প্য়ারিস, ০৯ অক্টোবর – দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে স্থায়ী শহীদ মিনারের উদ্বোধন হলো। স্থানীয় সময় রোববার (৮ অক্টোবর) বেলা ১১টায় প্যারিসের প্রখ্যাত সেইন্ট ডেনিস ইউনিভার্সিটির বার্নার্ড মারি স্কয়ারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে নির্মিত এই স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন করা হয়।
শহীদ মিনার যৌথভাবে উদ্বোধন করেন সেইন্ট ডেনিসের মেয়র মাতিউ হ্যানোতা, স্থপতি ফেডেরিক ক্যাফ, অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন আয়েবার মহাসচিব ও শহীদ মিনার বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা কাজী এনায়েত উল্লাহ এবং সিকানো বাঙালি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সরুফ সদিওল।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন আয়েবা প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার ড. জয়নুল আবেদীন ও ডিবিসি টেলিভিশনের সিইও মঞ্জুরুল ইসলাম।
বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ প্যারিসে স্থায়ী শহীদ মিনার তৈরিতে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য অনুষ্ঠানের শুরুতে মেয়র মাতিও ওতির সঙ্গে ফোনে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এ উপলক্ষে তিনি একটি লিখিত বাণীও প্রদান করেন যা ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করে পাঠ করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র মাতিউ হ্যানোতা ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, বাঙালি একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এমন একটা স্মৃতিস্তম্ভ তার এলাকায় করতে পেরে তিনি গৌরবান্বিত বলেও জানান।
মেয়রের অফিসের পক্ষ থেকে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হবে বলেও তিনি জানান।
অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন আয়েবা’র প্রেসিডেন্ট বলেন, এ উদ্যোগ ফ্রান্সের অন্যান্য শহরের জন্য অনুকরণীয় হয়ে উঠবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আয়েবা সেক্রেটারি জেনারেল কাজী এনায়েত উল্লাহ বলেন, প্যারিসে স্থায়ী শহীদ মিনারের উদ্বোধন এক ঐতিহাসিক ঘটনা যা ২১ ফেব্রুয়ারির বিয়োগান্ত ইতিহাস এবং বাঙালি সংস্কৃতিকে ফ্রান্সের মানুষের কাছে এবং বাংলা ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেবে। ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনারটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্যারিসের মাটিতে বাংলাদেশের কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারের নকশা অনুযায়ী এ শহীদ মিনার নির্মাণে সহযোগিতার জন্য তিনি আর্কিটেক্ট ও মেয়রকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এই উদ্যোগ বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাষা, কৃষ্টি সংস্কৃতি মেলে ধরবে, বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে অনন্য উচ্চতায়।
সিকানো বাঙালি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সরুফ সদিওল মেয়র মাতিও ওতি, ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশি যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্যারিস সিটিতে এমন একটি স্থাপত্য নির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফ্রান্স আওয়ামী লীগের প্রধান উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক, ফ্রান্স আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, বিশিষ্ট চিকিৎসাবিজ্ঞানী প্রফেসর উত্তম বড়ুয়া, সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল জমাদার, ইতালি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রব মিন্টু, ফ্রান্স বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামের সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাত্তার আলীর সুমন শাহ আলম, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফ্রান্সের সভাপতি বিশিষ্ট লেখক সালেহ আহমদ চৌধুরী, বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব আশরাফ ইসলাম, একুশে উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক সুব্রত ভট্টাচার্য শুভ, ফ্রান্স আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অপু আলম, সদস্য সচিব এমদাদুল হক স্বপন, ফ্রান্স-বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালবেলা’ র প্রতিনিধি দেবেশ বড়ুয়া, সাংবাদিক ইমরান মাহমুদ, বিসিএফ সভাপতি এম ডি নূর,সাংবাদিক আবদুল মালেক হিমুসহ হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশি।
এক মিনিটের নীরবতা পালন, বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পন ও সাস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান শেষ হয়।
সূত্র: কালবেলা
আইএ/ ০৯ অক্টোবর ২০২৩