প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় দেশের ৫১টি পাথর কোয়ারির মধ্যে ১৭টির ইজারা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত ২৭ এপ্রিল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এ–সংক্রান্ত কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইজারা স্থগিত রাখা কোয়ারির অধিকাংশই সিলেটে। এসব কোয়ারিভুক্ত এলাকা ছাড়াও গোয়াইনঘাটের পিয়াইন নদ এবং কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদ, সাদা পাথর ও সংরক্ষিত বাংকার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রচুর ছোট-বড় পাথর রয়েছে। পাশাপাশি গোয়াইনঘাটের পরিবেশ-প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) জাফলংও পাথরের সাম্রাজ্য হিসেবে সুপরিচিত। মূলত এসব এলাকার পাথরই অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে।
দুই হাজার কোটি টাকার পাথর লুট
পরিবেশকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দা অভিযোগ, সিলেট জেলায় মোট পাথর কোয়ারি রয়েছে আটটি। এর বাইরে আরও অন্তত ১০টি জায়গা থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। বিগত ১৫ বছরে যা লুটপাট হয়নি, গত ১০ মাসে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি লুটপাট হয়েছে বলেও তাঁরা দাবি করেছেন।
তবে গত ১০ মাসে কী পরিমাণ পাথর লুট হয়েছে, এর কোনো পরিসংখ্যান প্রশাসনের কাছে নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা, সিলেটের পাথর কোয়ারি ও কোয়ারিভুক্ত এলাকা ছাড়া অন্যান্য স্থান থেকে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে। লুটপাট অব্যাহত থাকায় কিছুদিনের মধ্যেই সিলেট পাথরশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দিন-রাত সমানতালে হাজার হাজার শ্রমিক কোদাল, বেলচা, শাবল আর টুকরি নিয়ে কোয়ারি ও এর আশপাশের এলাকায় গিয়ে মাটি খুঁড়ে পাথর বের করেন। হাজার হাজার বারকি নৌকায় সেসব পাথর বহন করে এনে তাঁরা মিলমালিকদের কাছে বিক্রি করেন। পরে সেসব পাথর মেশিনে ভেঙে ছোট করে ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করা হয়। ওই ব্যবসায়ীরা ট্রাক ও পিকআপে পাথর দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী কিম প্রথম আলোকে বলেন, বিগত দেড় দশকে সিলেটে যে পরিমাণ পাথর লুট হয়েছে, এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লুটপাট হয়েছে গত ১০ মাসের ব্যবধানে। এ নজিরবিহীন লুটপাট অতীতে দেখা যায়নি। অথচ প্রশাসন লুটপাট ঠেকাতে ব্যর্থ। কোয়ারির ইজারা বন্ধ আছে; কিন্তু লুটপাট অব্যাহত আছে, তাহলে লাভ কী হলো? প্রকৃতি ও পরিবেশের স্বার্থে এ লুটপাট যে করেই হোক বন্ধ করতে হবে।