হাসানের স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ

হাসানের স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ

সাত মাস ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পড়ে থাকার পর ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে জুলাই বিপ্লবে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে নিহত হাসানের (২০) পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। সাত মাস নিখোঁজ থাকার পর ছেলের লাশ বুঝে নিতে এসেছিলেন হাসানের বাবা মনির হোসেন ও মা গোলেনুর বেগম। সেখানে হাসানের বাবা-মা ও স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছিলো

শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জুমার নামাজ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে হাসানের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ছেলের নামাজে জানাজা শেষে ছেলে হত্যার বিচারের দাবি জানান বাবা মনির হোসেন।

আর এদিকে সন্তান হারানোর শেকে আহাজারি করছিলেন হাসানের মা গোলেনুর বেগম। ছেলের সঙ্গে নানা স্মৃতি তুলে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। অশ্রু শিক্ত কন্ঠে তিনি বলেন, কোন পাষন্ড আমার ছেলেকে এভাবে হত্যা করলো। তার কি একটা বারও বুক কেপে ওঠেনি। আমার ছেলের অপরাধ থাকলে আমাদের জানাই তো কিন্তু এভাবে হত্যা কোনো করলো।

তিনি আরও বলেন, আমার ছেলের দুইটা নাম রেখেছিলাম হাসান আর ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ। আমার ছেলেকে ছাড়া কীভাবে বাঁচবো। যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে আল্লাহ তাদের বিচার করবে।

হাসানের বাবাব বলেন, আমার ছেলে গত ৫ই আগস্ট যাত্রাবাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়েছে। নিখোঁজের খবর পেয়ে ঢাকায় আসি। এরপর ঢাকা মেডিকেল, মিডফোর্ট, সোহরাওয়ার্দী, আন্জুমান মফিদুল ইসলামসহ বিভিন্ন স্থানে ৫ মাস ধরে আমার ছেলের সন্ধান করে আসছিলাম। কিন্তু কোথাও আমার ছেলেকে পাচ্ছিলাম না।

শুরুতে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার অবস্থা ছিলো না। পুলিশ জিডি নিচ্ছিলো না। পরবর্তীতে ১৯ দিনের মাথায় জিডি করি। আমার ছেলের কাছে দুইটি মোবাইল ফোন ছিলো সেগুলো কারা যেন নিয়ে গেছে।

হাসানের স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ
জুলাই অভ্যুত্থানে যাত্রাবাড়িতে নিহত হাসান, ছবি: সংগৃহীত

আমার ছেলের সন্ধানে থানা ‍পুলিশ, ডিবি, সিআইডি ও র‌্যাবের কাছেও গিয়েছি। প্রতি সপ্তাহে ঢাকা মেডিকেলে আসতাম আমার ছেলের খোঁজে। ঢাকা মেডিকেলের মর্গে আসলে তারা কিছু পুড়ে যাওয়া কালো কিছু ছবি দেখাতো। ওই ছবি দেখে চেনার কোনো উপায় ছিলো না। পরবর্তীতে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের সহায়তায় ৫ মাস ১২দিন পরে একটা একটা করে লাশ মর্গ থেকে বের করার পরে আমরা পায়জামা ও পান্জাবি দেখে লাশ শনাক্ত করি। লাশ শনাক্তের পর মেডিকেল কর্তৃপক্ষ আমাদের লাশ দেয় নি। তারা ডিএনএ নমুনা নিয়ে এক মাস পর আমাদের জানায় যে, আমার ছেলের ডিএনএ আমাদের সঙ্গে মিলেছে।

তিনি আরও বলেন, আমার ছেলেকে যারা এভাবে হত্যা করেছে তাদের বিচার চাই। একজন একজন করে ধরে এনে তারা যেভাবে আমার ছেলেকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে ওই ভাবে তাদের হত্যার দাবি জানাই। রাষ্ট্রীয়ভাবে আমার ছেলেকে শহীদ মর্যাদার দাবি জানাই।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিহত হাসান চার ভাই বোনের ভেতরে দ্বিতীয়। যাত্রাবাড়িতে বড় বোনের বাসায় থাকত। কাপ্তান বাজারে বোন জামাইয়ের ইলেকট্রনিকস পণ্যের দোকানে কাজ করত। তার গ্রামের বাড়ি ভোলার সদর কাছিয়া এলাকায়। সেখানে হাসানের দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের কথা রয়েছে।

Scroll to Top