আমতলী কামিল মাদরাসায় অধ্যক্ষের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা, দ্রুত অপসারণ দাবি

আমতলী কামিল মাদরাসায় অধ্যক্ষের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা, দ্রুত অপসারণ দাবি

বাগেরহাট প্রতিনিধি : ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত আমতলী ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষের নজীরবিহীন অনিয়ম, দুনীতি আর স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রতিষ্ঠানটি চরম অস্তিত্বের সংকটে পড়ছে।

সুন্দরবন অধ্যুষিত দক্ষিণ বাংলার বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলায় আমতলী মরহুম পীর সাহেব আল্লামা আব্দুল লতীফ (রাহি.) ১৯২৩ সালে মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

আমতলী কামিল মাদরাসায় অধ্যক্ষের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা, দ্রুত অপসারণ দাবিআমতলী কামিল মাদরাসায় অধ্যক্ষের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা, দ্রুত অপসারণ দাবিসরজমিন অনুসন্ধানে মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মুহা: বায়েজিদ হোসেনের বিরুদ্ধে অর্থ তছরূপ, চাঁদাবাজি ও ঘুষ বাণিজ্যের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাত্র ও শিক্ষকদের গ্রুপিং, পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে শিক্ষক, স্টাফদেরকে দমন-পীড়নসহ নানান অভিযোগেরও তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, ২০২১ সালে করোনাকালীন সময়ে আমতলী ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পছন্দের প্রতিনিধি নিয়ে নিয়োগ বোর্ড ম্যানেজ করে অধ্যক্ষ নিয়োগের পথ সুগম করেন।

অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পেয়েই তিনি মাদরাসার নামে সঞ্চিত সকল ব্যাংক একাউন্ট থেকে অর্থ উত্তোলন করে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। একটি নিরপেক্ষ এবং বস্তুনিষ্ট অডিট হলে তার আর্থিক লেন-দেনের অস্বচ্ছতা প্রকাশ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

নিয়োগের কিছুসময় পরেই তিনি মাদরাসার জন্য সরকারী বরাদ্দকৃত অর্থ এবং জমি থেকে আয়ের টাকায় নিজের জন্য কোয়ার্টার নির্মাণ করেন। নির্মাণ ব্যয়ে আর্থিক অস্বচ্ছতার অনেকগুলো অভিযোগ করেছে। মাদরাসা গভর্নিং বডির নির্দেশনা অনুসারে কোয়ার্টার নির্মাণের পরে অধ্যক্ষের নিয়মিত মাদরাসায় অবস্থান করার কথা থাকলেও তিনি সপ্তাহের ২/৩ দিন নড়াইলে নিজের বাড়িতে অবস্থান করেন। ফলে মাদরাসা অধিকাংশ সময় অভিভাবকশুণ্য হয়ে থাকে।

মুহা: বায়েজিদ হোসেন অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরে আমতলী মাদরাসার শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী লিল্লাহ বোর্ডিং আানুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেন। বর্তমানে আমতলী মাদরাসায় অসহায়, দরিদ্র শিক্ষার্থীর ফ্রি খাবারের কোন ব্যবস্থা নেই। উপরন্তু অধ্যক্ষ, তার স্ত্রী, তার কন্যা এবং তার শ্যালিকার পুত্র নিয়মিতভাবে লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের জন্য বরাদ্দের খাবার খাচ্ছেন। সরকারীভাবে বেতনের সঙ্গে বাসা ভাড়া পেলেও তিনি মাদরাসার অর্থে অধ্যক্ষের জন্য নির্মিত ভিলার কোন ভাড়া পরিশোধ করেন না। বিদ্যুৎ বিল, এমনকি ইন্টারনেট বিলও তিনি পরিশোধ করেন না। তার কন্যা চলতি বছর অন্য মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা অংশগ্রহন করলেও নিয়মিত আমতলী মাদরাসায় ক্লাস করেছেন এবং নানান সুবিধা গ্রহন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অধ্যক্ষ মুহা: বায়েজিদ হোসেনের বিরুদ্ধে মাদরাসার শতবর্ষ অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য মাদরাসার ফান্ড থেকে টাকা তছরুপের অভিযোগ এসেছে। মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশন এবং সভাপতির অনুমোদন ছাড়াহ অধ্যক্ষের নিজস্ব পকেট কমিটির মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক শরণখোলা শাখায় একটি ব্যাংক একাউন্ট খোলেন। একাউনট নাম: শতবর্ষ উদযাপন কমিটি। একাউন্ট নাম্বার: ২০৫০৩৭৪০২০১৬৯৮৯১৬ । উক্ত ব্যাংক একাউন্ট ব্যবহার করে বিভিন্নজনের কাছ থেকে মাদরাসার শতবর্ষ উৎসব পালনের জন্য চাঁদা আদায় করেন।

অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেয়েই সন্ন্যাসী বাজার শাখা অগ্রণী ব্যাংকে আমতলী মাদরাসার একটি ব্যাংক একাউন্ট (হিসাব নং ২২০০) থেকে গভর্ণিং বডির অনুমোদন ছাড়াই লেন-দেন করেন। বিধি অনুসারে অধ্যক্ষ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির স্বাক্ষরে প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্ট থেকে অর্থ উত্তোলন করতে পারেন। কিন্তু সুচতুর অধ্যক্ষ মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা বোরহান উদ্দীনকে নিয়ে উক্ত ব্যাংক থেকে যখন তখন টাকা তুলে খরচ করছেন। এ ব্যাপারটি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও এডিসি জেনারেল অবগত হয়ে অভিযোগ আমলে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু বেপরোয়া অধ্যক্ষ উক্ত ব্যাংক একাউন্ট থেকে অর্থ উত্তোলন করে নিজের মর্জি মতো খরচ করে চলছেন।

মাদরাসার মুহাদ্দিস নিয়োগের জন্য একজন প্রার্থীর কাছ থেকে নিয়োগ বোর্ডের খরচের নামে অধ্যক্ষ বায়েজিদ হোসেন আদায় করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ নিয়োগবোর্ডের অর্থ ভিন্ন খাত থেকে এসেছে।

মাওলানা মুহা: বায়েজিদ হোসেনের বিরুদ্ধে নড়াইলসহ দেশের বিভিন্ন থানায় সন্ত্রাসী, নাশকতাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে পুলিশের সঙ্গে মারামারিসহ রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের দায়ে অনেকবার জেল খেটেছেন বলে নড়াইলের স্থানীয় মানুষেরা জানিয়েছেন।

নড়াইলে ওলামা লীগের সক্রিয় নেতা মুহা: বায়েজিদ হোসেন বিগত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সময়ে স্থানীয় এমপি এডভোকেট আমিরুল আলম মিলনের ডান হাত হিসেবে চলতেন। মিলনের পরে তিনি এএইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগের নির্বাচনেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি নড়াইলের বিনাভোটের এমপি মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং তার পিতা গোলাম মর্তুজার লোক হিসেবে সব জায়গায় পরিচয় দিয়ে সুবিধা আদায় করে নিতেন। মাশরাফির বাবাকে দিয়ে বিভিন্ন যায়গায় ফোন দিয়ে তদ্বিরও করতেন।

তিনি মাদরাসা ক্যাম্পাসে সরকার দলীয় লোক ছাড়া কাউকে সহ্য করতেন না। আমতলী মাদরাসায় বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করে দেন। উপরন্তু আমতলী মাদরাসাকে আওয়ামীকরণের অংশ হিসেবে বিগত গভর্নিং বডিতে মাদরাসা পাশ্ববর্তী দুই আওয়ামীলীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দীন খান জাকির এবং মাস্টার সাঈদুর রহমানকে বিদ্যুৎসাহী সদস্য হিসেবে সম্পৃক্ত করেন। ঐতিহ্যময় আমতলী মাদরাসায় এমন আওয়ামীকরণ এর আগে কখনও হয়নি।

পুরো মাদরাসাকে কুক্ষীগত করার জন্য তিনি মাদরাসার হিফজখানা, লিল্লাহ বোডিং, ইয়াতীমখানাসহ মাদরাসা ক্যাম্পাসে অবিস্থত বেসরকারিভাবে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ গ্রহন করেন। কোথাও নিজের পছ্ন্দমতো লোকদের বসান। এসব প্রতিষ্ঠানকে তিনি শতভাগ ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করেন।

শতবছর ধরে চলে আসা আমতলী লিল্লাহ বোর্ডিং বন্ধ করে দেন। কিন্ত লিল্লাহ বোডিং এর জন্য বাজারের দোকান ভাড়া, ছ’মিল, চাষযোগ্য বিলান জমির ফসল এবং মানুষের দান-খয়রাত ও যাকাতের টাকার আয়-ব্যায়ের কোন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের লক্ষ লক্ষ টাকা কোথায় যায় অধ্যক্ষ এবং তার পোষ্য লোকজন ছাড়া আর কেউ জানে না।

সম্পতি আমতলী তাহফিজুল কুরআন মাদরাসা তথা হিফজখানার নজিরবিহীন স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম নিয়ে অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজন সোচ্চার হলে প্রতিষ্ঠাতার নামে গঠিত আল্লামা আব্দুল লতীফ (রাহি.) ট্রাস্টের উদ্যোগে একটি সাধারণ সভা আয়োজন করা হয়।

উক্ত সাধারণ সভায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে হিফজখানার জন্য একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। নবনির্বাচিত কমিটি গত ২৮ এপ্রিল সকালে হিফজখানা পরিদর্শনে গেলে অধ্যক্ষ পুরো ভবনটিতে তালা লাগিয়ে দেয়। এ সময় উক্ত প্রতিষ্ঠানে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী পাঠ গ্রহণ করছিল।

স্থানীয় জনতার চাপের মুখে অধ্যক্ষ মুহা বায়েজিদ হোসেন তালা খুলে দিলেও আগে থেকে ওঁত পেতে থাকা তার গুন্ডা বাহিনী মাদরাসা প্রতিষ্ঠাতার পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয়দের উপর হামলা চালায়। ঘটনার এক পর্যায়ে আলীয়া শাখার তৃতীয় পিরিয়ড চলাকালে অধ্যক্ষের নির্দেশে ডাবল ঘন্টা পিটিয়ে নিরীহ ছাত্রদেরকে মাঠে জড়ো করা হয়।

অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠ মাদরাসার শিক্ষক মো: জাকারিয়া হোসাইন, মো: রিয়াজ, সেলিম মোড়ল ক্লাসরুম থেকে ছাত্রদেরকে এনে নানান ধরণের উস্কানী দিতে থাকে। এতে যুক্ত হয় অধ্যক্ষের লাঠিয়াল বাহিনীর অন্যতম হোতা ফাজিল শ্রেণীর ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান দোহা, দাখির পরীক্ষার্থী মো: জাকারিয়া হোসাইন, অধ্যক্ষের শালিকাপুত্র দশম শ্রেণীর ছাত্র মো: গালিবসহ কয়েকজন।

তারা উত্তেজক স্লোগান দিয়ে মাদরাসা প্রতিষ্ঠাতার পরিবারের সদস্যদের ওপর মব লিংঞ্চিং তথা উচ্ছৃঙ্খল ছাত্ররা যেন হামলা করে তার জন্য উস্কানী দিতে থাকে। অধ্যক্ষের নির্দেশে ছাত্ররা হিফজখানা ভবনে হামলার জন্য ধাওয়া করলে এসময় কিছু বিবেকবান শিক্ষক, স্থানীয় জনগন এবং পুলিশের হস্তক্ষেপের কারণে বড় ধরণের সহিংসতা এবং রক্তপাত এড়ানো সম্ভব হয়।

এ ঘটনায় মাদরাসার শুভাকাঙ্খী ও স্থানীয়রা হতবাক হয়ে পড়ে। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মাদরাসার অধ্যক্ষের বেপরোয়া দুর্নীতি ও অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্তের জন্য অবিলম্বে মুহা: বায়েজিদ হোসেনের অপসারণ চায়।

অধ্যক্ষ মাওলানা মুহা: বায়েজিদ হোসেন বলেন, ‘সঠিক নিয়মের মাধ্যমে আমি মাদরাসা পরিচালনা করছি।’

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও ঘুষের বিষয়ে তিনি বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া মেনেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ব্যাংক একাউন্ট ১৯৯৬ সাল থেকে যেভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল সেভাবে চালানো হচ্ছে।

নৌবাহিনীর এ-২০২৫ ব্যাচের নবীন নাবিকদের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত

Scroll to Top