আজ সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি (জানুয়ারি – জুন ২০২৫) ঘোষণা করছে। যার কেন্দ্রবিন্দু মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা। তবে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে এই মুদ্রানীতি।
বর্তমান প্রভাব (জানুয়ারি – জুন ২০২৫)
১. মুদ্রাস্ফীতি (৭-৮%) নিয়ন্ত্রণে উচ্চনীতি হার (১০%)
•উচ্চ নীতি হার অর্থ সরবরাহ সংকুচিত করবে, ফলে অতিরিক্ত ঋণগ্রহণ ও ব্যয় নিরুৎসাহিত হবে, যা মুদ্রাস্ফীতি কমাতে সহায়তা করবে।
![](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2024/02/Channeliadds-Reneta-16-04-2024.gif?fit=300%2C250&ssl=1)
•তবে ব্যবসা ও ভোক্তাদের ঋণের ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় বিনিয়োগ ও ভোগ কমে যেতে পারে, যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমে শ্লথতা আনতে পারে।
২. নিয়ন্ত্রিত ঋণ প্রবৃদ্ধি (১১.৫%)
•সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি (১৭.৫%) বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির (৯.৮%) তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি, যা সরকারি অবকাঠামো প্রকল্পকে সমর্থন করার কৌশল নির্দেশ করে, তবে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ সীমিত রাখা হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমানোর জন্য।
•তবে বেসরকারি খাতে ঋণ সীমিত হলে ব্যবসার সম্প্রসারণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাধা আসতে পারে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৩. ক্রমাগত বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার নীতি (Crawling Peg System)
•এটি আমদানি ব্যয় স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করবে, ফলে আমদানি নির্ভর মুদ্রাস্ফীতি কমবে এবং বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।
•তবে স্থানীয় মুদ্রার মান অতিমূল্যায়িত থাকলে রপ্তানি প্রতিযোগিতা হ্রাস পেতে পারে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করবে।
৪. ব্যাংকিং খাত সংস্কার ও খেলাপি ঋণ (NPL) কমানোর উদ্যোগ
•সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠন ও কঠোর ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আর্থিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করবে।
•তবে স্বল্পমেয়াদে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ থাকায় ঋণ বিতরণে সীমাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে, যা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলতে পারে।
ভবিষ্যৎ প্রভাব (জুন ২০২৫-এর পর)
১. ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস
•যদি নীতিগত পদক্ষেপগুলো অব্যাহত থাকে, তাহলে মুদ্রাস্ফীতি আরও কমবে, যা মূল্য স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে এবং ভোক্তাদের আস্থা বৃদ্ধি করবে।
•তবে বৈশ্বিক পণ্য মূল্য বৃদ্ধির মতো বহিরাগত চ্যালেঞ্জ এই অগ্রগতি শ্লথ করতে পারে।
২. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ঝুঁকি
•জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪-৫% নির্ধারিত হয়েছে, যা মধ্যম পর্যায়ে থাকলেও উচ্চ ঋণের ব্যয় থাকলে প্রবৃদ্ধি আরও কমতে পারে।
•মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাই হবে মূল চ্যালেঞ্জ।
৩. ডিজিটাল রূপান্তর ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি
•২০২৭ সালের মধ্যে ৭৫% লেনদেন ডিজিটাল করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আর্থিক কার্যকারিতা বৃদ্ধি করবে এবং নগদ অর্থ জমিয়ে রাখার প্রবণতা হ্রাস করে মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে।
•তবে গ্রামীণ ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ডিজিটাল লেনদেনে সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
৪. ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা ও জনআস্থা বৃদ্ধি
•সুশাসন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং কঠোর নিয়ন্ত্রক কাঠামো ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা ও দৃঢ়তা বৃদ্ধি করবে।
•চুরি হওয়া সম্পদ ও খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার কার্যকর হলে ঋণ বিতরণের জন্য মূলধন উন্মুক্ত হবে, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
উপসংহার
বর্তমান মুদ্রানীতি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হলেও এটি স্বল্পমেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বেসরকারি খাতের সম্প্রসারণে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। ভবিষ্যৎ সাফল্য বহিরাগত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারের কার্যকারিতা এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক উদ্দীপনার মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রক্ষার ওপর নির্ভর করবে। ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও ব্যাংকিং খাত সংস্কারের ওপর গুরুত্ব প্রদান দীর্ঘমেয়াদে টেকসই প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
(এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)