁড়াখুঁড়ি একদিকে শেষ হবে, আরেকদিকে ভরাট করে দিব। আমরা বলেছি, এপ্রিল-মে মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে ঢাকা শহরের, মানে আমাদের অংশের, যত মেইন রোডের কাটাকাটি আছে এবং ভিতরের যে রিপেয়ারিং ওয়ার্ক আছে, যেগুলো এখন শুধু কার্পেটিং করলে ঠিক হয়ে যাবে, তা কমপ্লিট করে দিব।

প্রশ্ন: ফুটপাথ দখল নিয়ে কী করবেন? আমরা শুনতে পাচ্ছি মিরপুরে আপনারা উচ্ছেদ অভিযান করবেন। উচ্ছেদ অভিযান তো অনেক সময় হয়, পরে টেকসই হয় না।

মোহাম্মদ এজাজ: এখানে দুটো বিষয় আছে। আমরা সাধারণ মানুষের বিপক্ষে না। এটা প্রথম কথা। আমার যেই কাজের অভিজ্ঞতা, যেই প্রোফাইল, আমি সারাজীবন কাজ করেছি জেলেদের নিয়ে, মাঝিদের নিয়ে, বস্তিবাসীদের নিয়ে। যারা ইনফরমাল সেটেলারে থাকেন, তাদের অধিকার নিয়েই আমার ক্যারিয়ার বেড়ে ওঠা। সুতরাং আমার বুলডোজার কখনো সাধারণ মানুষের বিপক্ষে দাঁড়াবে না। এটা সম্ভবও নয়।

আপনি জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি বস্তিবাসীর বস্তি ভাঙছি কিনা? আমি কোনো বস্তি ভাঙছি না। প্রথম বিষয় হলো, ভাঙার প্রশ্নই ওঠে না। আমি প্রথম মিটিং সিটি কর্পোরেশনে নেওয়ার পর যেটা করেছি — সেটা ছিল ঢাকার বস্তিবাসীদের নেতৃবৃন্দদের নিয়ে। আমাদের একটা এক্সপার্ট এডভাইজরি কমিটি আছে। সেখানে আমাদের এক বন্ধু আছেন। উনি করাইল বস্তিতে থাকেন। আমাদের যে এক্সপার্ট কমিটি আছে, সেখানে উনি সদস্য। সুতরাং, চেতনা হচ্ছে — এই এক্সপার্ট কমিটির মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। আমার কোনো কাজ স্বাভাবিকভাবেই শহরের বস্তিবাসীদের বিরুদ্ধে যাবে না। বুলডোজার যাচ্ছে, যাবে — অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে। অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে।

প্রশ্ন: আপনি কি হিট অফিসার নিয়োগ করেছেন? করবেন? শুধু গাছ লাগাবেন?

মোহাম্মদ এজাজ: না, হিট অফিসার সিটি কর্পোরেশনের কোনো অফিসিয়াল পোস্ট না। এটা অন্য একটি ফাউন্ডেশন থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সেই নিয়োগ নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয়েছে, বিতর্কও হয়েছে। সেটা নিয়ে অন্য একদিন আলোচনা করবো।

প্রশ্ন: তাহলে শহরের হিট ম্যানেজমেন্ট করবেন কী করে?

মোহাম্মদ এজাজ: আরবান হিট কিভাবে ম্যানেজ করবো, সেটা একটা অনেক বড় ব্যাপার। আরবান হিটকে ম্যানেজ করার জন্য আমরা একধরনের অনেকগুলো স্টাডি করেছি। আমরাও কিছু হিট স্টাডি করেছি। করে আমরা যেটা দেখলাম, সেটা হচ্ছে, ছোট ছোট গাছগুলো লাগানোর ফলে গ্রাউন্ড কাভারেজ এবং গ্রিন কাভারেজ কমে গিয়েছে। গত দেড় বছরে শুধু দুই সিটি কর্পোরেশন মিলে ১৭০০ গাছ কেটেছে, লাগানো তো দূরের কথা। এটা আমার রিপোর্ট। তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না, কিন্তু রিপোর্টটা আমি করেছিলাম। সেক্ষেত্রে আমরা এই সিটি কর্পোরেশন এলাকা এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাইরেও, যেমন দিয়াবাড়ি, পূর্বাচল — আমরা রাজুকে অনুরোধ করেছি আমাদেরকে দেবার জন্য। এবং তারা রাজি হয়েছেন, চিঠিও দিয়েছেন আমাদেরকে। সুতরাং, পুরো ঢাকার ভিতরের পাবলিক স্পেস, ওপেন স্পেস, মাঠ, মিডিয়ান এবং অন্যান্য জায়গাগুলোতে আমরা এবার বড় গাছ লাগাবো। যে গাছগুলো ছায়া দিতে পারবে। ছোট গাছ কিছুদিন পর নষ্ট হয়ে যায়, অথবা ছাগলে খেয়ে ফেলে। ঢাকায় লিটারেলি ছাগল নাই, কিন্তু অন্য ছাগলরা খায়, আর কি! এটাকে দ্বিতীয়বার টেন্ডারিং করার যারা আছে, তারা এগুলোকে খায়। সে কারণে গাছ নিয়ে এক ধরনের বড় বাণিজ্য হয়। এবার আমরা একধরনের স্থায়ীভাবে এরকম বড় গাছ লাগাবো, যেগুলো তুলে নিয়ে যাওয়া কিংবা মেরে ফেলাটা কঠিন। বড় এবং ছায়া দেবে। গ্রিন কাভারেজটা অনেক বড় হবে।

এর সাথে ঢাকায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার খাল নেটওয়ার্ক নতুন এবং পুরনো স্ক্যান করে রেডি করা হয়েছে। এখন পানির লেভেল বেড়েছে, পানি পরিষ্কার হয়েছে, ফ্লো আছে। দুই পাশে ২০০ কিলোমিটার, মানে মোট ৪০০ কিলোমিটার গ্রিন কাভারেজের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। নিউ অ্যাভিনিউ, যেটা খালের পাড়ে, সেখানে আমরা পুরো গ্রিনিং করবো। এতে ঢাকা শহরের হিট কিছুটা কমবে। আরবান হিটের ক্ষেত্রে আমরা গ্রিন ক্যাম্পেইন করছি। পুরো ঢাকায় গ্রিন কনভারেজ করবো।

ফাইল ছবি

এই বর্ষাটাকে আমরা অ্যাডভান্টেজ হিসেবে নিচ্ছি। আমরা বাংলাদেশের সব গ্রিন অ্যাক্টিভিস্ট, ইউথ অর্গানাইজেশনদের আহ্বান করেছি। আমরা গাছ দেব, লাগানোর ব্যবস্থা করব, মেইনটেন্যান্সের ব্যবস্থাও করব। মালির খরচ, ভলান্টিয়ারদের মিনিমাম খরচ আমরা দিব। জয়েন্টলি কাজ হবে। আর রাস্তায় প্রচুর ডাস্ট ওড়ে। সেটাকে জিরো সয়েলিং করবো। ঘাস লাগাবো, খালের পাড়ে গাছ লাগাবো, মিডিয়ানে গাছ লাগাবো। আমরা বন বিভাগের সাথে চুক্তি করেছি। বন বিভাগ দীর্ঘসময় টেকনিক্যাল এবং ফিজিক্যাল সাপোর্ট দেবে। বন বিভাগের গাছ আমরা নিচ্ছি, পেমেন্ট করব, বন বিভাগ সাথে থাকবেন। আরবান এরিয়াতে আরবান ফরেস্ট্রি ও গ্রিনিং বন বিভাগ করবে। ইয়াংরাও কাজ করবে। এই ক্যাম্পেইনে একটি রাষ্ট্রীয় সংস্থা আমাদের সাথে থাকবে।

প্রশ্ন: তাহলে আমরা আগামী বর্ষায় বেনিফিট পাব?

মোহাম্মদ এজাজ: না, আগামী বর্ষা লাগবে না। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বেনিফিট পাবেন। এত দেরি লাগবে না। দ্বিতীয় কাজ হলো প্রাথমিকভাবে ২৫টি জায়গায় (টার্গেট ৫০টি) এয়ার পিউরিফায়ার বসাবো। স্পনসরশিপ পেয়েছি। একেকটা ডিভাইসের দাম প্রায় ৭০ লাখ টাকা। এটা এয়ার পিউরিফাই করবে, কিছুটা কুলিং দেবে। পাবলিক স্পেসে বসানো হবে। এতে আমাদের কোনো টাকা লাগবে না, প্রাইভেট সেক্টর দিচ্ছে, তাদের এডভারটাইজমেন্ট কস্টিং হিসেবে। ঢাকাবাসীর জন্য এটা বায়ুদূষণ ও হিট কমাতে সাহায্য করবে। দ্রুত ইনস্টল হবে। পাইলট বেসিসে আরেকটি কাজ হবে। আপনারা মিডল ইস্ট বা জাপানে দেখেছেন, প্রচণ্ড গরমে স্প্রিংলার মিস্ট ছিটানো হয়। আমরা কিছু স্পটে স্প্রিংলার সেট করবো। আগে রাস্তায় পানি ছিটানো হতো সামান্য লাভ হতো। এখন স্প্রিংলার লাগানো হবে। যদি কিছু মানুষের উপকার হয়, তাহলে সেটা করবো। আপনারা জানেন গত দুই দিন ধরে বড় একটা আন্দোলন হয়েছে ড্রিঙ্কিং ওয়াটার ফ্যাসিলিটির জন্য। এক বোতল পানির দাম ২০ টাকা, গরীবরা কিভাবে কিনবে? তাদের জন্য আমরা ড্রিঙ্কিং ওয়াটার ফ্যাসিলিটির ব্যবস্থা করবো।

প্রশ্ন: এই সমস্ত কার্যক্রম করার জন্য নিশ্চয়ই অনেক টেন্ডার করতে হয় আপনাদের। আমরা জানি যে উত্তর সিটি কর্পোরেশন যেহেতু অনেক কাজ করে এবং অনেক টাকা পয়সার লেনদেন হয়। এই টেন্ডারের সঙ্গে টেন্ডারবাজি শব্দটা আসে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নাম আসে, এগুলোকে কিভাবে মোকাবেলা করবেন?

মোহাম্মদ এজাজ: এটা কঠিন প্রশ্ন। কঠিন প্রশ্ন এই কারণে যে আমার তো আড়াই মাস হলো। আড়াই মাসে আমি যেটা বুঝলাম, সেটা হচ্ছে এখানে আগে একটা সিন্ডিকেট ছিল। কোন কোন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে কারা কারা লিয়াজ করতে চাচ্ছে, এটা স্পষ্ট। কারণ, সরকারের যে পিপিআর, সেই প্রকিউরমেন্ট নীতিমালা এত কঠিন করে করা হয়েছিল এবং এতে শুধু কয়েকটি অর্গানাইজেশন কোয়ালিফাই করতো। আমরা দেখেছি, এই কয়েকটি অর্গানাইজেশন, আল্টিমেটলি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠান। ফ্যাসিবাদী প্রতিষ্ঠান এখনো আছে তারা। আমি যাওয়ার পর বলেছি, এরা যেন কোনোভাবে এখানে ঢুকতে না পারে এবং সবাই যেন পার্টিসিপেট করতে পারে, সেটা একটা ব্যবস্থা করতে হবে। সেটা করতে গেলে তো পিপিআর চেঞ্জ করতে হবে। এটার জন্য আমরা অলরেডি চিঠি দিয়েছি। প্রথমদিকে সরকার পরিবর্তনের পরে, আমার আগে হাসান সাহেব ছিলেন, উনি একটা বড় ধাক্কা পেয়েছেন, যখন লোকজন ঢুকে ক্যাম্পাস দখলের মতো প্রভাব বিস্তার করেছিল।

এই ধাক্কাটা প্রথমদিকে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারাই খেয়েছেন। আমি গিয়েই প্রথম দিন বলেছি, অফিসে যদি কেউ রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে আসে, আমি কথা বলবো না। একদম ফ্র্যাঙ্কলি বলছি। আমি প্রথমে দেখি, আমার ছবির পাশে কোন রাজনীতিক নেতার ছবি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়ে একটি পোস্টার টানানো হয়েছে। আমি দাঁড়িয়ে থেকে সেটা খুলেছি। পরে বিভিন্ন ফ্লোরে যত রাজনৈতিক পোস্টার দেখেছি, সব খুলিয়েছি। আমি সবাইকে পরিষ্কার করে দিয়েছি, যদি কেউ রাজনৈতিক পরিচয়ে আসে, আমি দেখা করবো না বরং সিটিজেন হিসেবে এলে আমি প্রেফার করবো। এটা আমি প্র্যাকটিস করছি।

আপনি খবর নিলে দেখবেন, আমি রাজনৈতিক বায়াস রাখতে চাই না, তবে এই চাপটা আছে, আমি এটা অস্বীকার করবো না। এখন যারা বাংলাদেশে সক্রিয় রাজনীতি করছেন, তাদের বিভিন্ন লেভেল থেকে মাঝে মাঝে আমাকে রিকোয়েস্ট করা হয়। যেহেতু আমরা বুলডোজারের কথা বলছিলাম, বুলডোজার দিয়ে তো বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা ভাঙতে হয়, রাস্তা পরিষ্কার করতে হয়, তখন বিভিন্ন ফোন আসে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকেই ফোন আসে। আমার অফিসে আমি রিকোয়েস্টের ফোন শুনি, রেখে দিই, কিন্তু কিছু করি না। বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কথা বললে বুঝতে পারবেন, টেন্ডারের তিনদিন আগে ও পরে আমার বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যা কমে যায়। টেন্ডারের তিনদিন আগে ও পরে আমি কারো ফোন ধরি না। কারণ, এত

আননেসেসারি ফোন কল আসে, এত রিকোয়েস্ট আসে, এজন্য আমি ফোনই ধরিনা। হাইকারখালের দখল উচ্ছেদ নিয়েও ফোন এসেছিল। গত পরশুদিন মিরপুরে একটি রাস্তা দিনের বেলা গেট দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। রাস্তা তো পাবলিকের, গেট দিয়ে রাস্তা বন্ধ করা যাবে না। আমরা দুটো গেট ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভেঙে দিয়েছি। ভেঙে দেওয়ার কারণে স্থানীয় লোকজন খুশি হয়েছেন, কিন্তু কিছু বাড়ির মালিক, যারা রাস্তা দখল করে রেখেছিলেন, তারা আমাকে বলছেন আমি নাকি গরীবের মেয়র, বস্তির মেয়র। যদিও আমি মেয়র নই, এডমিনিস্ট্রেটর, তবে মেয়রের দায়িত্বে আছি। তারা বলছে, আমাদের বাড়িঘর বস্তিবাসীদের দিয়ে দিন, আমরা এই শহর ছেড়ে চলে যাব। দিনের বেলায় রাস্তাও তাদের দখলে রাখতে দিবেন, এটা তো হতে পারে না। গেট না ভাঙার জন্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের রেফারেন্স দিয়ে আমাকে ফোন করা হয়েছে, এক্স-আর্মি অফিসারের নাম ব্যবহার করে ফোন করা হয়েছে, বড় রাজনৈতিক নেতারাও সরাসরি রিকোয়েস্ট করেছে। আমি বলেছি, এটা সাধারণ মানুষের অধিকার, ন্যায্যতার প্রশ্নে আমি আপোষ করবো না।

কিছু গুটি কয়েক মানুষের সুবিধার জন্য পুরো শহরকে নষ্ট করা যাবে না। আবার কখনো কখনো বলা হয়, আমি নাকি গরীব হটাচ্ছি, বড়লোকদের তোষণ করছি। এটা আসলে একটা মিসইনফরমেশন। টেসলা ইস্যুতে যদি বলি, ঢাকায় ব্যাটারি চালিত রিকশা তো অবৈধ। গত পাঁচ তারিখের পরে ঢাকার চারপাশে অগণিত রিকশা ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাক্টরি হয়েছে। চার্জিং পোর্ট তৈরি হয়েছে। আমরা দুই সিটি কর্পোরেশন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং ইউনুস স্যারের একজন স্পেশাল এনভয়ের মাধ্যমে একটা হাই লেভেল কমিটি করেছি। আমরা ডিসিশন নিয়েছি, বৈধ মোটরচালিত যানকে লাইসেন্স দেব। ধীরে ধীরে আমরা অবৈধ রিকশাগুলো ফেজ আউট করবো। ট্রেনিং এর জন্য ব্র্যাকের সাথে কাজ চলছে, প্রোটোটাইপ বুয়েট থেকে ডিজাইন করা হয়েছে, দু-তিন দিনের মধ্যে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। বুয়েট যদি দেখে ঠিক আছে, আমরা বললেই প্রাইভেট সেক্টর উৎপাদন শুরু করবে, এবং খুব কম মূল্যে নিরাপদ বাহন পাওয়া যাবে। টেসলা রিকশায় হাত দিয়ে ব্রেক করতে হয়, তবু ঠিকমতো ব্রেক হয় না, খুবই অনিরাপদ।

আগেও যখন আমি প্রশাসক হয়েছিলাম, তখনো কিছু আলোচনা সমালোচনা হয়েছিল। তবে, আমাকে যোগ্য মনে করে সরকার নিয়োগ দিয়েছে এবং আমি কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করছি। আমিনুল ইসলামের ব্যাপারে বলি, আমরা যেহেতু একটা এক্সপার্ট কমিটি করেছি যারা আমাদের পরামর্শ দেয়, সেখানে অনেকে একমত হয়, অনেকে একমত হয় না। গণতান্ত্রিক সমাজে এটাই স্বাভাবিক। আমরা ভেবেছিলাম আমিনুল সাহেব বস্তিবাসীদের জন্য কাজ করবেন, কারণ তার সোশ্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড আছে, কিন্তু তিনি এক রাতও স্থায়ী হতে পারেননি। তিনি বলেছেন, কাজ করতে পারবেন না। হয়তো যেসব মানুষ তাকে সমালোচনা করেন, সেটাই তিনি মেনে নিতে পারেননি। এই সমাজে আলোচনা সমালোচনা থাকবে, সেটা সাহসের সাথে মোকাবেলা করতে হবে। মুখে নয়, কাজে প্রমাণ করতে হবে। আপনাকে যদি মনে হয় আপনি সঠিক, তাহলে সেই রাইটকে ফ্যাসিস্ট না হয়ে মানুষের সাথে কনসাল্ট করে বাস্তবায়ন করতে হবে। মানুষ কাজ দেখতে চায়, কথা নয়। এখন কথা হচ্ছে, আপনি যদি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ভালোভাবে থাকতে চান, তাহলে পেশিশক্তিরও প্রয়োজন আছে। কারণ ফুটপাতে চাঁদাবাজি হয়, তাদের সাথে আপনাকে প্রতিযোগিতা করতে হয়। রাষ্ট্রের চেয়ে বড় কেউ নয়। রাষ্ট্র চাইলে কালকেই আইন প্রয়োগে পুলিশ, আর্মি নামিয়ে দিতে পারে, তবে বাস্তবে তা সম্ভব নয়। সুতরাং ফুটপাত দখল, চাঁদাবাজি কমাতে হবে ফেস বাই ফেস করে। মুখে বলে একদিনে সম্ভব নয়। হয়তো এক কিলোমিটার, দেড় কিলোমিটার করে ফুটপাত পরিষ্কার করতে হবে। মিরপুর ১৩ নম্বর, খিলখেত, মিরপুর ১ নম্বর, ফার্মগেট থেকে ইন্দিরা রোড দিয়ে হাঁটা আজ অসম্ভব। এটা সিরিয়াস ক্রাইসিস। প্রথমে ছোট করে শুরু করে মডেল বানাতে হবে এবং টিকিয়ে রাখতে হবে। শুধু ভেঙে রেখে গেলে হবে না।

Scroll to Top