গাজা সিটি দখলের ইসরায়েলি পরিকল্পনায় বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া – DesheBideshe

গাজা সিটি দখলের ইসরায়েলি পরিকল্পনায় বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া – DesheBideshe

গাজা সিটি দখলের ইসরায়েলি পরিকল্পনায় বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া – DesheBideshe

জেরুজালেম, ০৮ আগস্ট – ইসরায়েল সরকার কর্তৃক ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা ঘোষণার পর বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়ে অবিলম্বে ইসরায়েলকে এই পরিকল্পনা বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে চীন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাতিসংঘসহ আরও অনেক দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠন।

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎশ শুক্রবার (৮ আগস্ট) জানিয়েছেন, গাজায় ব্যবহৃত হতে পারে এমন কোনো সামরিক সরঞ্জাম আর ইসরায়েলে রপ্তানির অনুমোদন দেবে না তার দেশ। তিনি বলেন, ইসরায়েলের নিরাপত্তার অধিকার আছে, তবে গাজায় আরও কঠোর সামরিক পদক্ষেপ এই লক্ষ্য অর্জনকে আরও কঠিন করে তুলবে।

জার্মান পার্লামেন্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ১৩ মে পর্যন্ত ইসরায়েলকে ৪৮৫ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিনা ভালটোনেন বলেছেন, তিনি গাজায় আসন্ন দুর্ভিক্ষের কারণে ‘অত্যন্ত উদ্বিগ্ন’। ভালটোনেন বলেছেন, আমরা অবিলম্বে গাজা যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের অবিলম্বে মুক্তির আশা করি।

এদিকে, তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, গাজা সিটি দখলের এই সিদ্ধান্ত শান্তি ও স্থিতিশীলতার উপর একটি বড় আঘাত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই এই পদক্ষেপ প্রতিহত করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

ইইউ ও জাতিসংঘের তীব্র প্রতিক্রিয়া

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন এক্সে লিখেছেন, ইসরায়েল সরকারের এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই পুনর্বিবেচনা করা উচিত। তিনি বলেন, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও গাজায় অবাধ মানবিক সাহায্যের প্রবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, ইসরায়েলের সামরিক দখলের এই পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশনার সম্পূর্ণ পরিপন্থি। এটি বন্ধ করতে হবে।

যুক্তরাজ্য, স্কটল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার তীব্র সমালোচনা, নিষেধাজ্ঞার আহ্বান

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্ত ভুল ও অবিলম্বে এটি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। এই পদক্ষেপ সংকট সমাধানে কোনো ভূমিকা রাখবে না, বরং কেবল আরও রক্তপাত ডেকে আনবে।

ইসরায়েলে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত সাইমন ওয়াল্টারস বলেছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এরই মধ্যে যা অর্জন করেছে তা যথেষ্ট। যুদ্ধ চালিয়ে গেলে কেবল আরও মৃত্যু ঘটবে। হামাসকে পরাজিত করতে হলে কূটনীতি ও রাজনীতির মাধ্যমে বিকল্প পথ খুঁজে পেতে হবে।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের একটি সমন্বিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নেন ও বলেন, গাজা যুদ্ধ শেষ হলে সেখানে হামাসহীন একটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শাসনব্যবস্থা চালু করতে হবে।

যুক্তরাজ্যের লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলের নেতা এড ডেভি বলেন, নেতানিয়াহুর প্রকৃত লক্ষ্য হচ্ছে- জাতিগত নির্মূল। ব্রিটিশ সরকারকে এখনই সব অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করতে হবে ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।

স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার জন সুইনি এটিকে ‘সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিনিদের মানবিক বিপর্যয় আরও তীব্র করবে।

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং ইসরায়েলের এই পরিকল্পনাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের আশঙ্কা হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, গাজায় স্থায়ী জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

চীন বললো, ‘গাজা ফিলিস্তিনিদের’

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজা হলো ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেখানে মানবিক সংকট নিরসনের একমাত্র উপায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে অগ্রসর হওয়া।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, যুদ্ধবিরতি গাজা সংঘাতের সম্পূর্ণ সমাধানেরও চাবিকাঠি। কেবল এটিই সংঘাতের উত্তেজনা হ্রাস ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষার পথ প্রশস্ত করতে পারে।

বেইজিং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং যুদ্ধ বন্ধ করতে, উত্তেজনা হ্রাস করতে ও ফিলিস্তিনি সমস্যার ‘ব্যাপক, ন্যায্য ও স্থায়’” সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।

মানবিক সংগঠন ও বিশেষজ্ঞদের সতর্ক বার্তা

যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যাকশনএইড ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে ‘ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছে। তারা বলে, গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন। এতে লাখো মানুষ আরও একবার বাস্তুচ্যুত হবে ও মৃত্যু আরও বাড়বে।

ইসরায়েলের বিরোধী নেতার কড়া সমালোচনা

ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ বলেন, নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্ত একটি বিপর্যয়, যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করবে। এই সিদ্ধান্ত সেনা ও জিম্মিদের মৃত্যু ঘটাবে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ধস নামাবে। এটি আসলে হামাসের কৌশল যে, ইসরায়েলকে একটি অকার্যকর দখলদারিত্বে ফেলে রাখা।

সূত্র: জাগো নিউজ
এনএন/ ০৮ আগস্ট ২০২৫



Scroll to Top