ভারতীয় হিন্দী সিনেমার সর্বকালের সেরা অভিনেত্রীদের ছোট্ট তালিকায় উপরের দিকেই থাকবে রেখার নাম। প্রায় ৬০ বছর ধরে শোবিজ ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের যাদু ছড়াচ্ছেন।
আজ এই অপ্সরীতম সুন্দরীর ৭০তম জন্মদিন। কিন্তু রেখাকে দেখলে বোঝার উপায় নেই যে তার বয়স ৭০! তার সৌন্দর্যের কাছে এখনো হার মানেন হাটুর বয়সী নায়িকারা।
তবে রেখা নিজেকে সুন্দর রাখতে চলতি সময়ের ট্রেন্ড ‘ফিলার’ কিংবা ‘বোটক্স’ করেন না। তিনি পুরোটাই নির্ভর করেন হেলথি খাওয়া দাওয়া, ব্যায়াম, ডায়েট, মেডিটেশন, পরিমিত ঘুম আর নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপনের ওপর। নিজের বিশাল বাড়িতে একাই থাকেন বলা যায়। বিবাহিত জীবন সুখের হয়নি, গুঞ্জন রয়েছে ভালোবাসার মানুষকেও পাননি নিজের করে। তারপরও তিনি ব্যক্তিগত দুঃখ কষ্টকে কখনোই মানুষের সামনে আনতে দেননি।
জীবনকে দেখেন দারুণ পজিটিভ ভঙ্গিতে। ইতিবাচক মনোভাব ছড়িয়ে দেন চারপাশে। তার মতো কিংবদন্তি কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই তরুণ প্রজন্মের তারকাদের ভালো কিছু দেখলে প্রাণখুলে প্রশংসা করেন। এই গুণ খুব একটা পাওয়া যায় না।
এই কিংবদন্তি তারকার জন্মদিনে বলিউডের অনেক দামি দামী তারকারা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানা আজমী লিখেছেন, ‘একজন চুলবুলি দুষ্টু তরুণী থেকে রেখা নিজেকে একজন রহস্যময় নারীতে রূপান্তর করেছে, যা তাকে ঘিরে আকর্ষন ধরে রেখেছে সবার।’
সোনাক্ষী সিনহা লিখেছেন, ‘আমি যখন জহিরকে বিয়ে করি তখন তিনি খুব খুশি হয়েছিলেন। আমি জানি, রেখাজি কোথাও যান না। কিন্তু তিনি আমার বিয়েতে ঠিকই এসেছিলেন আমাকে ভালোবাসা দিতে।’
জাহ্নবী কাপুর তার মা প্রখ্যাত অভিনেত্রী শ্রীদেবীর সঙ্গে রেখার একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘মায়ের পর আমি রেখাজির দিকে তাকিয়ে থাকি, তিনি আমার কাজ নিয়ে কি বলেন সেটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
অস্কার মনোনয়নপ্রাপ্ত অভিনেত্রী ও নির্মাতা মীরা নায়ারের ‘কামাসূত্রা’ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন রেখা। মীরা রেখাকে নিয়ে লিখেছেন, ‘কামসূত্রা ছবিতে রেখা তার চরিত্রের মাধ্যমে এক প্রাচীন কামুকতা তৈরি করেছিলেন খুবই দৃষ্টিনন্দন ভঙ্গিতে।’
প্রখ্যাত নির্মাতা সুভাষ ঘাই লিখেছেন, ‘মেধা ও সৌন্দের্যের অপূর্ব সমন্বয়ের নাম রেখা।’
বর্ষিয়ান অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা লিখেছেন, ‘রেখা প্রতিনিয়ত নিজেকে যেভাবে উন্নত করেছেন সেটা অনবদ্য ও অনুকরণীয়।’
জনপ্রিয় অভিনেত্রী জুহি চাওলা লিখেছেন, ‘মানুষের জীবনের খারাপ সময়ে রেখাজি যেভাবে পাশে দাঁড়ান সেটা আমি আর কারও মধ্যে দেখিনি।’
সুপারস্টার অনিল কাপুর লিখেছেন, ‘রেখা একইসঙ্গে অসম্ভব সহানুভূতিশীল এবং রসবোধ সম্পন্ন নারী।’
দক্ষিণ সিনেমার সুপারস্টার নাগার্জুন লিখেছেন, ‘রেখা হচ্ছেন গ্রেস এবং স্টাইলের প্রতীক।’
প্রখ্যাত রানী মুখার্জি লিখেছেন, ‘আমার প্রতিটি খারাপ সময়ে তাকে যেভাবে পাশে পেয়েছি তা কোনদিন ভুলবো না।’
জনপ্রিয় গায়িকা নেহা কক্কর লিখেছেন, ‘রেখাজি যে ভালোবাসার শক্তি দিয়ে সবাইকে আপন করে নেন আমি প্রার্থণা করি যেন তিনি কখনোই না হারান।’
তামিল অভিনেতা জেমিনি গণেশন ও তেলেগু অভিনেত্রী পুষ্পাভ্যাল্লীর ঘরে ভারতের চেন্নাইয়ে ১৯৫৪ সালের ১০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন রেখা। তার বাবা-মা বিবাহিত ছিলেন না। শৈশবে তার বাবা তাকে স্বীকার করেননি। শৈশবেই রেখা স্কুল ছেড়ে দেন এবং অভিনেত্রী হিসেবে তার ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন বাবা-মায়ের পদচিহ্ন অনুসরণ করে।
১৯৬৬ সালে রাঙ্গুলা রত্নম নামে একটি তেলেগু সিনেমার মাধ্যমে শিশুশিল্পী হিসেবে তার চলচ্চিত্র জীবন শুরু হয়। কিন্তু নায়িকা হিসেবে ১৯৭০ সালে ‘শাওন ভাদো’ সিনেমাতে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি বলিউডে যাত্রা শুরু করেন। শুরুর দিকে খুব একটা সাফল্য না দেখলেও, সত্তরের দশকের মাঝের দিকে রেখা বলিউডে অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনেত্রী হয়ে ওঠেন।
রেখা ১৮০টির অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি তিনবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮১ সালে ‘উমরাও জান’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার লাভ করেন রেখা। এছাড়া তিনি পেয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক পদ্মশ্রী ও পদ্মভূষণ। মাদাম তুসো মিউজিয়ামে তার মোমের মূর্তী বহুকাল ধরে শোভা পাচ্ছে।
বলিউডে অমিতাভ-রেখা জুটি বেশ আলোচিত। এত বছর হয়ে গেছে, এত মানুষের প্রেম, পরকীয়া, বিচ্ছেদ, নতুন নতুন জুটি এসেছে বলিউডে। তবু আজও রেখা-অমিতাভের জুটি যেন একেবারেই আলাদা। কী যেন একটা রয়েই গিয়েছে দু’জনের মধ্যে। তাদের শেষ সিনেমা যশ চোপড়ার ‘সিলসিলা’। রেখার জন্মদিন আজ, ঠিক তার পরের দিন অর্থাৎ ১১ অক্টোবর জন্মদিন অমিতাভের। দু’জনের সত্যিকারের জীবনেও যেন এক অদ্ভুত ‘সিলসিলা’। রহস্যময় মিল!
১৯৮১ সালে যশ চোপড়া তার সিলসিলা সিনেমাটা অমিতাভ-জয়া-রেখার ‘সত্যিকারের’ ত্রিকোণ প্রেমের গল্প নিয়েই বানিয়েছিলেন বলে মনে করেন অনেকে। অমিতাভ-রেখার একসঙ্গে সেটাই শেষ সিনেমা। বলা হয়, ১৯৭৬ সালে ‘দো আনজানে’র শ্যুটিংয়ের সময়ে কাছাকাছি চলে আসেন অমিতাভ-রেখা। সেই থেকে জয়ার সঙ্গে অমিতাভের সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়। এমনকি গুঞ্জন রটে, গোপনে নাকি অমিতাভকে বিয়েও করেছেন রেখা। যদিও অমিতাভ কখনওই কিছু বলেননি এই সম্পর্ক নিয়ে।
রেখা অর্ধেক তামিল এবং অর্ধেক তেলেগু। কিন্তু তিনি তার বাড়িতে তেলেগু ভাষাতেই কথা বলেন। এছাড়াও রেখা ইংরেজি, হিন্দি এবং উর্দু ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন।