পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ১৯৭১ সালের গণহত্যার বিষয়টি ‘সিমলা চুক্তি’ এবং পরবর্তীতে জেনারেল পারভেজ মোশাররফের বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে সমাধান হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন।
সম্প্রতি দুই দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় এসে এ দাবি করেছেন তিনি। তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।
১৯৭২ সালের ২ জুলাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো সিমলা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ-পরবর্তী সম্পর্ক স্থিতিশীল করা। এতে কাশ্মীর সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখা নির্ধারণ, যুদ্ধবিরতি স্থায়ী রূপ দেওয়া, সৈন্য প্রত্যাহার এবং যুদ্ধবন্দিদের ফেরত দেওয়ার মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়। তবে এতে স্থান পায়নি বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ।
ভারতের জন্য এটি ছিল যুদ্ধজয়ের কূটনৈতিক সুরক্ষা। পাকিস্তানের জন্য হারানো মর্যাদা ফিরে পাওয়া ও বন্দি সেনাদের মুক্তি। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য এই চুক্তি কোনো কিছুই আনেনি।
বাংলাদেশ তখন সদ্য স্বাধীন- কিন্তু সিমলা চুক্তি ঢাকাকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পন্ন হয়। ১৯৭১ সালের গণহত্যার স্বীকৃতি, পাকিস্তানে আটকে থাকা বাংলাদেশিদের প্রত্যাবাসন, কিংবা যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ- এসব মৌলিক প্রশ্ন একেবারেই উপেক্ষিত হয়।
এই কারণেই সরকার আজও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর মনে করে। পাকিস্তান সিমলা চুক্তির দোহাই দিলেও বাংলাদেশ কখনও সেটিকে গ্রহণ করেনি। পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সত্যিকারের কূটনৈতিক সম্পর্ক সম্ভব হবে কেবল তখনই, যখন পাকিস্তান প্রকাশ্যে ১৯৭১ সালের গণহত্যা স্বীকার করবে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইবে।
রোববার ঢাকায় পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনও বলেন, বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে প্রত্যাশা করে, তারা যেন গণহত্যার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। এছাড়া এখনও যেসব মানুষ পাকিস্তানে আটকে আছে তাদের ফিরিয়ে আনে এবং যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ দেয়।
তৌহিদ হোসেন বলেন, অতীতে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক আটকে ছিল। এখন আমরা সেগুলো স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।
অতএব, সিমলা চুক্তি হয়তো দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক রূপরেখা গড়ে দিয়েছে কিন্তু বাংলাদেশের ন্যায়বিচারের দাবি আজও অমীমাংসিত।