সে ছিল আমার প্রথম সত্যিকারের ভালবাসা। আমরা একসঙ্গে সবকিছু করতাম, একসঙ্গে ঘুরতাম। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আমার সম্পর্ক টিকে ছিল। আমার জন্মদিনে একবার সে অন্য কোন উপহারের বদলে একটি ছোটো তলোয়ার উপহার দিল। এটা সে জাপান থেকে নিয়ে এসেছিল। সেখানে ও শিক্ষক হিসেবে কাজ করতো।

তবে সেই তলোয়ারটা ‘কাটানা’ ছিল না। সেটা ছিল ‘হারা কিরি’। যেটা কিনা আত্মহত্যার জন্য ব্যবহার করা হয়। আমার ওই জন্মদিনের কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়। এরপর দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হয় তার স্মৃতি ভুলতে। পারছিলাম না, তাই ওকে ভোলার জন্য এই তলোয়ারটি দিয়ে দিলাম।’
এমনই সব হৃদয় ভাঙার গল্পের উপাদান নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘মিউজিয়াম অব ব্রোকেন রিলেশনশিপ’ বা ‘ভাঙা সম্পর্কের জাদুঘর’।

সম্পর্ক ভাঙা কি শুধুই দুঃখের হয়। বরং বেঁচে যাওয়াও হয়। যেমন কোরিয়ার সিউলের রমনী তার এক জোড়া গ্লোবসের সঙ্গে মিশে থাকা আর গল্প বলেছেন। ”আমার বিয়ের পরপরই আমি বিদেশে চলে যাই। এরপর যখন অপ্রত্যাশিতভাবে আবার কোরিয়ায় ফিরে আসি, শ্বশুর বাড়িতে থাকা শুরু করি। কারণ তখন আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল ছিল না।
প্রথম দিন থেকেই শ্বশুর বাড়িতে আমি ঘরের কাজের জন্য নিয়োজিত হই। আমার শ্বশুর শ্বাশুরির জন্য সকাল, দুপুর এবং রাতের খাবার তৈরী করতে আমাকে পুরো দিনটাই ব্যয় করতে হতো রান্না ঘরে। আমি যদি আমার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে বের হতাম, তখন আমার নিজের কাছে অপরাধী মনে হতো। আমাকে দ্রুত বাসায় ফিরে আসতে হতো।

আমার নিজের জীবন বলে আর কিছু থাকল না। একসময় অনুভব করলাম, আমি শুধু একটা কাজ করার যন্ত্রে রুপান্তরিত হয়েছি। শেষ পর্যন্ত আমরা শ্বশুর বাড়ি থেকে চলে এসেছি। আমি আমার শেষ রাভারের গ্লোবসটি দিলাম জাদুঘরে যেটা আমার ঘরের কাজ করা শ্রমিক হিসেবে শেষ প্রতীক। আমার মনে হচ্ছে আমি অবশেষে নিজেব জীবনকে খুঁজে পেয়েছি।
এই ধরনের প্রায় অর্ধশত গল্প ও গল্পের অনুষঙ্গের দেখা মিলবে থাইল্যান্ডের উত্তরের প্রদেশ চিয়াং মাইয়ের শহরে।
চিয়াং মাই পাহাড়ি জনপদ। শিল্পকলা এবং শিল্পীদের শহর হিসেবে পরিচিত। তাইতো মিউজিয়াম অব ব্রোকেন রিলেশনশিপের একটি আউটলেট হয়েছে এখানে। শহরের কেন্দ্রে ২ তলা একটি ভবনে গড়ে উঠেছে এই জাদুঘর। যার দেয়ালে দেয়ালে যেন হৃদয় ভাঙার গল্প। যা অনেক দর্শনার্থীদের চোখের পানি ঝড়ায়।

মিউজিয়াম অব ব্রোকেন রিলেশনশিপের শুরু ক্রোয়েশিয়াতে। জাগরেব শহরের দুজন শিল্পী চলচ্চিত্র প্রযোজক ওলিঙ্কা ভিস্টিকা, এবং ভাস্কর ড্রেজেন গ্রুবিসিচ জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৩ সালে তাদের চার বছরের প্রেমের সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর, দুজনে তাদের ভালবাসার স্মৃতিযুক্ত ব্যক্তিগত জিনিসপত্র রাখার জন্য একটি জাদুঘর স্থাপনের বিষয়ে রসিকতা করেছিলেন। তিন বছর পর, গ্রুবিসিচ এই ধারণা নিয়ে ভিস্টিকার সাথে যোগাযোগ করেন। তারা তাদের বন্ধুদের তাদের বন্ধুদেরকেও বলেন, তাদের প্রাক্তনের রেখে যাওয়া জিনিস দান করতে। ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো জাগরেবে জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করা হয় এই মিউজিয়াম।
ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তাদের এই মিউজিয়াম এবং বিশ্ব ভ্রমণও করে। জাগরেবের পর দ্বিতীয় শাখা হিসেবে থাইল্যান্ডে গত নভেম্বর থেকে যাত্রা করেছে মিউজিয়াম অব ব্রোকেন রিলেশনশীপ। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ তাদের হৃদয় ভাঙার গল্প এবং বস্তু দান করে এই জাদুঘরে। সেখান থেকে প্রতি বছর বাছাই করে জাদুঘরে গল্প আর বস্তু প্রদর্শণ করা হয়।