আইনি লড়াই চান বুয়েট শিক্ষার্থীরা, রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে ‘অটল’

আইনি লড়াই চান বুয়েট শিক্ষার্থীরা, রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে ‘অটল’

আইনি লড়াই চান বুয়েট শিক্ষার্থীরা, রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে ‘অটল’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) রাজনীতিমুক্ত চান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এজন্য তারা আইনি লড়াই চান। উপাচার্যের ওপর আস্থা পোষণ করে বুয়েট শিক্ষার্থীরা বলেছেন, তার (ভিসি) সদিচ্ছা সবসময় আমাদের পক্ষেই ছিল বলে আমরা বিশ্বাস করি। গত তিনদিনব্যাপী আন্দোলনের মধ্যে তিনি আমাদের সব ব্যাচের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেন, বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং আমাদের কথা শোনার চেষ্টা করেন। আমরা শিক্ষার্থীরা ভিসি স্যারকে এই আর্জি জানাচ্ছি, তিনি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষককে নিয়ে বুয়েট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের যে আকাঙ্ক্ষা, তা সব আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পূরণ করেন।

বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিজ্ঞপ্তি সোমবার (১ এপ্রিল) দুপুরে স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বিকেলে বুয়েটের ড. এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এ আহ্বান জানায় সাধরণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তিনজন শিক্ষার্থী সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। তারা নিজেদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেননি।

তারা বলেন, আমরা দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান ও আস্থা রাখি। তবে বুয়েট ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্বেও গত ২৮ মার্চ মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে বহিরাগত রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের আগমন এবং শোডাউনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালার লঙ্ঘন বলে মনে করি।

এ সময় বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের ইতিহাস তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। বলেন, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অনেক প্রতিষ্ঠানেই তো সংগঠন করা নিষিদ্ধ আছে। বুয়েট যদি মনে করে তারা সেটা নিষিদ্ধ করে দিতে পারে।’ ফলে বুয়েটের সব শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট প্রশাসন ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে।

রাজনীতির ছোবলে প্রাণ হারানো অগ্রজদের কথা স্মরণ করে তারা আরও বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি না থাকার আমাদের যে দাবি, তার যৌক্তিকতা নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ ও অটল। যেই ছাত্ররাজনীতি র‍্যাগিং কালচারকে প্রশ্রয় দেয়, ক্ষমতার অপব্যবহারের পথ খুলে দেয়, যার বলি হতে হয় নিরীহ ছাত্রদেরকে, তা আমাদের জন্য ভালো কিছু কখনোই বয়ে আনেনি, আনবেও না। এর চরম মূল্য হিসেবে আমরা আমাদের কেমিকৌশল- ৯৯ এর সাবেকুন্নাহার সনি, যন্ত্রকৌশল-০৯ এর আরিফ রায়হান দ্বীপ এবং সর্বশেষ তড়িৎকৌশল-১৭ এর আবরার ফাহাদকে হারিয়েছি। ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। মৌলবাদী শক্তিকেও আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দিতে পারি।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, দেশ-বিদেশের নানাপ্রান্ত হতে বুয়েটের অ্যালামনাইরাও ইতোমধ্যে ক্যাম্পাস ছাত্ররাজনীতিমুক্ত রাখার মতামতের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে একাত্মতা পোষণ করছেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজ নিজ জায়গা থেকে তারা দাবির পক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করছেন। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি পূর্ণ ভরসা ও আস্থা রাখেন। তাদের কাছ থেকেই আমরা শিক্ষাগ্রহণ করি, তারাই আমাদের প্রতিটি ক্লাসরুম প্রতিটি ল্যাবের নায়ক। প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, লেকচারার যারাই আমাদের ক্লাস নিয়েছেন, আমরা গত চার বছরে এমনটা কখনো অনুভব করিনি যে তারাও চান পুনরায় ছাত্ররাজনীতি প্রবেশ করে সেই অন্ধকার দিনগুলো ফিরে আসুক। তারা কখনোই আমাদের অকল্যাণ চাননি এবং কথনোই চাইবেনও না। তারা সবসময় শিক্ষার্থীদের পক্ষেই ছিলেন। আজ প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের বুয়েটের সব শিক্ষকদের কাছে আর্জি জানাচ্ছি, তারা যাতে এমন সঙ্কট মূহুর্তে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান।

/এমএন