‘আমাদের মতো এই সুন্দর দেশ আর দুটি পাওয়া যাবে না’

‘আমাদের মতো এই সুন্দর দেশ আর দুটি পাওয়া যাবে না’

রফিকুন নবী: হ্যাঁ। যেমন কামরুল হাসানেরটা তো খুব বড় একটা স্মৃতি আমার। আমি তখনো কোনো আর্টিস্টকে চিনতাম না। চিনতাম শুধু কামরুল হাসানকে।

 প্রথমে নামে চিনতাম। কারণ, ক্লাস এইটে একটা বই পাঠ্য হলো আমাদের হঠাৎ করে। ওটা র‍্যাপিড রিডারও না, সরকার থেকে একটা বই, উপহার হিসেবে না অনুদান হিসেবে স্কুলগুলোকে দিল। সেটা ছাত্রদের মধ্যে, ক্লাস এইটে বিলি-বণ্টন করেছে।

 প্রথম অফসেটে ছাপানো একটা বই, ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট ইলাস্ট্রেশন দিয়ে। ওই ইলাস্ট্রেশনের নিচে কামরুল লেখা থাকত। স্যাররা এই যে ক্লাসে বইটা বিলি করলেন—এই যে, ‘এই ছবিগুলো হলো কামরুল হাসানের। উনি কিন্তু খুব বড় আর্টিস্ট।’ ওইভাবে তাঁর নামটা আমার জানা ছিল।

 তো কচিকাঁচার মেলা আছে আমাদের দাদাভাইয়ের (রোকনুজ্জামান খান)। উনি তো আমার পড়শি। আমি কচিকাঁচাও করি নাই কখনো। কিন্তু দাদাভাই বলল, ‘তুমি ছবি দাও।’ ক্লাস এইটে তখন। বললেন,‘ছবি দাও। আমাদের আর্ট কমপিটিশন হবে।’ পরে, দিলাম। সেটা তো পুরস্কার পেল। পুরস্কার গ্রহণের একটা দিন ঠিক হলো। পুরস্কার দেওয়া হবে। সেখানে শুনলাম শিল্পী কামরুল হাসান আসবেন। আমি তো উত্তেজিত! ধারণা তো আমার ওইটা রয়ে গেছে ভেতরে, ওইটা নিয়ে বসে আছি—একটা চশমা থাকবে, একটা পাঞ্জাবি, হাড় জিরজির লোক হবে—এ রকম। তো এই হলের মধ্যে বসে আছি। ইত্তেফাকের একটাই ঘর, কচিকাঁচার ওদের ঘর। সেখানে বসে, যে দাদাভাই খুব ছোটাছুটি করছে—‘প্রধান অতিথি আসবে এখনই।’ তারপর ছুটে বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরে একজনকে নিয়ে আসল একদম হাড়জিরজিরে। সেই লোক শিল্পী, প্রধান অতিথি, এসেই উনি ডায়াসে বসিয়ে দিলেন। আমি তো দেখে অবাক হয়ে তাকিয়েছি!

 তারও পাঁচ মিনিট পরে আসলেন এই গাট্টাগোট্টা, নাক বোঁচা, এ রকম। সবাই দাঁড়িয়ে গেল। তখন আমিও দাঁড়ালাম। আগেও দাঁড়ালাম, এখনো দাঁড়ালাম। তখন দেখি, ওই ডায়াসে গিয়ে বসাল, ওই ওনার পাশে। তখন দাদাভাই উঠে বলল, ‘এই যে শোনো, আমাদের আজকের প্রধান অতিথি কামরুল ভাই, কামরুল হাসান, আমাদের শিল্পী ইত্যাদি।’

 আমি অবাক হলাম যে এ রকম একটা স্মার্ট লোক!

Scroll to Top