২১ বছর দেশসেবার পর এবার পিতা-মাতার সেবা, সিআরপিএফ জওয়ানকে গানে-ফুলে অভ্যর্থনা জানাল গোটা গ্রাম

২১ বছর দেশসেবার পর এবার পিতা-মাতার সেবা, সিআরপিএফ জওয়ানকে গানে-ফুলে অভ্যর্থনা জানাল গোটা গ্রাম

বিলাসপুর: তাঁরা প্রতি মুহূর্তে সতর্ক থাকেন বলেই নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারেন দেশবাসী। তাঁদের চোখে নিদ্রা থাকে না, থাকে মনে শুধু দায়িত্ববোধ। তবে, এই সিআরপিএফ জওয়ানের দায়িত্ববোধ এখনও অটুট। দেশসেবায় তিনি অবসর নিয়েছেন ঠিকই, তবে এবার পিতা-মাতার সেবার পালা।

সম্প্রতি ছত্তিশগড়ের বিলাসপুর জেলার পাচপেড়ি গ্রামের ছেলে, সিআরপিএফ জওয়ান ওম প্রকাশ কুরে ২১ বছর পর বাড়ি ফিরে এসেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁকে ফিরে পেয়ে একদিকে যেমন বৃদ্ধ পিতা-মাতার চোখে উপচে উঠেছে আনন্দের অশ্রু, তেমনই খুশিতে উদ্বেল গ্রামও। গোটা গ্রাম গান গেয়ে, ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছে নিজেদের ছেলেকে।

আরও পড়ুন– শিঙাড়া খাচ্ছিলেন দুই যুবক, আচমকাই সাদা পোশাকে ঘিরে ফেলল অ্যান্টি করাপশন ব্যুরো, তারপর যা হল…!

ওম প্রকাশ কুরে ২০০৪ সালে নিমুচ থেকে সিআরপিএফ-এ যোগদান করেন। এরপর তিনি হায়দরাবাদে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন এবং ১৭৩ ব্যাটালিয়নে প্রথম পোস্টিং পান। চাকরি করার সময়ে তিনি বাংলা, বিহার, তেলঙ্গানা, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড এবং ঝাড়খণ্ড সহ বিভিন্ন রাজ্যে নিজের দায়িত্ব সুষ্ঠু ভাবে পালন করেছিলেন।

ঝাড়খণ্ডে মোতায়েনের সময়ে একাধিকবার তিনি নকশালদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন, বহুবার তাদের অস্ত্র ও সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করেন। এর পরে, তাঁকে প্রশিক্ষণের জন্য কোবরা ব্যাটেলিয়নে পোস্টিং দেওয়া হয়। সেখানে তিনি বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং দেশের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

২১ বছর দেশসেবার পর এবার পিতা-মাতার সেবা, সিআরপিএফ জওয়ানকে গানে-ফুলে অভ্যর্থনা জানাল গোটা গ্রাম

“এখন আমার বাবা-মা বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছেন, তাই আমি অবসর গ্রহণ করে তাঁদের সেবা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাড়ি ফিরে মানুষের ভালবাসা দেখে দারুন লাগছে। ঠিক যেমন আমি ব্যাটেলিয়নে থাকার সময়ে দেশের সেবা করেছি, এখন আমার লক্ষ্য হবে গ্রামে থাকা এবং মানুষকে সাহায্য করা”, লোকাল 18-কে জানিয়েছেন দেশের এই বীর সন্তান।

আরও পড়ুন– দুই সন্তানকে রেখে প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ে, আশীর্বাদ করলেন স্বামীও ! ৬ দিন পর ফের ফিরে এলেন পুরনো সংসারে

খুশি তাঁর বাবা-মাও। বাবা সম্পতলাল কুরে অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন, ‘‘আমার ছেলে ২১ বছর চাকরি করার পর বাড়ি ফিরেছে, এর চেয়ে খুশির আর কিছু হতে পারে না। এখন সে আমাদের বৃদ্ধ বয়সের ভরসা হয়ে উঠবে। প্রতিটি বাবা-মায়ের উচিত তাঁদের সন্তানদের দেশের সেবা করার জন্য উৎসাহিত করা।’’

অন্য দিকে, মা মেলাবাই কুরেও আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, “প্রতিটি মায়েরই তাঁর ছেলেকে দেশের সেবায় পাঠানোর সাহস থাকা উচিত। আমার ছেলে ২১ বছর পর ফিরে এসেছে এবং আমাদের সঙ্গেই থাকবে। এর চেয়ে বড় আনন্দ আমার জন্য আর কিছু হতে পারে না”!

আরও পড়ুন– মাতৃহারা কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, দীর্ঘ অসুস্থতার পর ৬৫ বছর বয়সে প্রয়াত অভিনেত্রীর মা

তবে, শুধুই পিতা-মাতা নন, গ্রামের মানুষও এই বীর জওয়ানের প্রত্যাবর্তনে অত্যন্ত আনন্দিত। ওম প্রকাশ কুরেকে মালা, শাল এবং ফুলের তোড়া দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো সে কথাই প্রমাণ করে দেয়। তাঁর ফিরে আসার দিন গ্রামের পরিবেশ উৎসবমুখর ছিল, তাঁকে দেখে সবাই গর্বিত বোধ করছিলেন।

ওম প্রকাশ কুরে এখন থেকে তাঁর গ্রামে থাকবেন এবং সামাজিক কাজে অবদান রাখবেন। নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তরুণদের অনুপ্রাণিত করবেন তিনি। সন্দেহ নেই, তাঁর গৌরবময় দেশসেবার যাত্রা গ্রামবাসীদেরও উদ্বুদ্ধ করবে এবং দেশের সেবা করার জন্য তাঁদের নতুন অনুপ্রেরণা দেবে।

Scroll to Top