জন্ম থেকেই শিশুর হার্ট সম্পূর্ণ ব্লক? চিন্তা নেই, দিশা দেখালেন চিকিৎসকরা

জন্ম থেকেই শিশুর হার্ট সম্পূর্ণ ব্লক? চিন্তা নেই, দিশা দেখালেন চিকিৎসকরা
জন্ম থেকেই শিশুর হার্ট সম্পূর্ণ ব্লক? চিন্তা নেই, দিশা দেখালেন চিকিৎসকরা

কলকাতা: হার্টের সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। অল্প বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। আবার জন্মগত হার্টের সমস্যাও দেখা যাচ্ছে। এ থেকে মুক্তির উপায় কী? ২৯ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার বিশ্ব হার্ট দিবসে এই বিষয়ে আলোকপাত করলেন কলকাতার বিএম বিড়লা হার্ট রিসার্চ সেন্টারের সিটিভিএস বিভাগের পরিচালক চিকিৎসক ডা. মনোজ কুমার দাগা। এদিন বিড়লা হার্ট রিসার্চের তরফে সামগ্রিক সুস্থতার ক্ষেত্রে করণীয় বিষয়গুলি নিয়ে একটি গাইড বুকও প্রকাশ করা হয়। এই বইতে প্রতিদিনের খাওয়াদাওয়া তো বটেই, পুষ্টি থেকে ফিটনেস পর্যন্ত সমস্ত বিষয়ের একটি রোডম্যাপ ছকে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে নিজের যত্নআত্তি, ব্যায়াম এবং হার্টের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির বিস্তারিত ব্যাখ্যা।

শিশুদের জন্মগত হার্টের ত্রুটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে ডা. মনোজ কুমার দাগা বলেন, ‘‘শিশুদের মধ্যে সম্পূর্ণ হার্ট ব্লক খুব বিরল। এটা জানার আগে সুস্থ হার্টের মৌলিক বিষয়গুলি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। হার্টের পেশিতে প্রাথমিক জেনরেটর-সহ বৈদ্যুতিক সার্কিটের মতো জিনিস রয়েছে, একে এসএ নোড বলা হয়। আরেকটা রয়েছে সেকেন্ডারি জেনারেটর, একে এভি নোড নামে ডাকা হয়। সাধারণ পরিস্থিতিতে এসএ নোডে তরঙ্গ তৈরি হয় এবং তা এভি নোড হয়ে গোটা হৃদয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এর উদ্দেশ্য হল হৃদপিণ্ডকে সঙ্কুচিত এবং প্রসারিত করা, যাতে হার্ট রক্ত পাম্প করতে পারে। সাধারণ শিশুর হৃদপিণ্ড প্রতি মিনিটে ১০০ বিট হারে স্পন্দিত হয়, অর্থাৎ সংকোচন প্রসারণ ঘটে, সারা শরীরে রক্তের প্রবাহ বজায় থাকে ৷’’

আরও পড়ুন– এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মীদের নয়া ইউনিফর্ম ডিজাইন করছেন মণীশ মালহোত্রা, বছর শেষেই আসছে নয়া লুক

শিশুদের সম্পূর্ণ হার্ট ব্লক অত্যন্ত বিরল ব্যাধি। জন্মের পর পরই হতে পারে। এর পিছনে আলাদা কোনও কারণ নেই। তবে এলএসই-তে আক্রান্ত মায়েদের ক্ষেত্রে এ জিনিস দেখা যায়। এটাও বিরল। জয়েন্টে অস্বস্তি, ফুসকুড়ি এবং জ্বর হয়। ফলে মাতৃগর্ভে বিকাশ এবং বৃদ্ধির সময় শিশুর শরীরে এই ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। কার্ডিয়াক সার্জারি চলাকালীন ‘কনডাকশন সিস্টেম’ কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই ধরনের জটিলতা দেখা যায়। যাই হোক, শিশুর হৃদস্পন্দন খুব ধীরে হচ্ছে মনে হলে ১২ লিড ইসিজি নামের একটি পরীক্ষা করেন চিকিৎসকরা। এ থেকে হার্টের কোনও ত্রুটি আছে কি না বোঝা যায়। হার্ট ব্লক অন্যান্য জটিল জন্মগত হৃদরোগের অংশ হতে পারে। সবচেয়ে সাধারণ সমস্যাটিকে বলে ‘কারেক্টেড ট্রান্সপোজিশন’। জন্মগত জটিল হৃদরোগের কোনও সম্ভাবনা রয়েছে কি না জানার জন্য ইকোকার্ডিওগ্রাফির প্রয়োজন হয়।

আরও পড়ুন– ডেঙ্গির মহৌষধী এই ফল, চাহিদা তুঙ্গে ! বিকল্প চাষে দারুণ লাভ পাচ্ছেন উত্তরাখণ্ডের মহিলা

ডা. মনোজ কুমার দাগার কথায়, ‘শিশুর হার্টবিট অত্যন্ত ধীর হলে হার্ট ব্লকের সম্ভাবনা থাকে। তবে প্রাথমিকভাবে অন্য কোনও উপসর্গ নাও থাকতে পারে। এই পরিস্থিতিতে এসএ নোডে উৎপাদিত তরঙ্গ এভি নোড পর্যন্ত পৌঁছয় না। ফলে এসএ নোড বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শিশু এভি নোড নিয়ে বেঁচে থাকে। এই সময় প্রতি মিনিটে ৫০ থেকে ৬০ বিট পর্যন্ত হৃদস্পন্দন হয়’।

এই ধরনের রোগে শিশুদের কীভাবে পরিচালনা করা উচিত, তা নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ধীর হৃদস্পন্দন থাকলেও শিশুদের খুব একটা অসুবিধা হয় না, কারণ তারা সক্রিয় নয় বা ভারি কোনও কাজ করছে না। তাই অন্য কোনও উপসর্গ ছাড়া যদি শিশু ভালভাবে খাওয়াদাওয়া করে এবং বেড়ে ওঠে তাহলে তাদের গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত। ব্ল্যাকআউট, খাওয়ানোর অসুবিধা, ক্লান্ত বা দুর্বল বৃদ্ধি এবং আকস্মিক মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে এমন লক্ষণ রয়েছে কি না দেখতে হবে। এই ধরনের শিশুদের গড় হৃদস্পন্দনের মূল্যায়ন করতে ২৪ ঘণ্টা হোল্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। উপসর্গ থাকলে এবং হৃদস্পন্দন খুব ধীর হলে একমাত্র চিকিৎসা হল পেসমেকার বসানো। এই পেসমেকার উদর প্রাচীরে বসানো হয়, একটা তার হার্টের সঙ্গে যোগ করা থাকে। প্রয়োজন অনুসারে স্পন্দনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই রোগীদের অধিকাংশেরই স্থায়ী পেসমেকারের প্রয়োজন হবে। শিশু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পেসমেকারও বদলে দেওয়া হবে। লাগানো হবে ট্রান্স ভেনাস পেসমেকার, এটা সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের স্বাভাবিক হৃদযন্ত্রের কার্যকলাপ পুনরুদ্ধারে ব্যবহৃত হয়।

ডা. মনোজ কুমার দাগা যোগ করেন, ‘‘পেসমেকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা আছে। কেউ কেউ প্রশ্ন করেন, পেসমেকার নিয়ে কি একটা শিশু স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে? তথ্য বলছে, পেসমেকার শিশুর স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে। আকস্মিক মৃত্যুর ঝুঁকি কমবে। সোজা কথায় শিশুর হার্ট ভাল থাকবে এবং প্রয়োজন অনুসারে বিট করবে। শিশু যখন খেলাধুলো করবে তখনও কোনও অসুবিধা হবে না। বরং পেসমেকার সমস্ত প্রয়োজনীয়তা পূরণ করবে এবং শারীরিক ক্রিয়াকলাপে সাহায্য করবে। তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই, এটা সম্পূর্ণ নিরাপদ। একমাত্র অসুবিধা হল, আট থেকে দশ বছর অন্তর পেসমেকারের ব্যাটারি পাল্টাতে হয়। সেই সময় ছোট অস্ত্রোপচার করতে হবে। সম্পূর্ণ হার্ট ব্লক পরিস্থিতিতে এটাই একমাত্র চিকিৎসা।’’

Published by:Siddhartha Sarkar

First published:

Tags: Heart Disease, Heart Health, Heart Problem

Scroll to Top