রাতে ঘুমানোর আগে করণীয়: সঠিক অভ্যাসে ঘুমের মান বাড়ান
‘রাতে ঘুমানোর আগে করণীয়’ বলতে আমরা যা বুঝি, তা শুধু বিছানায় যাওয়ার আগে মোবাইল ফোন নামানো নয়। এটি এমন কিছু অভ্যাস যা আমাদের শরীর ও মস্তিষ্ককে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করে।
- স্ক্রিন টাইম কমানো: ঘুমের অন্তত ৩০ মিনিট আগে মোবাইল, টিভি বা ল্যাপটপ স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা উচিত। ব্লু লাইট মেলাটোনিনের নিঃসরণ ব্যাহত করে যা ঘুমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- হালকা সন্ধ্যা আহার: রাতে ভারী খাবার খেলে হজমের সমস্যা হয় এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। তাই হালকা ও সহজপাচ্য খাবারই উত্তম।
- নিয়মিত ঘুমের সময় নির্ধারণ: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও ওঠা শরীরের বায়োলজিকাল ক্লক স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।
- স্নান বা গরম পানির পায়ে ডুব: ঘুমের আগে হালকা গরম পানিতে স্নান বা পা ডুবিয়ে রাখা রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে ও মনকে প্রশান্ত করে।
ঘুমের মান উন্নত করতে যেসব ছোট ছোট কাজ বড় প্রভাব ফেলে
ঘুম ভালো হওয়ার পিছনে অনেকগুলো ছোট ছোট অভ্যাস কাজ করে, যা আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১. ধ্যান ও শ্বাসপ্রশ্বাস অনুশীলন
ঘুমের আগে কয়েক মিনিট মনোযোগ কেন্দ্রীভূত ধ্যান এবং গভীর শ্বাস প্রশ্বাসের অনুশীলন মানসিক চাপ কমায় এবং ঘুমের আগে মস্তিষ্ককে শিথিল করতে সাহায্য করে।
২. ঘরের পরিবেশ তৈরি
ঘুমের ঘরটি যেন শান্ত, অন্ধকার ও ঠান্ডা হয়। ঘরের আলো নিভিয়ে, পর্দা টেনে দিয়ে এবং সম্ভব হলে ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে পরিবেশ ঘুমের উপযোগী করা যায়।
৩. বই পড়া
প্রিন্টেড বই পড়ার অভ্যাস মস্তিষ্ককে ধীরে ধীরে বিশ্রামের দিকে নিয়ে যায়, যা ঘুম আসতে সাহায্য করে।
৪. ক্যাফেইন বর্জন
ঘুমের কমপক্ষে ৪-৬ ঘণ্টা আগে থেকে চা, কফি বা ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত।
৫. মোবাইল ফোন দূরে রাখা
ঘুমের সময় মোবাইল ফোন বিছানার পাশে না রেখে কিছুটা দূরে রাখা উচিত যাতে নোটিফিকেশন বা রশ্মি ঘুমে বিঘ্ন না ঘটায়।
শরীরচর্চা ও ঘুম: দিনের শুরু থেকেই প্রস্তুতি
ঘুমের প্রস্তুতি শুধু রাতে শুরু হয় না। দিনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডও রাতের ঘুমে প্রভাব ফেলে। প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম বা হাঁটা শরীরে ক্লান্তি তৈরি করে, যা রাতে দ্রুত ঘুমাতে সাহায্য করে।
মনের চাপ কমানো এবং ঘুমের মান বৃদ্ধি
দৈনন্দিন জীবনের স্ট্রেস ও মানসিক চাপ রাতে ঘুমের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় কিছু কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে:
- দিনলিপি লেখা: প্রতিদিন রাতে দিনভর কী ঘটেছে তা লিপিবদ্ধ করলে মানসিক প্রশান্তি আসে।
- স্ব-বিশ্লেষণ: নিজের অনুভূতি সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং ইতিবাচক ভাবনা নিয়ে ঘুমাতে যাওয়া প্রশান্তি আনতে সাহায্য করে।
রাতে ঘুমানোর আগে করণীয় নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি রাতে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম দরকার। স্লিপ ফাউন্ডেশন-এর মতে, পর্যাপ্ত ও গভীর ঘুম স্মৃতিশক্তি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
তবে যদি ঘুম না আসে বা ঘন ঘন ব্যাঘাত ঘটে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
একটি পরিপূর্ণ, স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ রাতের ঘুমের জন্য কিছু অভ্যাস গড়ে তোলাই যথেষ্ট। রাতে ঘুমানোর আগে করণীয় সম্পর্কে সচেতনতা আমাদের শরীর ও মনের সুস্থতার মূল চাবিকাঠি হতে পারে।
জেনে রাখুন-
রাতে ঘুমানোর আগে করণীয় কী?
ঘুমের আগে স্ক্রিন টাইম কমানো, হালকা খাবার খাওয়া, নির্দিষ্ট ঘুমের সময় নির্ধারণ করা ও ধ্যানের মতো অভ্যাস গঠন করা উচিত।
ঘুমের জন্য পরিবেশ কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
একটি শান্ত, অন্ধকার ও ঠান্ডা পরিবেশ ঘুম সহজ করে তোলে এবং ঘুমের মান উন্নত করে।
কীভাবে মস্তিষ্ককে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করা যায়?
ধ্যান, শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলন, বই পড়া ও মোবাইল ফোন দূরে রেখে ঘুমের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যায়।
ক্যাফেইন কি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়?
হ্যাঁ, ক্যাফেইন স্নায়ু উত্তেজিত করে এবং ঘুম আসতে দেরি করে। তাই সন্ধ্যার পর তা এড়ানো উচিত।
রাতে শরীরচর্চা কি ঘুমে সাহায্য করে?
দিনের শুরুতে হালকা ব্যায়াম বা হাঁটা ঘুমে সহায়তা করে। তবে রাতে ভারী ব্যায়াম ঘুম ব্যাহত করতে পারে।
ঘন ঘন ঘুম ভেঙে গেলে কী করণীয়?
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত কারণ এটি অনিদ্রা বা অন্য কোনো সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।