সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরটার একটা বিশেষত্ব বড় বড় বিল্ডিং আর বিস্তীর্ন ফাঁকা জায়গা। দুবাই স্পোর্টস সিটিও তার ব্যতিক্রম নয়। অনেক জায়গা জুড়ে থাকা দুবাই স্পোর্টস সিটিতে আইসিসির সদর দপ্তর সহ আছে আইসিসি অ্যাকাডেমি, লা-লিগা অ্যাকাডেমিও। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম তো আছেই। যেখানে চলছে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই এশিয়া কাপ ২০২২।
কাগজে কলমে ২৫,০০০ দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রবেশ করাটা একটু কষ্টসাধ্যই। ট্যাক্সি থেকে নামার পর মিডিয়ার জন্য নির্ধারিত গেট দিয়ে মিনিট পাঁচেক হাঁটতে হয়। নিরাপত্তারক্ষীদের সন্তুষ্ট করে স্টেডিয়ামের নাগাল পাওয়া যায়।
মিডিয়া ও ব্রডকাস্টদের প্রবেশের গেট এ২। এ১১ থেকে এ২ অব্দি যেতে আরও কিছুটা সময় লেগে যায়, পিঠে ব্যাগ, রোদের তীব্র তেজ- দুইয়ে মিলে অস্বস্তির যাত্রা।
এ২ তে পৌছেই দেখা মিলল আকাশ চোপড়ার। ভারতের সাবেক এই ক্রিকেটার বেশি পরিচিত তার ইউটিউব, টুইটারে ‘আকাশ বানী’ নামে। এশিয়া কাপে ব্রডকাস্টার স্টার স্পোর্টসের অ্যানালিস্ট প্যানেলে আছেন তিনি। হাই হ্যালো শেষে লিফটে উঠে প্রেসবক্সে ভালো সিট ধরার চেষ্টাটা চ্যালেঞ্জিং হল না তেমন।
প্রেস বক্সে তখন বাংলাদেশি কয়েকজন সাংবাদিক ছাড়া আর তেমন কেউ আসেনি। মিডিয়া পার্টনার খালিজ টাইমসের কেউ কেউ সিটে নাম লিখে জায়গা ধরে রেখেছে- এই যা। দেখে শুনে বসে একটু থিতু হয়েছি কেবল, পিচ রিপোর্ট করতে প্রেস বক্স ধরে হেটে যাচ্ছেন ওয়াসিম আকরাম।
১৯৯২ এর বিশ্বকাপজয়ী পাকিস্তান দলের সদস্যকে দেখে বোঝার উপায় নেই কাগজে কলমে বয়স ৫৬। কালো শার্টের সঙ্গে কালো রোদচশমা পরে হাঁটতে থাকা দীর্ঘকায় ওয়াসিমকে চাইলেই কোন সিনেমার নায়ক বানিয়ে দেওয়া যায়।
টসে হেরে বাংলাদেশ আগে ব্যাট করল। সাব্বির রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজের উদ্বোধনী জুটি ততক্ষণে ভেঙেছে। প্রেসবক্সের পাশেই বুফে, যা মিডিয়া ও ব্রডকাস্টারদের জন্য বরাদ্দ। খাবার নিতে যেয়ে আবার দেখা আকাশ চোপড়ার সঙ্গে। এবার আর হাই-হ্যালো নয়, জিজ্ঞাসা করলাম কেমন দেখছেন এশিয়া কাপ?
খাবার কোনটা নিবেন এই চিন্তায় থাকা আকাশ হিন্দিতেই বললেন, ‘বাড়িয়া (বেশ)’। বাংলাদেশের খেলা সম্পর্কে জানতেই সিআইডির জনপ্রিয় চরিত্র এসিপি প্রদিউমানের ডায়লগ দিলেন, ‘কুছ তো গড়বড় হ্যায় (কিছু একটা তো ঠিক নেই)’।
তো সেই কিছু একটার প্রমাণ মেলে বৃহস্পতিবারেও। ১৮৩ রান তুলে ফেলা বাংলাদেশ ফিল্ডিং ও বোলারদের অতিরিক্ত রান দেবার দিনে হারই হয় সঙ্গী। এটা ঠিক হয়, তো ওটা ঠিক হয় না- এভাবেই চলছে যেনো বাংলাদেশের ক্রিকেট।
দ্বিতীয় দফায় ক্যাপাচিনো নিতে যেয়ে দেখা জাতিন সাপ্রুর সঙ্গে। স্টার স্পোর্টসের জনপ্রিয় এই উপস্থাপক স্মিত হাসি হেসে জিজ্ঞাসা করলেন বাংলাদেশি মিডিয়া কিনা। এরপর আশার বাণী- ‘আজ দিন আচ্ছা যা রাহা হেইন, দিস টিম ইজ এ বিট কনফিউজিং বাট উইল ডু ওয়েল (আজ দিন ভালো যাচ্ছে, এই দলটা কিছুটা বিভ্রান্তিকর, তবে ভালো করবে)’।
তো বিভ্রান্তি বাংলাদেশ ছড়াচ্ছে ভালোভাবেই, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে। তবে দল ভালো করেছে কিনা তা ম্যাচ শেষে জাতিন সাপ্রুর কাছে জানা হয়নি।
বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান অবশ্য বলছেন সাম্প্রতিক অতীতের পারফরম্যান্স আমলে নিলে বাংলাদেশ দল উন্নতিই করেছে।
‘এই ম্যাচ থেকে বেশ কিছু পজিটিভস নেবার আছে। আমাদের এখন সামনের দিকে তাকানো উচিত। আমরা আস্তে আস্তে এগোচ্ছি। যেভাবে আমরা শেষ ৬-১২ মাস খেলেছি, তার চেয়ে এটা উন্নতির। তবে এটা এই টুর্নামেন্টের জন্য যথেষ্ট ছিল না। আমাদের ভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে আসতে হবে, যাতে আমরা অস্ট্রেলিয়ায় (টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ) ভালো করতে পারি।’
পরিকল্পনায় কি ভিন্নতা আসবে, বাংলাদেশ বিশ্বকাপের মঞ্চে কেমন করবে তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত আকাশ চোপড়ার বলা ‘কুছ তো গড়বর হ্যায়’ কথাটাই বাংলাদেশ দলের সঙ্গে যাচ্ছে বেশি।
সমস্যা আছে, সেই সমস্যা নির্ণয় করে সমাধানের জন্য বিশ্বকাপের আগে বেশি সময় পাচ্ছে না সাকিব আল হাসানের দল। এর আগে যে কেবল একটা ত্রিদেশীয় সিরিজ, নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ স্বাগতিক ও পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলবে ৪ টি ম্যাচ।