সারের বাজারে কৃত্রিম সংকটের মূল হোতা বিএডিসি’র মহাব্যবস্থাপক | চ্যানেল আই অনলাইন

সারের বাজারে কৃত্রিম সংকটের মূল হোতা বিএডিসি’র মহাব্যবস্থাপক | চ্যানেল আই অনলাইন

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও পরিবহন ঠিকাদার, ডিলার সিন্ডিকেট এবং অফিসিয়াল সিন্ডিকেট থেকে মুক্ত হতে পারেনি সারের বাজার। পরিবহন ঠিকাদার ও ডিলাররা অবৈধভাবে সার মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। এতে অতিরিক্ত দামে সার কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। এ অবস্থায় কৃষি উন্নয়নে বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ প্রয়াস নষ্টসহ ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

আর এই সিন্ডিকেটের  মূল হোতা হিসেবে নাম এসেছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) সারের মহাব্যবস্থাপক আজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে।

গোয়েন্দা সংস্থার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃষি কর্পোরেশনের সারের মহা-ব্যবস্থাপক আজিম উদ্দিনের অফিসার সিন্ডিকেটের কারণে কিছু অসাধু ডিলাররা সরকারি মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে তিউনেশিয়া টিএসপি ও চায়না ডিএপি বরাদ্দ নিয়ে পার্শ্ববর্তী বা অন্য কোন দূরের জেলায় কালোবাজারে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে বেশি দামে সার বিক্রি করে কৃত্রিম সার সংকট তৈরি করছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১ হাজার ৫০ টাকার ৫০ কেজি ওজনের ১ বস্তা ডিএপি সার ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, এবং তিউনেশিয়া থেকে আমদানিকৃত টিএসপি সারের সরকারি মুল্য ১৩৫০ টাকা হলেও খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ২০০০ হাজার টাকা। মূল্যবৃদ্ধি ও পর্যাপ্ত সার না পাওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা ক্ষুব্ধ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশে বার্ষিক সারের চাহিদা ৩টি মৌসুমে ভাগ করা হয়। সবচেয়ে বেশি সার প্রয়োজন হয় রবি মৌসুমে অর্থাৎ নভেম্বর থেকে মার্চে (কার্তিক-ফাল্গুন)। এ সময় মোট চাহিদার ৪০ শতাংশ সার প্রয়োজন হয়। পরবর্তী মৌসুম আউশ, যা এপ্রিল থেকে জুলাই (চৈত্র-আষাঢ়) পর্যন্ত। এ সময় চাহিদার ৩০ শতাংশ এবং আমন মৌসুমে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর (আশ্বিন-মাঘ) অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ সারের প্রয়োজন হয়।

দেশের প্রতিটি জেলায় মৌসুমের চাহিদা অনুযায়ী সার ডিলারের কাছে বিতরণ করা হলেও পরিবহন ব্যবসায়ী, ডিলাররা বিএডিসর কর্মকর্তারা সিন্ডিকেট করে দেশে সারের সরবরাহে কৃত্রিম ঘাটতি দেখিয়ে বিক্রির সময় কৃষকদের কাছ থেকে নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছে বলে জানায় গোয়েন্দা প্রতিবেদনে।

আগস্ট মাসের বরাদ্দে দেখা গেছে, আজিম উদ্দিন কুমিল্লা দাউদকান্দি, জাঙ্গালীয়া ও কুষ্টিয়া বিএডিসির সার আঞ্চলিক অফিসে তিউনেশিয়া টিএসপি, চায়না ডিএপি সার সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়েছেন মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে । বিএডিসি আঞ্চলিক সার অফিসে কর্মরত সহকারী পরিচালক মহিউদ্দিন মিহিন এই তিউনেশিয়া টিএসপি, চায়না ডিএপি সার নির্দিষ্ট কয়েকজন ডিলারদের কাছে সরকারি মূল্যের থেকে অতিরিক্ত বস্তা প্রতি ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা বেশি নিয়ে সরবরাহ করছেন। আর এই টাকার একটি অংশ প্রতি মাসে আজিম উদ্দিন পেয়ে থাকেন।

চুয়াডাঙ্গা বিএডিসির একাধিক সার ডিলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিযোগ করে বলেন, মহিউদ্দিন মিহিম আমাদের সার না দিয়ে তার পছন্দের ডিলারের কাছে সরকারি মুল্য থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি নিয়ে সরবরাহ করেছেন।

কুমিল্লা আঞ্চলিক সার অফিস দাউদকান্দিতে কর্মরত উপ-সহকারী পরিচালক, স্টোর কিপার দেলোয়ার হোসেনের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এ অফিসেও সর্বোচ্চ সার বরাদ্দ দিয়ে থাকেন মহাব্যবস্থাপক আজিম উদ্দিন।

কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের মহাব্যবস্থাপক আজিম উদ্দিন বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে স্বচ্ছতার সাথে দায়িত্ব পালন করছি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা। তবে কোন সহকারী পরিচালক, গুদাম রক্ষক বা স্টোরকিপার যদি কোন অনিয়ম দুর্নীতি করে তাহলে ব্যবস্থা নেব।

আঞ্চলিক সার অফিসের সহকারী পরিচালক মহিউদ্দিন মিহিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয়। কোন ডিলারকে সার দেব আর না দেব তা বলতে বাধ্য নই।

চুয়াডাঙ্গা সার গোডাউনে দায়িত্বরত গুদাম রক্ষক শ্রী শংকর বলেন, আমার গোডাউনে তিওনেশিয়া টিএসপি ও চায়না ডিএপি মজুদ আছে। মহিউদ্দিন স্যারের অনুমতি না পেলে আমি ডিলারদের দিতে পারিনা। আমাকে এসবের ভিতর জড়াবেন না।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের প্রধান অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সাল ইমাম বলেন, ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পরে আমরা সার ডিলার নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তন করছি। যারা অনিয়মের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নেব।

এই পরিস্থিতিতে আসন্ন মৌসুমেও (নভেম্বর-মার্চ) সারের সরবরাহ ও দাম নিয়ে সংকট তৈরির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ বছর সারাদেশে রাসায়নিক সারের চাহিদা ৫৭ লাখ ৮৫ হাজার টন। বিএডিসির তথ্য বলছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সারাদেশে জুলাই মাসের চাহিদা অনুযায়ী সার ডিলারদের কাছে সরবরাহ করার পরও বর্তমানে বিভিন্ন গুদামে ৬ লাখ ৩০ হাজার ৬১৩ টন ইউরিয়া সার মজুত রয়েছে। এছাড়া দুই লাখ ১৭ হাজার টন টিএসপি, দুই লাখ ৭৩ হাজার টন ডিএপি এবং দুই লাখ ৮১ হাজার টন এমওপি মজুত রয়েছে।

প্রতিবেদনে গোয়েন্দা সংস্থার পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি কৃষি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

Scroll to Top