সহিদুল্লাহ চৌধুরী: শ্রমিক থেকে লড়াইয়ের ময়দানের নেতা

সহিদুল্লাহ চৌধুরী: শ্রমিক থেকে লড়াইয়ের ময়দানের নেতা

এই ধর্মঘটের পথ বেয়ে এসেছিল ১৯৬৯ সালের অভ্যুত্থান। আসাদ, দরজিশ্রমিক, তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয় ২০ জানুয়ারি ১৯৬৯ সালে। আসাদ শহীদ হওয়ার পর মানুষ প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে উঠল। সহিদুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন সে সময় সুতা ও পাটকল শ্রমিকদের ইউনিয়নকর্মী, শ্রমিকদের সংগঠিত করেছেন তিনি। ছাত্রদের ডাকে ২৪ জানুয়ারি দেশব্যাপী ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হলো।

সে দিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলছেন, ‘আমরা ডেমরা থেকে ২০ হাজারের মতো শ্রমিক রওনা হই, প্রত্যেকের হাতে ৫-৬ ফুট লম্বা বাঁশের লাঠি, মুখে স্লোগান “রক্তের বদলে রক্ত চাই।” ডেমরা পার হওয়ার পর সেই মিছিল এক লাখ শ্রমিকের মিছিলে পরিণত হলো। শ্রমিকের স্বতঃস্ফূর্ত জনস্রোত দেখে অভ্যুত্থানের সংগঠক ছাত্রনেতারা ভয় পেয়ে গেল। কারণ, এই বিশাল শ্রমিকের জনসমুদ্র নিয়ন্ত্রণ করবে কীভাবে? অবশেষে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হল মাঠে। সবাইকে বলা হয় দোয়া-দরুদ পড়তে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” শ্রমিকদের সে সময়ের ভূমিকা সম্পর্কে ছাত্রনেতা সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক বলেন, “এই শ্রমিকদের অংশগ্রহণ ছাড়া এই অভ্যুত্থান কোনোভাবেই সফল হতো না।”’

অভ্যুত্থানের প্রায় এক বছর পর ১৯৭০-এর নির্বাচন, এরপর মুক্তিযুদ্ধ। সেখানেও সহিদুল্লাহ চৌধুরী ট্রেড ইউনিয়ন হাতিয়ার নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি শ্রমিকদের মধ্যে রিক্রুট করেছেন মুক্তিযোদ্ধা, তাঁদের আগরতলা পৌঁছে দিয়েছেন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে। প্রশিক্ষণ শেষে সবাই নরসিংদীর রায়পুরা ও শ্রীপুর অঞ্চলে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। এই যুদ্ধের অংশ হিসেবে বাওয়ানি জুট মিলের কারখানাকে রূপান্তর করেছিলেন গ্রেনেড বানানোর ওয়ার্কশপে, এখানে শ্রমিকেরা গ্রেনেড বানাত যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য। এ ছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), যে পার্টির সঙ্গে তিনি ছিলেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত, সেই পার্টির কুরিয়ার হিসেবে কাজ করেন। ঢাকায় আটকে পড়া পার্টির বুদ্ধিজীবী যেমন শহীদুল্লা কায়সারসহ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা, খবর আদান-প্রদান করা, আটকে পড়া মানুষদের আগরতলা পৌঁছে দেওয়া ছিল তাঁর অন্যতম কাজ। এই কাজ করতে গিয়ে পাকিস্তান আর্মিদের হাতে একবার ধরাও পড়েন একসময়, কিন্তু কৌশলে প্রাণে বেঁচে যান।

Scroll to Top