‘অন্যের কথা শুনিনি, নিজেদের সিদ্ধান্তে হ্যাপি থেকেছি’ | চ্যানেল আই অনলাইন

‘অন্যের কথা শুনিনি, নিজেদের সিদ্ধান্তে হ্যাপি থেকেছি’ | চ্যানেল আই অনলাইন

ঢাকার সাংবাদিকদের মুখোমুখি ভারতের কিংবদন্তী অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর

Fresh Add Mobile

উপমহাদেশের বিখ্যাত অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর যখন ক্যারিয়ারে জনপ্রিয়তার চূড়ায়, তখন তিনি বিয়ে করেন নবাব মনসুর আলী খানকে। অনেকেই তখন শর্মিলাকে যুক্তি দিয়েছিলেন, ক্যারিয়ারে এই সু-সময়ে বিয়ে করা ঠিক হচ্ছে না! কিন্তু তিনি কারও কথা শোনেননি।

শর্মিলা ঠাকুর বলেন, নিজের ইচ্ছায় বিয়ের পিঁড়িতে বসি। ঠিক টাইমে বিয়ে করা, বাচ্চা নেয়া জরুরী। আমার যখন মনে হলো বিয়ে করা উচিত তখন করেছি। যখন মনে হয়েছে নারী হিসেবে আমার মা হওয়া উচিত, হয়েছিলাম। আমি যেটা মনে হয়েছে, সেটা আমি করেছি। অনেকে আমাকে পরামর্শ দিয়েছিল, কীভাবে একজন নবাবকে বিয়ে করছো? তোমার তো দুই বছরের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যাবে! আবার আমার হাজবেন্ডকে বলেছে কীভাবে একজন অভিনেত্রীকে বিয়ে করছো? তোমাকে তো ছেড়ে চলে যাবে। কিন্তু আমরা কারো কথা শুনিনি। নিজেদের সিদ্ধান্তে নিজেরা হ্যাপি থেকেছি।

Bkash

২৬ জানুয়ারি বিকেলে ঢাকা ক্লাবে দেশের সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে ভারতীয় বাঙালি এই অভিনেত্রী নিজের বিয়ে ও সংসার নিয়ে এমন খোলাখুলি মন্তব্য করেন।

২২তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এশিয়ান কম্পিটিশন বিভাগের প্রধান বিচারক  হিসেবে গেল ১৯ জানুয়ারি ঢাকায় এসেছেন শর্মিলা ঠাকুর। এর আগে তিনি বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।

Reneta June

প্রায় এক সপ্তাহ হলেও এই প্রথম তিনি ঢাকার সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলাদা সময় নিয়ে মুখোমুখি হন।

বলিউড সিনেমায় তার সময়ের পুরুষপ্রধান গল্পের মধ্যেও নিজের সাফল্যের গল্পও শোনান। এক প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে এখনকার বলিউড সিনেমার সঙ্গে সেই সময়ের তুলনা টানতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন বলিউডে অনেক নারীপ্রধান গল্প হচ্ছে। বিদ্যা বালানোর মতো অভিনেত্রীরা কাজ করে যাচ্ছে।’ 

শর্মিলা ঠাকুর সিনেমায় অন্যান্য নারীদের মতো নিজের জীবনের যাত্রাকে বললেনবডি ক্লক’ তথাশরীরের ঘড়ি’। ব্যক্তিগত আলাপ সহ তিনি পুরো সময়টাজুড়ে বলিউডের সিনেমার বিবর্তন, নিজের জীবন, নবাব পরিবারের বিয়ে হওয়ার গল্প শোনান তিনি। 

নিজের ক্যারিয়ার প্রসঙ্গে ঢাকায় এদিন শর্মিলা ঠাকুর বলেন, অনেক চরিত্রে অভিনয় করেছি। কিন্তু আমাকে কেউ পুরোপুরি কমেডি সিনেমার চরিত্র দেয়নি। ‘চুপকে চুপকে’ সিনেমায় সামান্য ছিল। কিন্তু পুরোপুরি কমেডি করতে পছন্দ করলেও আমাকে কেন জানি সবাই কান্নাকাটির চরিত্র বেশি দিতো।

‘আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে আমার প্রথম ছবি মানিক দার ( সত্যজিৎ রায়) সঙ্গে। তখন স্কুলে পড়তাম, আমার বয়স ১৩ বছর। একদিন ফোন এলো সত্যজিৎ রায় আমাকে ‘অপুর সংসার’ এ নিতে চান। যখন আমি অপর্ণা চরিত্র করলাম খুবই পপুলার হয়ে গেলাম। তাই আমাকে সেভাবে স্ট্রাগল করতে হয়নি। আমার পরিবার চায়নি যে, আমি কখনো ফিল্মে কাজ করি। যদি সত্যজিৎ রায়ের ছবির অফার না আসতো আমার জীবনটা অন্যরকম হতো।’

বর্ণিল ক্যারিয়ার শর্মিলা ঠাকুরের। তার সন্তানরা সাইফ আলী খান, সোহা আলী খান এবং সাবা আলী খান। ৭০-এর দশকে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নেয়া অভিনেত্রীদের মধ্যে এগিয়ে ছিলেন শর্মিলা। ক্যারিয়ারে আছে মৌসম, আরাধনাসহ নন্দিত সব সিনেমা। যার সুবাদে দুইবার ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড, ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণে ভূষিত হয়েছেন। এছাড়া ছিলেন ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত।

ছবি: অপরাজিতা সংগীতা

এত সব সাফল্যের মাঝেও শর্মিলা ঠাকুরকে অনেকসময় সমালোচনা সইতে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক সময় ম্যাগাজিনে লেখালিখি হতো। সেগুলো আমি পড়তাম না। অনেকে ফোন করে আমাকে বলতো, তোমাকে নিয়ে এসব ক্রিটিসিজম লেখা হয়েছে। তখন সেটা আমার জন্য পেইনফুল লাগতো না। তবে ক্ষণিকের জন্য মনে হতো কেন এসব লিখছে? একটু খারাপ লাগতো। আবার মন ভালো হতে সময় লাগতো না। আমার মেয়েকেও একই কথা বলেছি। যখন তোমার সিনেমা রিলিজ হবে কেউ ক্রিটিসিজম করলে তুমি কান্না করবা না। এগুলো ইগনোর করাই বেটাই।

শর্মিলা ঠাকুরকে নিয়ে আলাদা করে এই সংবাদ সম্মেলনটির সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর।

Scroll to Top