অনলাইনে মিউটেশন বা নামজারি করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া, সময় ও খরচের বিস্তারিত তথ্য

অনলাইনে মিউটেশন বা নামজারি করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া, সময় ও খরচের বিস্তারিত তথ্য

ভূমির মালিকানা পরিবর্তন বা নামজারি করতে এখন আর ভূমি অফিসে দিনের পর দিন দৌড়াতে হয় না। অনলাইনে মিউটেশন ব্যবস্থা চালু হওয়ায় ঘরে বসেই করা যাচ্ছে আবেদন। এই ই-নামজারি সিস্টেমে সময় ও খরচ- দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে। হাজার হাজার নাগরিক ভোগান্তি ছাড়াই পাচ্ছেন সহজ, স্বচ্ছ ও আধুনিক ভূমি সেবা।

অনলাইনে মিউটেশন বা নামজারি করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া, সময় ও খরচের বিস্তারিত তথ্যঅনলাইনে মিউটেশন বা নামজারি করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া, সময় ও খরচের বিস্তারিত তথ্য

মিউটেশন বা নামজারি কী?

মিউটেশন হলো জমি সংক্রান্ত বিষয়ে মালিকানা পরিবর্তনের সরকারি রেকর্ড হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বৈধভাবে জমির মালিকানা অর্জন করলে, সরকারিভাবে সেই মালিকানাকে স্বীকৃতি দিয়ে নতুন খতিয়ান প্রদান করা হয়।

এই খতিয়ানে থাকে—

  • মালিকের নাম
  • মৌজা নাম ও JL নম্বর
  • দাগ নম্বর
  • জমির পরিমাণ
  • মালিকানার অনুপাতে জমির অংশ

ই-নামজারির পরিসংখ্যান

ভূমি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন প্রতি মাসে প্রায় ৫ লাখ অনলাইন নামজারি আবেদন নিষ্পত্তি হচ্ছে। তিনটি পার্বত্য জেলা বাদে দেশের সব উপজেলায় (৫১৬টি) এবং ৩৪৬৭টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে চালু হয়েছে ই-নামজারি সেবা।

অনলাইনে মিউটেশন করার ধাপসমূহ

১. আবেদন ওয়েবসাইট:
প্রবেশ করুন https://mution.land.gov.bd/

২. জমির মালিকানার উৎস চিহ্নিত করুন:
ক্রয়, ওয়ারিশ, হেবা, ডিক্রি, নিলাম, বন্দোবস্ত অথবা অন্যান্য উৎস।

৩. জমির মৌজা নির্বাচন:
বিভাগ > জেলা > উপজেলা > মৌজা নির্বাচন করে জমির তথ্য পূরণ করতে হবে। একাধিক মৌজার ক্ষেত্রে আলাদা আবেদন করতে হবে।

৪. সর্বশেষ জরিপ রেকর্ড অনুসারে আবেদন করুন।

৫. জমির খতিয়ান ও দাগ নম্বর টাইপ করুন।
একাধিক খতিয়ান বা দাগ যোগ করতে চাইলে “আরও খতিয়ান সংযুক্ত করুন” ও “আরও দাগ সংযুক্ত করুন” ক্লিক করুন।

৬. আবেদনকারী ও প্রতিনিধির তথ্য দিন:
ছবি, স্বাক্ষর, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট বা জন্ম সনদ, উত্তরাধিকার সনদ, নিবন্ধন সনদ ইত্যাদি আপলোড করতে হবে।

৭. মালিকানা প্রমাণপত্র আপলোড করুন:
দলিলরায়-ডিক্রি অথবা অন্যান্য কাগজের স্ক্যান কপি দিতে হবে।

৮. ফাইলের সাইজ সীমা:
প্রতিটি PDF ফাইল সর্বোচ্চ ১.২৫MB, সর্বমোট ২৫MB এর মধ্যে রাখতে হবে।

৯. সত্য ঘোষণাপত্র দিন:
মৌজা নির্ধারণ করে ক্রয়সূত্রে আবেদনকারিকে একটি ঘোষণাপত্র দিতে হয়। ভুল তথ্য দিলে আবেদন বাতিল ও আইনগত ব্যবস্থা হতে পারে।

১০. আবেদন প্রিভিউ দেখুন ও দাখিল করুন:
দাখিলের আগে সব তথ্য যাচাই করুন। দাখিল করার পর তা আর সংশোধন করা যাবে না।

১১. আবেদন নম্বর সংরক্ষণ করুন:
প্রিন্ট অথবা PDF কপি সংরক্ষণ করে রাখুন। আবেদন নম্বর দিয়ে পরবর্তীতে ট্র্যাকিং করতে পারবেন।

আবেদন ফি ও পেমেন্ট

  • আবেদন ও নোটিশ ফি: মোট ৭০ টাকা
  • পেমেন্ট মাধ্যম: নগদবিকাশ, রকেট, উপায়, ভিসা/মাস্টার কার্ড
  • পেমেন্ট রিসিপ্ট ও আবেদন কপি প্রিন্ট করে রাখতে পারবেন।

অনলাইনে শুনানির সুযোগ

  • আবেদনকালে হ্যাঁ নির্বাচন করুন অথবা http://oh.lams.gov.bd লিঙ্কে গিয়ে শুনানির অনুরোধ জানাতে পারবেন।

আবেদন নিষ্পত্তির সময়সীমা

  • সাধারণত ২৮ দিনের মধ্যে আবেদন নিষ্পত্তি হয়।
  • সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনুমোদনের পর খতিয়ান প্রস্তুত হয়।
  • মোবাইলে এসএমএস আসবে ডিসিআর ফি পরিশোধের জন্য।

ডিসিআর ফি ও প্রিন্ট

  • ডিসিআর ফি: ১,১০০ টাকা
  • অনলাইনে পেমেন্টের পর https://mution.land.gov.bd/ থেকে খতিয়ান ও ডিসিআর প্রিন্ট করা যাবে।

উঁচুতে উঠলেই মাথা ঘোরে? জানুন এই ১০টি ঘরোয়া পদ্ধতি

কিউআর কোডযুক্ত ডিসিআর-এর বৈধতা

  • অনলাইন ডিসিআর এখন সম্পূর্ণ আইনগত বৈধ ও সর্বক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য।
  • ভূমি অফিসে গিয়ে ম্যানুয়াল ডিসিআর সংগ্রহ করার দরকার নেই।
Scroll to Top