শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন ভারত

শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন ভারত
শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন ভারত

এশিয়া কাপের ফাইনালে এই প্রথম কোন দল জিতল ১০ উইকেটের ব্যবধানে। শ্রীলঙ্কাকে রীতিমত উড়িয়ে দিয়ে এশিয়া কাপে ৮ম বারের মত শিরোপা জিতল ভারত। ১৯৮৪, ১৯৮৮, ১৯৯১, ১৯৯৫, ২০১০, ২০১৬ ও ২০১৮ এর পর ২০২৩ এও এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের তকমা ভারতের। 

মোহাম্মদ সিরাজের দাপুটে বোলিংয়ে এশিয়া কাপের ইতিহাসের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ গড়ে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা, ১৫.২ ওভারে অলআউট ৫০ রানেই। জবাব দিতে নেমে কোন উইকেট না হারিয়েই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভারত। 

এশিয়া কাপের ফাইনালে সর্বনিম্ন স্কোর। শ্রীলঙ্কা নিজেদের ঘরের মাটিতে এমন দশা কখনোই চায়নি। ৫০ রানে হারিয়েছে সব উইকেট। ৫১ রানের সহজ লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে গিয়ে ভারতের দুই উদ্বোধনী জুটি, গিল-কিশান মিলেই জয় নিশ্চিত করেছে। ফলে দশ উইকেটের জয়ে অষ্টম-বারের মতো ভারতের কাছে এশিয়া কাপের শিরোপা।

আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের মাঠে প্রথম ইনিংসে যে ধরনের ব্যাটিং-প্রদর্শনী শ্রীলঙ্কা, সেটা মাঠভর্তি দর্শকদের জন্য বিদ্রূপ। ওডিআইতে লঙ্কানদের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ ছিল ৪৩, সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে। ভারতের বিপক্ষে সেটা ছিল ৭৩। আজ ভারতের বিপক্ষে সর্বনিম্ন সংগ্রহ দাঁড়াল ৫০ রানের। এশিয়া কাপের ফাইনালেও এত কম সংগ্রহ আগে কখনো করেনি কোনো দল।

এর আগে এশিয়া কাপে সর্বনিম্ন সংগ্রহ ছিল বাংলাদেশের, ৮৭ রান, পাকিস্তানের বিপক্ষে। বাংলাদেশের সেই রেকর্ড ভেঙে সেখানে আজ জায়গা করে নিল শ্রীলঙ্কা। এই পরিস্থিতি আসলে বর্ণনা করা কঠিন। ফাইনাল ম্যাচ, টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কা যেন ব্যাট করাই ভুলে গেল! সিরাজ নিজের তৃতীয় ওভার করতে এসে ফাই-ফার তুলে নিলেন। পরে নিয়েছেন আরও একটি। হার্দিক নিয়েছেন ৩ উইকেট। বাকি একটি বুমরাহ’র পকেটে। দলীয় ৫০ রানে সব উইকেট হারিয়ে বসল লঙ্কানরা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুবমান গিল আর ইশান কিশানের ব্যাটে ভর করেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে গেছে ভারতীয় দল।

লক্ষ্যমাত্রা মাত্র ৫১ রান। একেবারেই মামুলি। নিয়মিত ওপেনার রোহিত শর্মা নয়, ফাইনালে গিলের সঙ্গী হলেন ইশান। দুই ব্যাটারের মুহুর্মুহু বাউন্ডারিতে ৩ ওভার শেষে বিনা উইকেটে ৩২ রানে পৌঁছে যায় ভারত। প্রমোদ মধুশানের দুই ওভারে এল ২১ রান। অন্যদিকে মাথিশা পাথিরানার এক ওভারে ১০ রান। চতুর্থ ওভার করতে এসে দুনিথ ওয়েল্লালাগে ভাল করলেন, দিলেন ২ রান। এর আগের ম্যাচেও ভারতের সাথে ভাল বলের নজির দেখিয়েছিলেন তিনি।

তবে পাথিরানা এসে এবার ১১ রান দিলেন। পরের ওভারে ওয়েল্লালাগের শেষ বলে গিলের বাউন্ডারিতে স্কোর সমতায় চলে আসে। সপ্তম ওভারে চারিথ আসালাঙ্কার প্রথম বলে ইশানের সিঙ্গেল রানে ম্যাচ জিতে নেয় ভারত।

এর আগে প্রথম ইনিংসে, বুমরাহ ইনিংসের প্রথম ওভার করতে এসে তৃতীয় বলেই কুশল পেরেরা’কে লেংথ বলে এজ করিয়ে লোকেশ রাহুলের তালুতে পাঠিয়েছেন। এরপর পেরিয়ে যায় দুইটি ওভার। চতুর্থ ওভার করতে আসেন মোহাম্মদ সিরাজ। নিজের স্পেলের দ্বিতীয় ওভার ছিল এটি। সেই ওভারে লঙ্কান ব্যাটিংয়ে একেবারে ধস নামিয়ে দেন তিনি।

প্রথম বলে পাথুম নিশানকাকে ফিরিয়ে শুরু করলেন। পরের বল দিলেন ডট। তৃতীয় বলে সাদিরা সামারাবিক্রমা হয়েছেন লেগ বিফোরের শিকার। চতুর্থ বলে চারিথ আসালাঙ্কা ক্যাচ তুলে দিলেন কাভারে দাঁড়ানো ইশান কিশানের কাছে। সিরাজের জন্য তৈরি হলো হ্যাটট্রিকের সুযোগ। পঞ্চম বলে হ্যাটট্রিক পাননি। বরং একটি চার বাঁচাতে সিরাজ নিজেই ছুটে গেছেন বাউন্ডারি লাইনে। যদিও তা বাঁচাতে পারেননি। তবে সিরাজের ভেতর তখন কী চলছে, তা খুব বোঝা গেল। ৬ নম্বর বল তখনো বাকি। ধনঞ্জয়া ডি সিলভা এজ হলেন রাহুলের গ্লাভসে। সিরাজের এক ওভারে ৪ উইকেট! অবিশ্বাস্য দৃশ্য তখন প্রেমাদাসায়। লঙ্কানদের দলীয় সংগ্রহ তখন ৫ উইকেট হারিয়ে ১২ রান।

একপ্রান্তে টিকে ছিলেন তিনে নামা কুশল মেন্ডিস। নতুন ব্যাটার হিসেবে নামলেন অধিনায়ক দাসুন শানাকা। তবে আবারও সিরাজ হাজির হলেন, উপড়ে দিলেন শানাকার স্টাম্প। আর সিরাজ এরমধ্যে দিয়ে নিয়ে নেন ওডিআইতে নিজের প্রথম ৫ উইকেট। মেন্ডিসের সাথে নতুন ব্যাটার হিসেবে সঙ্গী হলেন দুনিথ ওয়েল্লালাগে। ওয়েল্লালাগে’কে সাথে নিয়ে ২১ রানের একটা জুটি গড়া সম্ভব হয়েছিল মেন্ডিসের পক্ষে। সে-পর্যন্তই সই। মেন্ডিসের উইকেটটিও তুলে নেন সিরাজ, তখন লঙ্কানদের দলীয় রান ৩৩, ৭ উইকেট হারিয়ে।

পরের ওভার করতে এলেন হার্দিক পান্ডিয়া। তিনিই বা বাকি থাকবেন কেন! ২১ বলে ৮ রান করা ওয়েল্লালাগে’র উইকেট নিলেন এই বাউন্সারে। রাহুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন এই ব্যাটার। দলীয় ৫০ রানে হার্দিকের পক্ষ থেকে এল পরপর ২ উইকেট। শ্রীলঙ্কা ১৫.২ ওভারে ৫০ রানে অলআউট।

ভারতীয় বোলারদের পক্ষে, মোহাম্মদ সিরাজ সর্বোচ্চ ৬ উইকেট নিয়েছেন। হার্দিক পান্ডিয়া ৩ টি, জাসপ্রীত বুমরাহ নিয়েছেন ১ টি উইকেট।

Scroll to Top