মৃত্যুও পারেনি মাথা নোয়াতে, দণ্ডায়মান অবস্থায় জ্বলেছিল চিতা! তাঁর বাড়িই আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে

মৃত্যুও পারেনি মাথা নোয়াতে, দণ্ডায়মান অবস্থায় জ্বলেছিল চিতা! তাঁর বাড়িই আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে

Last Updated:

বীরেন্দ্রনাথ শাসমল। মৃত্যুর পরেও ব্রিটিশের কাছে মাথা নত করেন নি। দণ্ডায়মান অবস্থায় জালানো হয়েছিল তাঁর চিতা। কিন্তু বর্তমানে তার জন্ম ভিটে বাড়ি অবহেলায় পড়ে রয়েছে। 

+

মৃত্যুও পারেনি মাথা নোয়াতে, দণ্ডায়মান অবস্থায় জ্বলেছিল চিতা! তাঁর বাড়িই আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে

বীরেন্দ্রনাথ শাসমল।

কাঁথি, পূর্ব মেদিনীপুর, সৈকত শী: অবিভক্ত মেদিনীপুর স্বাধীনতা সংগ্রামে বারবার গর্জে উঠেছে প্রথম থেকেই। ইংরেজদের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করেই তাদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন বহু মানুষ। আর সাধারণ মানুষকে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁরা কখনওই ব্রিটিশ শক্তির ভয়কে তোয়াক্কা করেনি। সেরকমই একজন হলেন বীরেন্দ্রনাথ শাসমল। তিনি মৃত্যুর পরেও ব্রিটিশের কাছে মাথা নত করেননি। দণ্ডায়মান অবস্থায় জ্বালানো হয়েছিল তাঁর চিতা। কিন্তু বর্তমানে তাঁর জন্ম ভিটে বাড়ি অবহেলায় পড়ে রয়েছে। যে বাড়ির আঙিনা একসময় ভরপুর ছিল স্বাধীনতার স্লোগান, আজ সেখানে নীরবতা আর ধ্বংসস্তূপের শীতল হাওয়া বইছে।

১৮৮১ সালের ২৪ অক্টোবর জন্ম নেওয়া বীরেন্দ্রনাথ শাসমল ছিলেন কাঁথির গর্ব, বাংলার এক অকুতোভয় স্বাধীনতা সংগ্রামী। আইনজীবী হয়েও তিনি ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাখ্যান করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন অসহযোগ আন্দোলনে। মহাত্মা গান্ধির আহ্বানে সাড়া দিয়ে কাঁথি-তমলুক অঞ্চলে স্বদেশী প্রচার, বিদেশি পণ্যের বর্জন, কৃষক ও শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর নামেই আজকের এই দেশপ্রাণ ব্লক, কিন্তু দুঃখজনকভাবে তাঁর নিজের বাড়িই এখন প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে সময়ের নিয়মে।

আরও পড়ুন : নাটকের ফাঁদে পা দিয়ে ভুল করেছিল ব্রিটিশরা! ৮৮’র বৃদ্ধের স্মৃতিচারণে শিউরে উঠবে গা

স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় এই বাড়িই ছিল গোপন বৈঠক, আন্দোলনের পরিকল্পনা ও স্বদেশী প্রচারের অন্যতম কেন্দ্র। কিন্তু বর্তমানে সরকারি বা বেসরকারি কোনও পক্ষ থেকে সংরক্ষণের উদ্যোগ চোখে পড়ে না। একজন অধ্যাপক ও গবেষকের বক্তব্য, “এই বাড়ি আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি কেবল ইট-পাথরের নির্মাণ নয়, এটি আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসের জীবন্ত দলিল। দেশপ্রাণ শাসমল যে ত্যাগ ও সংগ্রাম করেছেন, তার সাক্ষী এই বাড়ি। আজ এটি ভগ্নাবশেষে পরিণত হয়েছে।

আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন

১৫ আগস্ট যখন ভারতবর্ষ স্বাধীনতার ৭৯তম বর্ষ উদযাপন করবে, তখন এই বাড়ির দিকে তাকিয়ে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, স্বাধীনতার জন্য জীবন বিসর্জন দেওয়া বীরদের স্মৃতি কি আমরা কেবল ইতিহাসের পাতাতেই সীমাবদ্ধ রাখব, নাকি তাদের উত্তরাধিকার রক্ষায়ও সক্রিয় হব! দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের বাড়ি শুধু একটি স্থাপনা নয়, আমাদের আত্মপরিচয়ের প্রতীক। বাড়িটির সংরক্ষণ হবে প্রকৃত দেশপ্রেমের অন্যতম প্রকাশ।

Scroll to Top