২০২১ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা অবদান রেখেছে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান উবার। একই সময় রাইড শেয়ারে ভোক্তাদের কাছ থেকে গত বছর সাত হাজার কোটি টাকা আয় হয়েছে। এছাড়া বছরে আনুমানিক এক কোটি ৭০ লাখ ঘণ্টা সময় সাশ্রয় হয়েছে উবার যাত্রীদের।
রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশে ইকোনমিক ইমপ্যাক্ট রিপোর্ট’ প্রকাশ করে উবার। রিপোর্টটি প্রস্তুত করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক নীতি গবেষণা সংস্থা পাবলিক ফার্স্ট। প্রতিবেদনে উবার যাত্রী, চালক ও সমাজের জন্য অন-ডিম্যান্ড অর্থনীতির পরিবর্তনে সাহায্য করেছে, সে বিষয়টিই তুলে ধরা হয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) সিনিয়র সচিব এ এম জিয়াউল আলম, উবারের পাবলিক পলিসি অ্যান্ড গভর্নমেন্ট রিলেশন্সের সিনিয়র ডিরেক্টর মাইক অরগিল, উবার ইন্ডিয়া দক্ষিণ এশিয়ার রিজিওনাল অপারেশন ডিরেক্টর শৈলেন্দ্রন শিবা, পার্টনার জনাথন ডুপন্ট, পাবলিক ফার্স্টসহ কোম্পানিটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আনুমানিক ৪,৫০০ কোটি টাকা অবদান রেখেছে উবার। রাইড শেয়ারে ভোক্তাদের কাছ থেকে গত বছর সাত হাজার কোটি টাকা আয় হয়েছে, যা দেশের জিডিপির ০.২৫ শতাংশ।
রিপোর্টে জানানো হয়, ৯০ শতাংশ যাত্রী বলেন, যাতায়াতকালীন স্বস্তি তাদের উবার ব্যবহার করার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। আনুমানিকভাবে, বছরে উবার যাত্রীদের ১ কোটি ৭০ লক্ষ ঘণ্টা সাশ্রয় করে।
৭৩ শতাংশ চালক বলেন, ২০২১ সালে তারা উবার নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন। এর মাধ্যমে গত বছর তারা অতিরিক্ত ৫২.২ কোটি টাকা আয় করেছেন, যা তাদের সম্ভাব্য পরবর্তী সেরা বিকল্প আয় বা কাজের উৎসের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি।
৯০ শতাংশ নারী যাত্রী জানান, তাদের উবার বেছে নেওয়ার পেছনে নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এবং ৭২ শতাংশ নারী যাত্রী একমত যে, রাতে দেরি করে বাড়ি পৌঁছানো এখন আগের তুলনায় সহজ।
ব্যক্তিগত গাড়ি নেই এমন ৮৪ শতাংশ যাত্রী বলেন, উবারের মতো রাইডশেয়ারিং সার্ভিসের সহজলভ্যতার কারণে তারা নিজেদের গাড়ি না কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, “বাংলাদেশ উন্নয়নের অভিযাত্রায় দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে এবং ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের জোয়ারে এই গতি ত্বরান্বিত হচ্ছে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পুরণ করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে ২০৪১ সালের মধ্যে জাতীর পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকেও এগিয়ে যাচ্ছি। আশা করি, সেই লক্ষ্য অর্জনে উবারের মত আরোও ব্র্যান্ড আামদের উন্নয়নের অংশিদার হবে। আমাদের অর্থনীতিতে উবারের ইতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে জানতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে উবারের প্রবৃদ্ধি ও আরো কার্যকর অবদানের প্রত্যাশা করছি।”
উবারের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের পাবলিক পলিসি ও গভর্নমেন্ট রিলেশনস বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর মাইক অরগিল এই রিপোর্ট সম্পর্কে বলেন, “২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সুযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে উবার। কিন্তু আমাদের অবদানের ব্যাপ্তি সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা ছিল না। এই গবেষণার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো চালক, যাত্রী ও অর্থনীতির ওপর অবদানের সার্বিক প্রভাব আমরা দেখতে পাচ্ছি। এটি নিজের কাজের সময়ের ওপর নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব তুলে ধরে। পাশাপাশি, এর মাধ্যমে আরও তুলে ধরা হয়েছে, যাতায়াতের উন্নত ব্যবস্থা কীভাবে মানুষকে নিরাপদে চলাচলের সুযোগ করে দেয় এবং অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে আমাদের সমাজের জন্য কাজ চালিয়ে যাওয়া এবং একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার জন্য আমাদের প্রযুক্তি ও দক্ষতাকে কাজে লাগানোর প্রতিজ্ঞা আরও দৃঢ় হয়।”